আফিফ দেড় বছর পর এলেন, দেখলেন, জিম্বাবুয়েকে হারালেন
জিম্বাবুয়ে ১৮ ওভারে ১৪৪/৫ (বার্ল ৫৭*, মাসাকাদজা ৩৪, মুতোম্বোজি ২৭*; মোসাদ্দেক ১/১০)
বাংলাদেশ ১৭.৪ ওভারে ১৪৮/৭ (আফিফ ৫২, মোসাদ্দেক ৩০*; মাদজিভা ২/২৫)
ফলঃ বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী
আফিফ হোসেন যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন, ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ১৪৫ রানের লক্ষ্য তখন মিরপুরের জ্যাম ঠেলে ১০ মিনিটে কাওরানবাজার চলে যাওয়ার মতোই দুর্লঙ্ঘ্য। কিন্তু সেই কাজটাকেই কীভাবে যেন সহজ করে ফেললেন আফিফ। আর পাশে পেলেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। দেড় বছর আগে অভিষেকের পরেই বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। আর আবার দলে ফিরে আফিফ জানান দিলেন, কাঁধটা এখন অনেক চওড়া হয়েছে তার।
টেস্টের পর সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে যেভাবেই হোক শুরুতে একটা জয় চান। নইলে বাংলাদেশের খারাপ সময়টা আরও বাড়তেই থাকবে। সাকিব নিযে সেই অন্ধকার দূর করার মতো কিছু করতে পারলেন না। উল্টো জিম্বাবুয়ের ইনিংসের সময় মিনিট দশেকের জন্য বিদ্যুৎই চলে গিয়েছিল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। তবে সেটা কেটে গেছে দ্রুত, তবে বাংলাদেশের ২২ গজে সেটা বাড়ছিলই।
১৪৫ রান তাড়া করে শুরুতে দুই চারে লিটন ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু টেন্ডাই চাতারার ইয়র্কার মিস করে হয়ে গেলেন বোল্ড। সৌম্য সরকার শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। যেদিনটা তার নয়, সেদিন কিছুই হয় না- সেটা প্রমাণ করে দিয়ে আত্মবিশ্বাসহীন একটা শট খেলে দিয়ে এলেন উইকেট। তারপরও বৃষ্টির কারণে ১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে যখন আটের কাছাকাছি রান দরকার ওভারপ্রতি, আশা শেষ হয়ে যায়নি বাংলাদেশের। কিন্তু জার্ভিসের প্রথম বলেই যখন মুশফিক হতব্বিহবল হয়ে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন, বড় একটা ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। ২৬ রানে বিনা উইকেট থেকে ২৭ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
একটু পরেই সেটা হয়ে গেল ২৯ রানে ৪ উইকেট। সাকিবের আজ দিনটা সম্ভবত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বাজে দিনগুলোর একটি। চাতারার বাইরের বলটা তাড়া করতে গিয়ে কেন অমন শট খেলেছিলেন, সেটার ব্যাখ্যাও বোধ হয় তিনিই ভালো দিতে পারবেন। ফল না হলো, ফিরলেন ১ রানে। মাহমুদউল্লাহ আর সাব্বির রহমান দুজনেই শুরুটা পেয়েছিলেন। এরপরেই দৃশ্যপটে রায়ান বার্ল।
ব্যাট হাতে স্মরণীয় একটা দিনের পর লেগ স্পিনে এলবিডব্লু করেছেন মাহমুদউল্লাহকে, ফিরিয়েছেন ১৬ বলে ১৪ রান করে। সাব্বির রহমান খেলছিলেন ভালোই, ১৪ বলে ১৫ রান করে ফেলেছিলেন। মাদজিভার বলে চারও হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ডিপ স্কয়্যার লেগে অনেকটা দৌড়ে বার্ল যে ক্যাচ নিলেন, সেটা মিরপুরের দর্শকের মনে থাকবে অনেকদিন।
এরপরেই দৃশ্যপটে আফিফ। প্রথম বলেই মাদজিভাকে চার মেরে জানান দিচ্ছিলেন, দিনটা তার হতে পারে। তবে পরের ওভারেই প্রথম কঠিন হতে থাকা সমীকরণ সহজ হতে শুরু করে বাংলাদেশের। দুই চারের পর ফুলটসে একটি ছয়ও মেরেছেন উইলিয়ামসকে আফিফ, বাংলাদেশ তুলেছে ১৫ রান। পরের ওভারে মোসাদ্দেক বার্লকে পর পর দুই ছয় মারলেন, মিরপুরের গ্যালারি তখন উত্তাল। এরপর কয়েকটা ওভার আঁটোসাটো করল জিম্বাবুয়ে, সমীকরণ আবার কঠিন হতে শুরু করল। এর মধ্যে মোসাদ্দেক একবার বেঁচে গেছেন, উদযাপন করে রিভিউ নিয়েও আউট করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
জার্ভিস এলেন, আফিফ খেললেন ম্যাচে দুই সেরা শট। একবার পেরিস্কোপ শট, আরেকবার স্কুপে পর পর দুই চার মারলেন। ২ ওভারে ১৫ রানে নেমে এলো সমীকরণ। শেষ ওভারে সেটি হলো ৫। আফিফ ম্যাচটা শেষ করে আসতে আসতেও পারেননি, দুই বল হাতে রেখে সেটি সেরেছেন সাইফ উদ্দিন।
তার আগে বাংলাদেশের বোলিংয়ের দৃশ্যত দুইটা ভাগ আছে। এক, সাকিবের এক ওভারে ৩০ রান, আর বাকি ওভারগুলো। টি-টোয়েন্টিতে ব্যয়বহুল বোলিং আছে সাকিবের, তবে রায়ান বার্ল যেটা করলেন সেটা হজম করতে সময় লাগবে বাংলাদেশ অধিনায়কের। ১৬তম ওভারটা ছিল ঠিক এরকম; ৬-৪-৪-৬-৪-৬। ওই এক ওভারেই বার্ল পৌঁছে গেছেন ফিফটিতে, তাও আবার টি-টোয়েন্টিতে প্রথম।
তার আগে তাইজুলের এক ওভারে মাসাকাদজার তোপ বাদ দিলে ভালোই করছিল বাংলাদেশ। ব্রেন্ডন টেলরকে দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল, এরপর আরভিন আর মাসাকাদজার ৪৪ রানের জুটি। আরভিনকে মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানালেন মোস্তাফিজ, পরের ওভারে ২৬ বলে ৩৪ রান করে ফেলা মাসাকাদজাকে ফেরালেন সাইফ উদ্দিন। এর পরের ওভারেই আবারও বাংলাদেশের উদযাপন, এবার মোসাদ্দেক ফিরতি ক্যাচ নিলেন উইলিয়ামসের। মারুমা যখন ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে গেলেন, ৬৩ রানে ৫ উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের।
এরপর বার্ল আর মুতোম্বুজির ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন সেই জুটি, যেটা জিম্বাবুয়েকে দেখাচ্ছিল স্বপ্ন। কিন্তু আফিফ আর মোসাদ্দকের ৮২ রানের জুটিতে যে জবাব ছিল বাংলাদেশের। অনেক দিন পর ক্রিকেট নিয়ে কিছু নিয়েও ফিরতে পারলেন সাকিবরা।