টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তির পার্থক্য বুঝিয়ে দিল আফগানিস্তান
আফগানিস্তান ২০ ওভারে ১৬৪/৬
বাংলাদেশ ১৯.৪ ওভারে ১৩৯ অলআউট
ফলঃ আফগানিস্তান ২৬ রানে জয়ী
সেই ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানকে আর টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এই ফরম্যাট আফগানদের বরাবরই পছন্দের, আর বাংলাদেশের সেখানে স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তিই বেশি। সেটা আরও একবার ভীষণভাবে বোঝা গেল আজ ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তির পার্থক্য কতটা, আজ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আফগানিস্তান।
শক্তির পার্থক্য থাকলে কখনো কখনো নিজেদের পরিকল্পনা আগাপাশতলা বদল করতে হয়, প্ল্যান এ, বি, সি, ডি অনেক কিছুই করতে হয়। কিন্তু গোলাবারুদই যদি না থাকে এত পরিকল্পনা করে কী লাভ? আজও তো সেটাই দেখা গেল। মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো এলেন ওপেনিংয়ে, সেটাও আবার মুজিব উর রেহমানকে ঠেকাতে দুই ডানহাতি ঠেকানোর জন্য, কিন্তু করতে পারলেন মাত্র ৫ রান। তার আগেই এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছেন মুজিব। ইনিংসের প্রথম বলটা ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলার পর দ্বিতীয় বলেই আউট লিটন। টার্নের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে বোকা বনেছেন ফ্লাইটে।
সাকিব অবশ্য ঠিকই চার এলেন, তবে মাথা গরম করে ভুলে গেলেন খেলাটা। দুই চারে ১৫ রান করে ফেলেছিলেন। কিন্তু পঞ্চম ওভারে রশিদ খানের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হলো। সাকিবের উষ্মা বোঝা যাচ্ছিল স্ক্রিনেই, কিন্তু মেজাজ হারানোর খেসারত দিলেন পরের বলেই। এবং কাকতালই বটে, মুজিবের বলে মিড অনে সেই ক্যাচ নিলেন রশিদ খান। আফগান অধিনায়কের উদযাপন বলছিল, বন্ধুর সঙ্গে ভালোই একচোট হয়ে গেছে। ৩১ রানে তখন ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার এলেন আর গেলেন। মুজিবের প্রথম বলেই এলবিডব্লু, যে শট এঁকে দিল একজন ফর্মে না থাকা আত্মবিশ্বাসহীন ব্যাটসম্যানের ছবি। আর মুজিবের অফ স্পিনের বিপক্ষে সৌম্যকে এত লুকিয়েও লাভ হলো না। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
মাহমুদউল্লাহ আর সাব্বির এরপর কিছুক্ষণ আশা দেখালেন। ছয় হয়নি, তবে করিম জানাতকে এক ওভারে দুই চার মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। সাব্বির রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন, দুজনের জুটিতে ৫০ও হয়ে গেছে। এরপর ক্লান্ত মাহমুদমুল্লাহও গুলবদিন নাইবের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ডিপ মিড উইকেটে। ৩৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটা থেমে গেল। সাব্বির শুরু করেও বড় করতে পারলেন না ইনিংস। আবারও সেই মুজিব, এবারও ক্যাচ সেই ডিপ মিডউইকেটেই। ৯৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আসলে ওখানেই শেষ বাংলাদেশ।
আফিফ তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন আজও, কিন্তু প্রতিদিন তো আর ফোন আসার উপলক্ষ হবে না। ১৪ বলে ১৬ রান করে ছয় মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন জাদরানের হাতে বাউন্ডারিতে। ততক্ষণে ওভারপ্রতি রান ১৬র বেশি হয়ে গেছে, ম্যাচও আসলে শেষ হয়ে গেছে। সাইফ উদ্দিন ও মোসাদ্দেককে এক ওভারে ফেরালেন রশিদ। শেষ ওভারে চায়-ছয় মেরে কিছু বিনোদন দেওয়ার আগে মোশ্তাফিজ করেছেন ১৫ রান। অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া জয়টা আফগানরা পেয়েছে ২৬ রানে।
বোলিংয়েও তো বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের মানসিকতার ব্যবধানটা দেখিয়ে দিয়েছে আফগানরা। শুরুটা আজ স্বপ্নের মতোই হয়েছিল বাংলাদেশের, ইনিংসের প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে গুরবাজের স্টাম্প এলোমেলো করে দিয়েছেন সাইফ উদ্দিন। পরের ওভারে সাকিবকে মারতে গিয়ে আউট জাজাই। নাজিব তারাকাই ১১ রান করে ফেলেছিলেন, কিন্তু সাইফকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন বাউন্ডারিতে। আগের দিন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পর আজ নজিবুল্লাহ জাদরানের আয়ু ৫ রানের বেশি হলো না, এবার উইকেট দিয়ে এলেন সাকিবের বলে। ৪০ রানে তখন ৪ উইকেট নেই আফগানদের।
তবে মোহাম্মদ নবি আর আসগর আফগান এরপর ভুল করলেন না। পার্ট টাইমাররা এলেন, তাদের বলে রান তোলার চাকাটা ঘোরাতে শুরু করলেন। দ্রুত ৫০ রান তুলে ফেললেন, এর মধ্যে তাইজুল একবার আফগানকে ফেরালেন। কিন্তু ওভারস্টেপিং হলো, উইকেটের বদলে উল্টো আরও এক বল বেশি করতে হলো তাকে। দুজনের ৭৯ রানের জুটি ভাঙলেন সাইফ উদ্দিনই, ৪০ রানা ফেরালেন আফগানকে।
এরপরেই নবির সত্যিকার ঝড় শুরু। একের পর এক আছড়ে ফেলতে শুরু করলেন বোলারদের, ১৮তম ওভারে সৌম্যর বল থেকে নিলেন ২২ রান। ৫৪ বলে ৮৪ রান করে অপরাজিত রইলেন শেষ পর্যন্ত। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ ৩ রান দিয়েও ১৬৪ এর কমে আফগানদের আটকে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। সাইফের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংটা শেষ পর্যন্ত বৃথা গেল মুজিবের ক্যারিয়ার সেরা বলে।