স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ইরানি নারীর আত্মহত্যা
গত মার্চে তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন ইরানের সাহার খোদায়ারি। ইরানে স্টেডিয়ামে গিয়ে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলও হতে পারতো তার। তার বিরুদ্ধে মামলা চলার সময়ই আদালত প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন খোদায়ারি। সেই আগুনে পুড়েই হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি।
মাঠে গিয়ে অন্য খেলা দেখতে পারলেও ইরানে ফুটবল স্টেডিয়ামে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। যদিও গত বছর ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর আগমন উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতি ম্যাচে নারীদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল স্টেডিয়ামে। ইনফান্তিনো ও ফিফার পক্ষ থেকে ইরানকে বহুবার আহবান জানানো হয়েছে, নারীদের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা যেন তুলে নেওয়া হয়।
ইরান কর্তৃপক্ষ অবশ্য এমনটা করেনি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মার্চে আজাদি স্টেডিয়ামে ইস্তেকাল তেহরান ক্লাবের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন খোদায়ারি। পুরুষের বেশেই স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু এর আগে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্টেডিয়ামে ঢোকার অপরাধে তিনদিন তাকে জেলে কাটাতে হয়।
জামিনে জেল থেকে বের হয়ে এলেও মামলা থেকে মুক্তি পাননি খোদায়ারি। ছয় মাস পর মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে! এই কথা শোনার পর আদালতের সামনেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন খোদায়ারি। হাসপাতালে নেওয়ার পর গত সোমবার তার মৃত্যু হয়েছে, এমনটা জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। খোদায়ারির বোন অবশ্য জানিয়েছেন, খোদায়ারি আগে থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশুনার সময় একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।
এদিকে ইরানের স্টেডিয়ামে নারীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলেন ফিফা। আগামী ১০ অক্টোবর আজাদি স্টেডিয়ামে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে কাতার বিশকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে ইরান। সেই ম্যাচে নারী সমর্থকরা মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
১৯৮১ সাল থেকে ফুটবল মাঠে নারীদের প্রবেশে এমন নিষেধাজ্ঞা। স্টেডিয়ামে খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে খোদায়ারির এমন মৃত্যুতে ক্ষোভ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ফিফাও অফিশিয়াল এক বিবৃতিতে শোক জানিয়েছে খোদায়ারির মৃত্যুতে। খেলা দেখতে আসা ইরানি নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে আহবান জানানো হয়েছে ফিফার পক্ষ থেকে। নারীদের স্টেডিয়ামে ঢোকার ব্যাপারে এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইরানের ফুটবল দলের অধিনায়ক মাসুদ সোজাই।