অস্ট্রেলিয়ার ঝুলিতে জয়ের সঙ্গে স্মিথের সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের একগাদা চোট
বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ, সাউদাম্পটন
অস্ট্রেলিয়া ২৯৭/৯, ৫০ ওভার
ইংল্যান্ড ২৮৫ অল-আউট, ৪৯.৩ ওভার
অস্ট্রেলিয়া ১২ রানে জয়ী
কে ব্যাটিং করছেন, কে আসছেন বোলিংয়ে, কেইবা ফিল্ডিং করছেন, ঠিকঠিকানা নেই সেসবের। তবে সেসব বাদ দিলে বাকি সব চলক এ ম্যাচটাতে দিল রোমাঞ্চের সমীকরণই। সাউদাম্পটনের অপেক্ষাকৃত ধীরগতির উইকেটে স্টিভ স্মিথের সেঞ্চুরির পর ডেথ ওভারের কৌশলি ও দক্ষ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে আটকে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হাই-স্কোরিং সব ম্যাচ জিতে আসা ইংল্যান্ডের জন্য অন্যরকমের এক বার্তাই দিল এ ম্যাচ, সঙ্গে তুললো প্রশ্ন- বিশ্বকাপে এমন ধীরগতির উইকেট হলে প্রস্তুত কি তারা?
বার্তা দিল অস্ট্রেলিয়াও। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউডদের ছাড়াই তাদের বোলিং ডিফেন্ড করলো ২৯৮ রান। ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেটের জুটি ইংল্যান্ডকে আশা জোগালেও মার্কাস স্টোইনিসের শেষের দুই ওভারের স্যান্ডউইচের মাঝে কেন রিচার্ডসনের স্লোয়ার-ভরপুর ওভার আটকে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে।
অস্ট্রেলিয়া দলে মূল পেসাররা ছাড়াও খেলেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তিনি করেছেন শুধু ফিল্ডিং। ইংল্যান্ড দলে ছিলেন না অধিনায়ক অইন মরগান, জো রুটরা। তবে চোটের সমস্যা রুটকে শুধু নয়, ফিল্ডিংয়ে নামিয়েছিল ইংল্যান্ডের সহকারি কোচ পল কলিংউডকেও। বোলিংয়ের সময় চোটের কারণে উঠে গেছেন মার্ক উড, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইংল্যান্ড অপেক্ষা করছে তার স্ক্যানের, যদিও সেটা সতর্কতামূলক বলেই জানানো হয়েছে। উডের জায়গায় নামা আর্চার উঠে গিয়েছিলেন ফিল্ডিংয়ের সময়, তার জায়গায় নেমেছিলেন রুট। নেমেছিলেন কলিংউডও। চোট পেয়েছেন লিয়াম ডসন, জ্যাসন রয়রাও।
চোটের ভীড়ে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারকে ইংল্যান্ড ঠিক চেপে ধরতে পারেনি, আবার ঠিক হাত খুলেও খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ানরা। অবশ্য তাতে যে উইকেটের বড় একটা অবদান আছে, দুই ইনিংস শেষে সেটা পরিস্কারই। ডেভিড ওয়ার্নারের ৫৫ বলে ৪৩ রানের পর অ্যারন ফিঞ্চ করেছেন ১৭ বলে ১৪ রান- বিশ্বকাপের মূল পর্বে অস্ট্রেলিয়া এ ওপেনিং জুটিই বহাল রাখে কিনা প্রশ্ন থাকবে সেটা। উসমান খাওয়াজা নেমেছিলেন পাঁচে, সেখানে ৩৮ বলে তিনি করেছেন ৩১ রান। এর আগেই খেলেছেন ওপেনিংয়ে আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী শন মার্শ, ৪৪ বলে তিনি করেছেন ৩০ রান।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের হাইলাইটস স্মিথের ওই ইনিংস। এমনিতে ওয়ার্নার ও তিনি মাঠে নামার সময় শুনেছেন ইংল্যান্ড সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়ো, তবে সেসব ছুঁয়ে যায়নি স্মিথকে। বরং মাঠ ছাড়ার সময় তাকে দিতে হয়েছে করতালিই। এর আগে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে খেলার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটা ম্যাচ খেলেছিলেন, তবে স্মিথ নিজেকে মেলে ধরার বার্তাটা এ ম্যাচে দিলেন ভালভাবেই। আলতো বটম হ্যান্ডের কাভার ড্রাইভ, নিজে জায়গা বানিয়ে বোলারের ওপর আধিপত্য- স্মিথ দেখালেন সবই।
১০২ বলে ৮ চার ও ৩ ছয়ে স্মিথ করেছেন ১১৬ রান, আউট হয়েছেন একেবারে ইনিংসের শেষের আগের বলে গিয়ে। ম্যাক্সওয়েলের অভাবটা টের পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তবে অ্যালেক্স ক্যারির ১৪ বলে ৩০ রানের ক্যামিও আশা জুগিয়েছে তাদের। ইংল্যান্ডের হয়ে বোলিংয়ে ইতিবাচক দিক হতে পারে লিয়াম প্লাঙ্কেটের উইকেট নেওয়া, ৬৯ রানে তিনি শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন ৪ উইকেট। ম্যাচ শেষে বেন স্টোকসের ৮.৫ ওভার বোলিংয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন এ ম্যাচে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার।
ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের শুরুর দিকে ছিল ইতিবাচক ব্যাপারই। জনি বেইরস্টো ১৭ বলে ১২ রান করে ফিরলেও ফিফটি পেয়েছেন শেষ মুহুর্তে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া জেমস ভিনস, ৭৬ বলে তিনি করেছেন ৬৪ রান। এর আগে জ্যাসন রয় করেছেন ৩৭ বলে ৩২ রান। আর মাঝে জস বাটলার এমন উইকেটেও খেলেছেন বিস্ফোরক ইনিংস, ন্যাথান কোল্টার-নাইলের বলে লিডিং-এজে মিডউইকেটে ধরা পড়ার আগে করেছেন ৩১ বলে ৫২ রান।
বাটলারের উইকেটের পরও ম্যাচে টিকে ছিল ইংল্যান্ড, ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেটের জুটিতে। ৪৪ বলে ৪০ রান করে ওকসের রান-আউট হয়ে ফিরেছেন, ইংল্যান্ডকে এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। সাতজন বোলার ব্যবহার করেছে তারা, উইকেট পেয়েছেন সবাই।
এমনিতে আপনি যদি আপনি স্কোরার হন, তবে এমন ম্যাচ আপনাকে দেবে অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা, কঠিন সব কাজও। এ ম্যাচের শেষ দৃশ্যটা ভাবুন শুধু। ম্যাক্সওয়েল থ্রো করছেন, তিনি শুধু ফিল্ডিং-ই করেছেন এ ম্যাচে, এর আগে একটা ক্যাচও নিয়েছিলেন। রান-আউট থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছিলেন আদিল রশিদ ও জফরা আর্চার, দুজনের মূল কাজ ‘বোলিং’ হলেও এদিন সেটা করেননি তারা, অথচ নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে। বিশ্বকাপে অন্তত এমন কিছু হবে না।
তবে এদিন যা হলো, তাতে মানসিক দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকবে বেশ চাঙাই। চোট আর ম্যাচ হারা নিয়ে একটু হলেও হোঁচট খেয়েছে যেখানে ইংল্যান্ড।