• বাংলাদেশ-আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    ফিল্ডিংয়ে 'গোড়ায় গন্ডগোল' ও কুকের আশা

    ফিল্ডিংয়ে 'গোড়ায় গন্ডগোল' ও কুকের আশা    

    বাংলাদেশের ফিল্ডিং নিয়ে আলোচনাটা নতুন নয়, হতাশাটাও বোর্ড প্রেসিডেন্ট থেকে অধিনায়ক পর্যন্ত সবার মাঝেই প্রকাশ্য হয়ে ওঠে প্রায়ই। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজেও বাংলাদেশের ফিল্ডিং মানসম্পন্ন ছিল না ঠিক। ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক বলছেন, সমস্যাটা বেসিকে-- মানে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে গোড়াতেই আছে গন্ডগোল। এজন্য সিস্টেমের ভেতর ফিল্ডিংয়ে ভাল করার তাড়নাটা ঢুকাতে বলছেন তিনি। 

    গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, ক্যাচিং, থ্রোয়িংয়ের মতো স্কিল থেকে শুরু করে স্লিপের মতো বিশেষ পজিশনে স্পেশালিস্ট কারও না থাকা-- ফিল্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের খুঁতের তালিকাটা দীর্ঘই। আপাতত বেসিকের দিকে নজর দিয়ে সেসব ঠিকঠাকের চেষ্টা করছেন বলে জানাচ্ছেন কুক। 

    “প্রতিদিনই উন্নতির চেষ্টা করছি। বেসিকে কিছু ভুল আছে, সেগুলো যতখানি সম্ভব শোধরানোর চেষ্টা করছি আমরা। বিশ্বকাপে দারুণ কিছু ম্যাচ ছিল আমাদের, আবার কয়েকটা হড়কে গেছে। কিছু ক্যাচ মিস হয়েছে। ছেলেরা এসব জানে, তারা এসব বিষয়ে উন্নতির চেষ্টা করছে’, বলছেন কুক। 

    গোড়া থেকেই এসব সমস্যার দিকে নজর দেওয়া উচিৎ বলে মত তার, “এখন যে যেখানে আছে, সেখান থেকে সবাই উন্নতি করতে পারে। যদি এটা অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ের সমস্যা হয়, তাহলে আপনাকে সেখানেই যেতে হবে (সমাধানের জন্য)। তবে কেউ কেউ ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এসেছে, যেমন এবাদত বয়সভিত্তিক সিস্টেমে ছিল না। মাঝে মাঝে তাই কারও ব্যাপারে জানাটা একটু শক্ত। তবে বয়সভিত্তিক দলগুলির নিচের পর্যায় থেকেই এটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। 

    “এটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। আগাগোড়া ফিল্ডিংকে প্রাধান্য দিতে হবে। ক্রিকেটারদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা এটা চিন্তা করে, ‘বাংলাদেশ শুধু নয়, আমাকে বিশ্বেরই সেরা ফিল্ডার হতে হবে। বয়সভিত্তিক সিস্টেমের সঙ্গে এমন একটা প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে, যাতে তারা এটা করতে সমর্থ হয়। ফাস্ট বোলারদের বাউন্ডারিতে পাঠানোর দিন নেই আর। ফিল্ডিংয়েওর ব্যাপারেও তাদের শিখতে হবে। এসব জায়গায় কাজ করতে হবে আমাদের।” 
     


    কেন উইলিয়ামসনকে রান-আউটের সুযোগ হাতছাড়া মুশফিকের, ২০১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচে/এএফপি


    বিশ্বকাপে বেন স্টোকসের মতো ফিল্ডার না থাকার আফসোস করেছিলেন সাকিব আল হাসান। এবার রায়ান কুক বলছেন, চাইলেই অস্ট্রেলিয়ানদের মতও ফিল্ডার পাবেন না রাতারাতি, “ফিটনেস ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। আমরা আগেই কথা বলেছি এ নিয়ে। কোনো কোনও দলের থ্রোয়িং অনেক উঁচুমানের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে দেখেছি, তারা থ্রোয়িংকে অনেক সিরিয়াসলি নেয়। এমনকি তাদের সিস্টেমে অনূর্ধ্ব-৯ পর্যায়েও তাদের শেখানো হয়। ফলে যেটা হয়, মাঠের যে কোনো পজিশন থেকে দ্রুত থ্রো করতে পারার মতো ফিল্ডার থাকে তাদের। আমরা সে পর্যায়ের নই, সুতরাং আমাদের বেসিক ঠিক করতে হবে।" 

    ফিল্ডিংয়ে আলাদা করে স্নায়ুচাপে ভোগার মতো মুহুর্তও নেই বলে মত তার, “চাপের মুহুর্তগুলির দিকে তাকান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটি মুহুর্তই চাপের মুহুর্ত। আর যখন এমন কোনও মুহুর্ত ঠিকঠাক যায় না, তখনই এসব নিয়ে কথা হয়। তবে আমরা চাপ থাকে এমন অনেক মুহুর্তেও ভাল করি। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, চাপের মুহুর্ত আদতে চাপের মুহুর্ত নয়। একটা ওয়ানডে ম্যাচে এটি ৩০০টি মুহুর্তের সমন্বয়, টেস্টে আরও অনেক বেশি। সে কারণেই ফিল্ডারদের বেসিক জানা জরুরী। আর যখন চাপে পড়বেন, তখন আপনি টেকনিক বা ট্যাকটিকস নিয়ে ভাববেন না, শুধু সেই মুহুর্তে হাজির হবেন।”

    তবে সবকিছুর জন্য সময় চান তিনি, “বেসিক ঠিক করতে লম্বা সময় প্রয়োজন, এটি রাতারাতি হবে না। কিছু কিছু ব্যাপারে কেউ কেউ দারুণ উন্নতি দেখিয়েছে। প্রত্যেককেই উন্নতির পরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

    সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ফিল্ডিংকে এখন মাঝামাঝি মানের বলে রায় কুকের। ফিল্ডিংয়ে দল হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০-এর মধ্যে ৬.৫, ওয়ানডেতে ৭.৫ ও টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ দিতে চান তিনি। তবে ফিল্ডিংয়ে শীর্ষ তিন দলের একটি বাংলাদেশ হবে-- এমন আশা তার, “আমাকে বলতে বললে বলব, বাংলাদেশের ফিল্ডিং মানের দিক দিয়ে মাঝামাঝি পর্যায়ে এখন। বিশ্বকাপে নিরপেক্ষ কন্ডিশনে আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে এটি যাচাই করে। আমাদের মনে হয়েছে, আমরা মাঝামাঝি। আমি শীর্ষ তিন দলের মাঝে আমাদের দেখতে চাই, সেজন্য একটা শুরু আমরা করতেই পারি।”

    তবে সমস্যাটা যখন গোড়ায়, কুকের মতো শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা কেউ সেটি কতোখানি ঠিক করতে পারবেন, তেমন প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।