'রহস্যঘেরা' ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে পাঁচ প্রশ্ন
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাকে একটু ঝুঁকি নিয়ে এই বিশ্বকাপের ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ বলে ফেলা যায়। তাদের সামর্থ্য কী, নিজেদের দিনে তারা কী করতে পারে সেটা সবাই জানে। কিন্তু কিছু করতে পারবে কি না সেটাই প্রশ্ন। আর না করতে পারলেও তাতে আসলে খুব একটা ওবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফরম্যাটটা যদি টি-টোয়েন্টি হতো তাহলে কথা ছিল। ওয়ানডেতে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খুঁজে পাওয়া দায়। সেই প্রথম দুই বিশ্বকাপ জয়ের পর আর কোনো বিশ্বকাপ জেতা দূরে থাক, উঠতে পারেনি ফাইনালেই। এবারও শেষ চারে যেতে পারলে সেটা কিছুটা হলেও অঘটন হবে। পুরোটা বলা যাচ্ছে না, কারণ ওই যে, তাদের শক্তি নিয়ে প্রশ্ন নেই কারও! তবে তার আগে তাদের কিছু প্রশ্ন থাকবে নিজেদের কাছেও।
দলের রসায়ন আসলে কতটা?
নামগুলো একটা একটা করে পড়ে নিন- ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, এভিন লুইস, শিমরন হেটমেয়ার, নিকোলাস পুরান... ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে এঁরা কমবেশি সবাই হটকেক। কিন্তু দেশের হয়ে এই পাঁচজন একসঙ্গে খেলেননি একটি ম্যাচেও। প্রথম চারজন একসঙ্গে একটি ম্যাচই খেলেছেন, গত বছর প্রভিডেন্সের সেই ম্যাচটা বাংলাদেশের কাছে হেরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রাসেল গত চার বছরে খেলেছেন শুধু একটি ওয়ানডে। ক্রিস গেইল তাও গত বিশ্বকাপের পর থেকে ২০টি ওয়ানডে খেলেছেন, কিন্তু নিয়মিত হয়েছেন গত বছর থেকে। লুইস ঠিক ফর্মে নেই, পুরান মাত্র শুরু করেছেন। এঁদের যে কেউই একাই বদলে দিতে পারেন খেলা , কিন্তু ৫০ ওভারের রেকর্ড সে কথা বলে না।
আশা কি হোপই?
গেইলের দিকেই সবচেয়ে বেশি তাকিয়ে থাকবে দল; তবে ওয়ানডেতে রাসেল, লুইসদের চেয়ে আশা হয়ে উঠতে পারেন আরেকজন। শেই হোপের খেলার মধ্যে টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটিং নেই, তবে আছে ম্যাচের পরিস্থিতি পড়তে পারা ও স্ট্রাইক বদল করতে পারার সহজাত অভ্যাস। বিশেষ করে তিন নম্বরের জন্য তাঁর ব্যাটিংটা আদর্শই। সেই প্রমাণ গত ছয়-সাত মাসে নিয়মিতই দিচ্ছেন, গত অক্টোবরের পর থেকেই ওয়ানডেতে পেয়েছেন পাঁচটি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে, সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজেও হয়েছেন সিরিজসেরা। ক্যারিবিয় ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসাও উঠছেন ধীরে ধীরে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ বা কোনো বড় আসরে খেলা হয়নি। চাপটা সামলাতে পারবেন কি না, প্রশ্ন সেটাই।
নির্বিষ স্পিনই কি ভোগাবে?
সুনীল নারাইনের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়ানডের জন্য ফিট হয়ে না ওঠায় বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না। দেবেন্দ্র বিশুকেও নেওয়া হয়নি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে স্পিনের জন্য ভরসা অ্যাশলি নার্সের অফ স্পিন, ফাবিয়ান অ্যালেনের বাঁহাতি স্পিন। সব দলের মধ্যে ক্যারিবিয়দের স্পিনে বিকল্পই সবচেয়ে বেশি কম। নার্স অবশ্য ত্রিদেশীয় সিরিজে খারাপ করেননি, কিন্তু বিশ্বমানের ধারেকাছেও বলা যাবে না। আর অ্যালেনও একদমই অপরীক্ষিত। টুর্নামেন্ট যত গড়াবে, উইকেটে তত বেশি স্পিন ধরতে পারে। ইংল্যান্ডও যেমন শেষ মুহূর্তে একজন বাঁহাতি স্পিনারকে নিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কি এখানে কিছুটা ভুগবে?
গতি আছে, ধারাবাহিকতা কই?
কাগজে কলমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণটা বেশ সমীহ করার মতো। কেমার রোচ, জেসন হোল্ডারদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ওশান টমাসদের গতিও আছে। আর রাসেল, ব্রাথওয়েটরা তো আছেনই। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে রোচ, গ্যাব্রিয়েল, কটরেলদের একদমই বিবর্ণ মনে হয়েছে। গতি দিয়ে ভোগাতে পারেননি বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডকে। টমাসও এখনও বড় কিছু করতে পারেননি। গতি থাকলেও পেসারদের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
‘ইগো’ সামলাতে পারবেন হোল্ডার?
এই ইগোর কারণেই নেওয়া হয়নি পোলার্ডকে। তার ওপর বড় আসরে প্রথম আসরে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে খেলছেন গেইল, রাসেলরা। জ্যাসন হোল্ডার জানেন, মাঠের কৌশলের সঙ্গে মানব ব্যবস্থাপনায়ও দক্ষ হতে হবে তাঁকে। আলাদা আলাদা দেশের এতজনকে উদ্বুদ্ধ করাও সহজ কথা নয়। শুরুতে বেশ খাবি খেলেও হোল্ডার উন্নতি করছেন ধীরে ধীরে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা তো দুর্দান্তই গেছে। কিন্তু ওয়ানডেতে অনেক কিছুই প্রমাণ করার আছে, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ টানা তিন ম্যাচে জয়ই পায়নি। জয়ের আগে তাই ইগোও সামলাতে হবে হোল্ডারকে।
র্যাংকিং- ৮
স্কোয়াড
জ্যাসন হোল্ডার (অধিনায়ক), আন্দ্রে রাসেল, অ্যাশলি নার্স, কার্লোস ব্রাথওয়েট, ক্রিস গেইল, ড্যারেন ব্রাভো, এভিন লুইস, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, কেমার রোচ, নিকোলাস পুরান, ওশ্যান থমাস, শেই হোপ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, শেলডন কটরেল, শিমরন হেটমায়ার
কোচঃ ফ্লয়েড রেইফার
বিশ্বকাপে রেকর্ড
১৯৭৫-চ্যাম্পিয়ন
১৯৭৯-চ্যাম্পিয়ন
১৯৮৩-রানার্সআপ
১৯৮৭-গ্রুপ পর্ব
১৯৯২-গ্রুপ পর্ব
১৯৯৬-সেমিফাইনাল
১৯৯৯-গ্রুপ পর্ব
২০০৩- গ্রুপ পর্ব
২০০৭-সুপার এইট
২০১১-কোয়ার্টার ফাইনাল
২০১৫- কোয়ার্টার ফাইনাল
সূচি
পাকিস্তান, ৩১ মে, ৩.৩০, নটিংহাম
অস্ট্রেলিয়া, ৬ জুন, ৩.৩০, নটিংহাম
দক্ষিণ আফ্রিকা, ১০ জুন, ৩.৩০, সাউদাম্পটন
ইংল্যান্ড, ১৪ জুন, ৩.৩০, সাউদাম্পটন
বাংলাদেশ, ১৭ জুন, ৩.৩০, টন্টন
নিউজিল্যান্ড, ২২ জুন, ৬.৩০, ওল্ড ট্রাফোর্ড*
ভারত, ২৭ জুন, ৩.৩০, ওল্ড ট্রাফোর্ড
শ্রীলংকা, ১ জুলাই, ৩.৩০, ডারহাম
আফগানিস্তান, ৪ জুলাই, ৩.৩০, লিডস
*দিবারাত্রির ম্যাচ