'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু বাংলাদেশই'
আরেকবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের টপ-অর্ডার, আরেকবার প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ভাল একটা শুরুর পরও উচ্চাভিলাষী শটে ক্যাচ তুলে শুরুটা করেছিলেন সৌম্য সরকার, ব্লকহোলের বলেও আক্রমণাত্মক মানসিকতা ডুবিয়েছে লিটন দাসকে। সঙ্গে আছে তো শর্ট বল ও রিস্ট-স্পিনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চিরায়ত দূর্বলতাও। তবে সৌম্য, লিটন বা মুশফিক- কাউকে নিয়েই আপাতত খুব একটা ভাবছেন না বাংলাদেশ ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। তিনি বলছেন, আদতে “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু বাংলাদেশই।”
আপাতত ব্যাটসম্যানদের শট খেলার স্বাধীনতাও দিতে চান তিনি, “অবশ্যই আমরা কোনও উইকেট না হারিয়েই জিততে চাই। কিন্তু এটা ক্রিকেট, দলীয় খেলা। দেখুন, আমাদের লম্বা ব্যাটিং লাইন-আপ ছিল, আমরা জানতাম। পুরো দলের ওপরই বিশ্বাস ছিল। আমরা দলের জন্য খেলার ওপর জোর দেই, ছেলেদের ওপর বিশ্বাস রাখি। অনেক বড় দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রবল মনযোগ আছে (এই খেলায়), তারা খুবই প্যাশনেট এ ব্যাপারে। যখন দল ভাল খেলে, সবাই তুঙ্গে থাকে, যখন ভাল করে না, তখন কেউই খেলতে পারে না।”
“নিজেরদের দিক থেকেই ছেলেদের ওপর অনেক চাপ আছে। তারা নিজেরাই এই চাপ কমায়। এবং কোনোরকমের ভয়ডর ছাড়াই খেলে। আফিফ এসে প্রথম বলেই চার মেরেছে, পরের কয়েক ওভারে দারুন কিছু বাউন্ডারি মেরেছে। এরপর সৈকত এসে দুটি অসাধারণ ছয় মেরেছে। সুতরাং হ্যাঁ, হিসাব করে করা প্রচেষ্টা এবং সত্যিকার অর্থে দলীয় প্রচেষ্টা (গুরুত্বপূর্ণ)।”
এই চাপের ব্যাপারেই ম্যাকেঞ্জি বলছেন, বাংলাদেশের শত্রু বাংলাদেশই, “যদি হারের কথা চিন্তা করতাম, তাহলে এখানে আসতাম না। আমি বিশ্বাস করি, প্রতি ম্যাচেই আমাদের মেধা ও তা বাস্তবায়নে জয়ের সুযোগ আছে। আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু বাংলাদেশই।”
“কারণ, আমরা নিজেরা নিজেদের ওপর অনেক চাপ দেই। আমাদের ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা করতে হবে-- সেটা দর্শক, মিডিয়াসহ সবার দিক থেকেই আসতে হবে। তারা মেশিন না, তারা মানুষ। আমাদের তাদের সমর্থন দিতে হবে, যদি কালকে হারিও, পরের ম্যাচে আমরা জিতব। আমরা হারার জন্য আসি না। বাংলাদেশ ভয়ডর ছাড়া শতভাগ ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে আসে।”
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের আউটের জন্য ‘এক্সিকিউশনে’র সামান্য সমস্যা ছাড়া আর কিছু দেখছেন না সেভাবে ম্যাকেঞ্জি, “আমার মনে হয় কিছু এক্সিকিউশনের ব্যর্থতা ছিল। তবে এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। নিজের পরিকল্পনায় আটকে থেকে যদি কেউ আউট হয়, আমরা কিছু মনে করবো না। মুশি যদি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়, আমি চিন্তিত হয়ে পড়বো না। সৌম্য ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে যদি আউট হয়, আমি চিন্তা করবো না, কারণ এগুলোই (তার) শট।”
“যদি কেউ চাপে পড়ে এমন কিছু করতে চায়, যেটি করে অভ্যস্থ নয়, তাহলে সেটিই আমার জন্য সমস্যা। সুতরাং, লিটন দাসের মতো কেউ জানতো, সে ওই বল মিস করার মতো ব্যাটসম্যান নয়। তবে সে যেভাবে জায়গা বানিয়ে এক্সট্রা কাভারের সুযোগটা নিতে চেয়েছিল, সেটি আমার পছন্দ হয়েছে। সে এক্সট্রা কাভারে ভাল ব্যাটসম্যান। সুতরাং, ভাবনা ভাল, চিন্তা-ভাবনায় সমস্যা নেই। শুধু এক্সিকিউশনে আছে।”
সব মিলিয়ে ম্যাকেঞ্জি তাই ভরসা রাখতে বলছেন ক্রিকেটারদের ওপর, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন। আপনি সবসময়ই রান করতে পারবেন না। সাকিবকে দেখতে পারেন। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছিল। বেশ কয়েকজন আছে, যারা গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত ছিল। তবে এক বা দুই ম্যাচ ভাল না করলেই সবাই উত্তেজিত বা হতাশ হয়ে পড়ে। আন্তররাজতিক ক্রিকেট কঠিন, সেরা ক্রিকেটাররাও ব্যর্থ হয়। তবে আমাদের এই মেধাবি ক্রিকেটারদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছে যে ‘এ’ দল, তাদের দেখেছি, অনেক মেধাবি ক্রিকেটার আছে সেখানে। আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে, তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।”