রোডস হবেন না তো ডমিঙ্গো?
সেই একইভাবে এসেছিলেন তিনিও। বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিসের জার্সি গায়ে, মুখে এগাল ওগাল হাসি। প্রথম দিনে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, একদম সজ্জন একজন নিপাট ভদ্রলোক তিনি। তবে স্টিভ রোডসের সেই হাসি মুছে যেতে এক বছরও লাগেনি।
রাসেল ডমিঙ্গো এলেন সেই হাসিমুখেই। একটু ব্যতিক্রম ছিল এক জায়গায়, তার সঙ্গে আজ ‘অভিষেক’ হলো নতুন বোলিং কোচ স্বদেশী শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টের। তবে সহকর্মীর চেয়ে ডমিঙ্গোকে প্রথম দিনে অনেক বেশি প্রাণখোলা মনে হয়েছে। উত্তর দেওয়ার সময়ও রোডসের মতো সেই একই রকম হাসি। সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে হালকা রসিকতা, শেষে আবার সাংবাদিকদের সঙ্গে একটু খুনসুটি।
কী অদ্ভুত, দুজনের প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও মিল পাওয়া গেল বেশ খানিকটা। রোডস বেক্সিমকো কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পর্বের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে মিরপুরে করেছিলেন প্রথম সংবাদ সম্মেলন। ডমিঙ্গো বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পাওয়ার পর আজই প্রতহ্ম মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রচারমাধ্যমের। রোডস প্রথম দিনেই বলেছিলেন ‘টাইগার হতে চান তিনি’। ডমিঙ্গো অমন শিরোনামে আসার মতো কিছু বলেননি, তবে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
তবে একটা জায়গায় দুজনের ভাবনা মিলে যাচ্ছে কিছুটা। রোডসের দেশ ইংল্যান্ড ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর হলেও উন্মাদনা বলতে কিছুই নেই সেখানে। বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে আবেগের জায়গা নাড়া দিয়েছিল এই ইংলিশ কোচকে, ‘আমি এটা খুব ভালোভাবে জানি, বাংলাদেশের মানুষ কতটা ক্রিকেটপাগল। এখানে আমার সাথে মিল আছে, কারণ আমি নিজেও ক্রিকেটেই বুঁদ হয়ে থাকি। আমি ইংল্যান্ডে থাকার সময় দেখেছি এখানকার আবেগ।’ ডমিঙ্গোর বিস্ময়ের শুরু কাল বিমানবন্দরে ক্যামেরার বহর দেখে। আজও কানাত্য কানায় পূর্ণ সম্মেলনকক্ষ দেখে বললেন, এরকম কিছু দেখেননি কখনো। রোডসের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট-উন্মাদনা স্পর্শ করেছে তাকেও। নিজের আসার বড় একটা কারণও বললেন সেটি, সমর্থকদের আবেগ তার বাংলাদেশে আসার বড় একটা কারণ।
রোডস প্রথম দিন আরেকটা ব্যাপার বলেননি, তবে খুব শিগগির সেটা করে দেখিয়েছিলেন। জাতীয় দলের খেলার বাইরে ঘরোয়া লিগ থেকে এ টিম, এইচপি লিগে প্রচুর সময় দিয়েছেন, প্রস্তুতি ম্যাচ দেখার জন্য ছুটে গেছেন বিকেএসপি পর্যন্ত। ডমিঙ্গোর বাংলাদেশের কোচ হওয়ার বড় একটা কারণ ছিল তার বিসিবির কর্তাদের সামনে দেওয়া ‘প্রেজেন্টেশন’, যেটির জন্য শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে শিকে ছিড়েছে। সেটা নিয়েও আজ কথা বললেন ডমিঙ্গো, ‘দেখুন, আমি অনেকগুলো পর্যায়ে কাজ করে এসেছি। অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭, ঘরোয়া ক্রিকেট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। কীভাবে পুরো প্রক্রিয়াটা কাজ করে সেটা সম্পর্কে আমি সচেতন। জাতীয় দল দিন শেষে এই প্রক্রিয়ারই ফল। জাতীয় দলের আশেপাশে যেসব খেলোয়াড় আছে তাদের নিয়েও কাজ করতে চাই আমি। আমার প্রেজেন্টেশন জাতীয় দল নিয়েই ছিল কিন্তু জাতীয় দলের আশেপাশে যারা ছিল তারা কীভাবে সফল হতে পারবে সেটাই আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’
রোডস যেরকম প্রচুর সময় দিয়েছিলেন, ডমিঙ্গোর কথা থেকেও সেরকম আভাস পাওয়া গেল। জানালেন, জাতীয় দলের খেলার ফাঁকে শ্রীলংকায় এ দলের সঙ্গেও যাবেন। বিসিবি সভাপতিও বলেছিলেন, ডমিঙ্গোর পারিবারিক তেমন কোনো পিছুটান না থাকায় সময় দিতে পারবেন অনেক।
কিন্তু এক বছর আগে রোডসেরও তো সবকিছু ঠিক ছিল। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের কথা ভেবে আনা হয়েছিল তাকে। মানুষ হিসেবে ভালো হলেও কোচ হিসেবে ‘অযোগ্যতার’ জন্য বিশ্বকাপ শেষেই একরকম পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হয়েছে তাকে। ডমিঙ্গোর সঙ্গে চুক্তিটা দুই বছরের, তবে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাই আপাতত দৃষ্টিসীমায়। আজ এসে নিজের দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে জানিয়েছেন নিজের পরিকল্পনার কথা। আপাতত এসব শুনে দূরদর্শী একজন কোচই মনে হবে। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য যতদিন দরকার ততদিন ডমিঙ্গো টিকবেন তো? নাকি রোডসের মতো তার আগেই বাস্তবতার পাথুরে চত্বরে খালিপায়ে হাঁটতে বাধ্য করা হবে তাকে?