যে মুহুর্তে মরগানের মনে হয়েছিল, ফাইনাল শেষ তাদের

এক বছর আগে লর্ডসের নাটকীয় এক ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচটাকে নাটকীয় বললেও আদতে কম বলা হয়ে যায়, সে ম্যাচে মুহুর্তগুলি ছিল এমনই। বারবার দিক পরিবর্তন করেছে সেটি দুই দলের দিকে, মূল ম্যাচে দুই দলের স্কোরই সমান হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তা গিয়েছিল সুপার ওভারে। সুপার ওভারও হয়েছিল টাই, তবে বাউন্ডারিসংখ্যায় এগিয়ে থেকে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মরগানের একটা মুহুর্তে গিয়ে মনে হয়েছিল, ম্যাচ ছুটে গেছে তাদের হাত থেকে, আর কোনও আশা নেই। সে ম্যাচে খেলা বা সে ম্যাচ দেখা প্রতিটি মানুষেরই হয়তো এমন ভিন্ন ভিন্ন আবেগ ও স্মৃতি আছে, মরগানই বা বাদ যাবেন কেন! সে বিশ্বকাপের পর গত মাস চারেক ধরে বদলে গেছে পৃথিবীর অনেককিছু। তবে ঘরবন্দী থেকে নতুন বাবা হওয়া মরগান সুযোগ পেয়েছেন সেই ম্যাচ দেখার। আর প্রতিবারই তাকে জাপটে ধরেছে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর আবেগ।
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ১৫ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। দুই ডট, দুই ছয়, দুটি সিঙ্গেল (এবং রান-আউট)-এ ম্যাচ হয়েছিল টাই। সে ওভারেই মরগানের মনে হয়েছিল, ম্যাচটা হেরেই গেছেন তারা। ওই একবারই নিজেদের জয় নিয়ে সংশয় জেগেছিল তার।
“একটাই মুহুর্ত ছিল এমন। এটাও আমার মনে পড়েছে যখন দ্বিতীয়বার এই ম্যাচটা দেখেছি। জিমি নিশাম বোলিং করছে বেনকে (স্টোকস), স্লোয়ার বল, বেন লং-অনে মারলো, আমার মনে পড়ে বলটা আকাশে উঠেছিল, বলের ট্র্যাজেকটরিটা দেখতে পাচ্ছি। আপনি জানেন কখন আপনি ছয় মেরেছেন। এটা ওপরে উঠলো, কিন্তু আপনি যেভাবে চান সেভাবে নয়। এবং তখনোই ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হয়েছিল, ‘গেল, শেষ হয়ে গেল। বেন আউট। আমাদের এখনও ১৫ রান দরকার।' সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য আমার মনে হয়েছিল, আমরা শেষ। আমাদের দাফন হয়ে গেছে।”
আদতে স্টোকসের শটে যা হয়েছিল, সেটি এই ম্যাচের অন্যতম আইকনিক মুহুর্ত। স্টোকসের শটটা লং-অনে ঠিকঠাক নেওয়ার পর বাঁ পা বাউন্ডারি কুশনের ওপর ফেলেছিলেন বোল্ট, বল হাত থেকে ছুঁড়ে দেওয়ার আগেই। মরগানের মতে ‘ট্র্যাজেকটরি’ ঠিকঠাক মনে না হলেও স্টোকস ঠিকই পেয়েছিলেন ছয়। এরপর গাপটিলের থ্রো ডাবলস নিতে যাওয়া স্টোকসের ব্যাটে লেগে হয়েছিল বাউন্ডারি।
আরও পড়ুন- বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০১৯ : অলৌকিক ম্যাচের সম্ভাব্য লৌকিক সমীকরণ
সে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড গিয়েছিল আগের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে বিদায় নেওয়ার ক্ষত নিয়ে। চার বছর ধরে এ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হয়েছিল তারা, ওয়ানডেকে খেলা শুরু করেছিল নতুন স্টাইলে। সে বিশ্বকাপ নতুন করে ব্রিটিশদের ক্রিকেটে আগ্রহ ফিরিয়েছে, মরগানও এখন পরিচিতি পান আগের চেয়ে বেশি। লোকে এখন তাকে বেশি করে চেনে, সেলফির আবদার করে।
“আমার মনে হয় এই খেলার প্রোফাইলটা বদলে গেছে এরপর। রাস্তায় বা পাবে বা ক্যাফেতে লোকে যেভাবে আমার কাছে আসে, সেটা দেখলেই বুঝা যায়। এটা শুধু দেশে না। ছুটিতে কোথাও গেলে আপনি শুনবেন, টেনিস, বা গ্রাঁ প্রিঁ দেখে তারা কথা বলছে। এটা খেলাধুলারই একটা উদযাপন বলতে পারেন। আর ট্রফি জিতলে অবশ্যই মানুষ এটা পছন্দ করবে। ক্রিকেটের মর্যাদা অবশ্যই বেড়েছে। আমার জীবনও বদলে গেছে এভাবেই। মানুষ এখন আমাকে আগের চেয়ে বেশি চিনতে পারে।”
“আমার মনে হয় এটাই জীবন। আপনি বিশ্বকাপ জেতার জন্য হোক বা ফরোয়ার্ড ডিফেন্স আরও শক্ত করতে যদি পরিশ্রম করেন, তাহলে আপনার অনুভূতিটাই বদলে যাবে। মানুষের প্রকৃতিগত আচরণই এমন। তবে এমন নাটকীয় দিন যে কোনও খেলার জন্যই বিস্ময় বয়ে আনে। ফাইনাল তাই ক্রিকেটের চেয়েও বড় কিছু ছিল, এটা বৃটিশ খেলাধুলার ইতিহাসের অন্যতম হাইলাইটস। এবং এটা আরও অনেকদিন এভাবেই থাকবে।”
গত চার মাস কভিড-১৯ মহামারিতে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবারও ফিরেছে ক্রিকেট, ইংল্যান্ড-উইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে। মরগান অবশ্য আপাতত ব্যস্ত অনুশীলন নিয়ে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের জন্য। বিশ্বকাপের পরও ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ বছরই অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার কথা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তবে সেটি অনিশ্চিত হয়ে আছে বেশ কিছুদিন ধরেই।