স্মরণীয় দিনের পর সাকিবের প্রশংসা পেলেন বার্ল, তবে দিনটা তার নয়
দিনটা রায়ান বার্লের হতে পারতো।
৬৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ৩২ বলে ৫৭ রান, সাকিব আল হাসানের এক ওভারে ৩০ রানসহ। এরপর বোলিংয়ে এলেন, মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউ করে ৫৬ রানে ৫ উইকেট বানিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। যথেষ্ট মনে হচ্ছে না? বার্ল এবার ডিপ মিডউইকেট থেকে বাঁদিকে দৌড়ে গিয়ে দিলেন লাফ, নিলেন সাব্বির রহমানের ক্যাচ। বাংলাদেশের রান ৬০, উইকেট নেই ৬টি।
‘কুল’, নাকি?
বার্ল ‘কুল’ হতে পারতেন। দিনটা তারই হতে পারতো। আফিফ হোসেন সেটি হতে দিলেন না। মোসাদ্দেক হতে দিলেন না। এতোকিছুর পরও তাই বার্ল হতাশ। স্বাভাবিক। এমন পারফরম্যান্সের পরও যদি পরাজিতর দলে থাকতে হয়, তাহলে হতাশার মাত্রাটা তো বাড়তেই পারে আরও! তবে দিনশেষে বার্ল পেলেন সাকিবের প্রশংসা। বার্ল যে ব্যাপারটিকে বলছেন ‘কুল’।
সাকিবকে এদিন তিনি দিয়েছেন অন্যরকমের এক অভিজ্ঞতা।
চতুর্থ ওভারের আগে সাকিব ৩ ওভারে গুণেছিলেন ১৯ রান। এরপর বার্ল শুরু করলেন ঝড়।
অফস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে জায়গা বানিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয় মেরে শুরু করেছিলেন, এরপর ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে ছয় মেরে শেষ করেছেন, মাঝে আরেকটি মেরেছেন স্কয়ার লেগ দিয়ে, রিভার্স সুইপ করে মেরেছেন চার। ৪ ওভার শেষে সাকিবের রানের খরচ একলাফে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ রানে, ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব এতো রান দেননি কখনও, এক ওভারে এর আগে সর্বোচ্চ দিয়েছিলেন ২০ রান।
এই উল্লাস টেকেনি বার্লদের
ওভার শেষে রুমালে হাত মুছতে মুছতে একবার পেছন ফিরে তাকালেন সাকিব এরপর, দৃষ্টিতে বার্ল। যেন কে তাকে এমন মারটা দিলেন, তাকে আরেকবার দেখে রাখলেন। ৬, ৪, ৪, ৬, ৪, ৬- যে কোনও বোলারকে তাড়া করে ফিরতে পারে এই সংখ্যাগুলো।
বার্ল অবশ্য জানতেনই না, কতো রান উঠেছে ঠিক সে ওভারে। তার অনুভূতি জানতে চাওয়ার প্রশ্ন শুনে পালটা প্রশ্ন করলেন, “৩০ নাকি?” এরপর হাসতে হাসতে বললেন, “দারুণ লেগেছে!”
ম্যাচশেষে সাকিব বার্লকে সিক্ত করেছেন প্রশংসায়, “সে প্রেজেন্টেশনের পর এসেছিল। পিঠে চাপড় দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা একটু কথা বলেছি। সাকিবের মতো কারও প্রশংসা পাওয়ার ব্যাপারটা আসলেই দারুণ। বেশ ‘কুল’ ব্যাপারটা।”
২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এর আগে ২৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে তার ফিফটি ছিল একটি। আজকের স্কোরটিই বার্লের সর্বোচ্চ। ১০টি উইকেট ছিল, ১৫টি ক্যাচ ছিল। আজকের ইনিংস, উইকেট, ক্যাচ- স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারতো তার, জিম্বাবুয়ে জিতলে! তবে ম্যাচটা নাগালের মধ্যে পেয়েও হারিয়ে ফেললো জিম্বাবুয়ে।
নিজেদের সংগ্রহটা লড়াই করার মতো বললেও বার্লের মতে, ফিল্ডিং ভুগিয়েছে তাদের, “ফিল্ডিংয়ের সেই পুরোনো নিয়ম আসলে। কিছু ভুল হয়েছে। ১৮ ওভারের ম্যাচে এক শতাংশও এদিক-ওদিক হলে সেটার মাশুল গুণতে হবে।”
৬০ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, আফিফের দুর্দান্ত ওই ইনিংসে। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এরকম ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে ম্যাচের পরিস্থিতি, যে কোনও পরিস্থিতিতেই। সে ইনিংসে কোনও ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন না বার্ল।
অথচ বার্লও এদিন তিন বিভাগেই ছিলেন প্রায় ত্রুটিমুক্ত। দিনটা হতে পারতো তার। রায়ান বার্ল হতে পারতেন ‘কুল’।