মাহমুদউল্লাহ-শফিউলের প্রত্যাবর্তনের দিনে বিপ্লবও দেখল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ১৭৫/৭, ২০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৬২, লিটন ৩৮, জারভিস ৩/৩২, এমপোফু ২/৪২)
জিম্বাবুয়ে ১৩৬ অল-আউট, ২০ ওভার (মুতুমবামি ৫৪, জারভিস ২৭, শফিউল ৩/৩৬, বিপ্লব ২/১৮)
বাংলাদেশ ৩৯ রানে জয়ী
মাহমুদউল্লাহ আগের ম্যাচেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিপক্ষে কাজে আসেনি তার সেই ইনিংস। এবার ফিফটি করলেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা এলো প্রায় পৌনে তিন বছর পর। শফিউল টি-টোয়েন্টি খেলতে নামলেন দুই বছর পর। আর অনেকদিন ধরেই একজন লেগস্পিনার খুঁজে ফেরা বাংলাদেশকে তপ্ত খরার পর একপশলা বৃষ্টির সুবাস দিলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। মাহমুদউল্লাহর ৬২ রানের ইনিংসে ভর করে ১৭৫ রান তোলা বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে আটকে দিয়েছে ১৩৬ রানেই, শফিউলের ৩ ও বিপ্লবের ২ উইকেটে ভর করে। শেষদিকে কাইল জারভিসকে নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন ৫৪ রান করা রিচমন্ড মুতুমবামি, তবে সেটি বৃথা গেছে। এ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের, নিশ্চিত হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিদায়ও।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ তিন ম্যাচে এবার দেখেছে তৃতীয় ওপেনিং জুটি, শান্তকে সঙ্গে নিয়ে ঝড়ো শুরুও করেছিলেন লিটন দাস। দারুণ টাইমিংয়ে আক্রমণাত্মক ছিলেন লিটন। প্রথম ওভারে তার বিপক্ষে নেওয়া জিম্বাবুয়ের রিভিউটা ব্যর্থ হয়েছে ইমপ্যাক্ট বাইরে থাকায়। দ্বিতীয় ওভারে জারভিসকে দুই চারের পর তৃতীয় ওভারে নদলোভুকে অস্থির করে তুলেছিলেন তিনি-- জায়গা বানিয়ে সোজা শটে দুটি ছয়ের সঙ্গে একটি চার মেরে-- সে ওভারে মোট উঠেছিল ২১ রান।
৫ম ওভারে গিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু পেয়েছে জিম্বাবুয়ে, জারভিসের কাটার বুঝতে না পেরে লিডিং-এজে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। প্রথম বলে আউট হতে পারতেন সাকিব, তবে কট-বিহাইন্ডটার আবেদনই করেনি জিম্বাবুয়ে। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ হারিয়েছে লিটনকেও, ২২ বলে ৩৮ রান করে ‘ওয়ান শট টু মেনি’ হয়ে গেছে তার, ক্রিস এমপোফুকে ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন তিনি। সাকিবও ফিরেছেন দ্রুতই, বার্লের বলে হাফ-শট খেলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে।
ভাল শুরুটা দ্রুত উইকেটে ভেস্তে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল বাংলাদেশকে, মাহমুদউল্লাহ অবশ্য মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে জায়গা বানিয়ে লং-অফ দিয়ে ছয় মেরে দিলেন অন্য বার্তা। এদিন তিনি শুরু থেকেই যেন ছিলেন ফিফথ গিয়ারে, সঙ্গে পেয়েছিলেন মুশফিককে। মাঝে ২ ওভারে ৭ রান উঠেছিল, এ জুটির সবচেয়ে ধীরগতির পর্ব ছিল সেটি।
ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ মেরেছেন ৫টি ছয়, এর মধ্যে তিনটি ‘ভি’-এর মাঝে, একটি বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে-- ফাইন লেগ দিয়ে। আলগা বলে যেমন কঠোর ছিলেন, মোটামুটি ভাল বলেও তিনি খেলেছেন দারুণ শট। ২০১৭ সালের জানুয়ারির পর টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি ফিফটি পেয়েছেন তিনি, অবশ্য আগের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪ থেকে ২ রান দূরে থেমেছেন জারভিসের ফুলটসে তুলে মারতে গিয়ে। পরের বলে একই পরিণতি ছিল মোসাদ্দকেরও। এমপোফুকে উইকেট দেওয়ার আগে আফিফ করেছেন ৭ রান।
এর আগেই ভেঙেছে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মুশফিকের ৭৮ রানের জুটি, মুতোমবদজিকে স্লগ করতে গিয়ে ৩২ রান করা মুশফিক এজড হওয়ায়, উইকেটের পেছনে দুই দফায় দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন টেইলর। অবশ্য ২৯ রানে টেইলরই এমপোফুর বলে জীবন দিয়েছিলেন তাকে। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১৭৫ রানে।
এরপর নিজেদের প্রথম ওভারে সফল হয়ে জিম্বাবুয়েকে ডুবিয়েছেন একে একে সাইফউদ্দিন, সাকিব, শফিউল, আমিনুলরা। আবারও ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছেন সাইফ, তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন টেইলর। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে তিনে উঠে আসা চাকাভা সাকিবের লাইন মিস করে হয়েছেন পরিষ্কার বোল্ড। আর শন উইলিয়ামসন আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শফিউল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে। পাওয়ারপ্লেতে ৩ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে জিম্বাবুয়ের অবস্থা ছিল বেশ নড়বড়ে।
সে অবস্থা আরও বাজে হয়েছে আমিনুল বোলিংয়ে আসার, ক্যারিয়ারের তৃতীয় বলেই সফল তিনি। তার ফুললেংথের বলটা তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দিয়েছেন মুতোমবদজি। এরপরের উইকেটটা ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ, বেশ কিছুক্ষণ ঝুলে থাকা মাসাকাদজা মিডল-লেগ থেকে সোজা হওয়া বলটা মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। এর আগে শফিউলের বলে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছিলেন রায়ান বার্ল। ব্যাটিং ধসে রান-আউট থাকা যেন অলিখিত নিয়ম, সেটি মেনেই তা হয়েছেন নেভিল মাদজিভা। ১০০-এর নিচেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তখন উঁকি দিচ্ছিল জিম্বাবুয়েকে।
সেটা হতে দেননি মুতুমবামি ও জারভিস। সাকিবের ওপর চড়াও হয়ে প্রতি-আক্রমণ শুরু করেছিলেন মুতুমবামি, সাকিবকে দুই ছয়ের পর মেরেছেন চার। শেষ পর্যন্ত মেরেছেন তিনটি ছয়, সঙ্গে ৪টি চার। ২০ বলে ২৭ রান করে টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের ৫০তম শিকারে পরিণত হয়েছেন জারভিস, এক বল পর বোল্ড হয়েছেন নদলোভু।