বর্ণবাদ হটাতে প্রয়োজনে ম্যাচ বন্ধের পরামর্শ ফিফা প্রেসিডেন্টের
বর্ণবাদ ইস্যুতে বর্তমানে উত্তাল ইউরোপিয়ান ফুটবল। গত মৌসুমে মইসে কিনের পর এবার সিরি আ-তে রোমেলু লুকাকু, বুলগেরিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচে টায়রন মিংস, রহিম স্টার্লিং, মার্কাস রাশফোর্ডরা শিকার হয়েছেন বর্ণবাদের; এমনকি সাবেক ক্লাব পিএসজির সমর্থক এবং প্যারিসের বিরুদ্ধেও বর্ণবাদের অভিযোগ এনেছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ। বর্ণবাদের সেই ছায়া পড়েছে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর বাংলাদেশ সফরেও। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ, মেয়েদের ফুটবলের সাথে উঠে এসেছে বর্ণবাদের বিষয়টিও।
১৭ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইনফান্তিনো। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে বর্ণবাদের ব্যাপারে ফিফা ঠিক কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, এমন প্রশ্নে ইনফান্তিনো জানিয়েছেন ফুটবল থেকে বর্ণবাদ দূর করার জন্য কঠোর ব্যবস্থাই নিচ্ছেন তারা, "বর্ণবাদ এমন একটা ইস্যু যেটা এখন সব দেশেই আছে, এ ব্যপারে কোনো সন্দেহ নেই। ইউরোপে বর্ণবাদের ঘটনা বেশি শোনা গেলেও ইউরোপের বাইরেও এসব ঘটনা দেখা যাচ্ছে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, কারণে সমাজের মত ফুটবলেও এর (বর্ণবাদ) কোনও স্থান নেই।"
"বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ফিফাতে ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। সবার আগে বর্ণবাদের ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলার সাহস এবং সদিচ্ছা থাকা উচিত সবার। এ ব্যাপারে আমাদের চুপ করে থাকা যাবে না। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এবং শিশু-কিশোরদের এ ব্যাপারে অবগত করতে হবে। খেলার সময় বর্ণবাদের অভিযোগ হলে দুই ধাপে সেটিকে ট্যাকেল দিয়ে থাকি। প্রথম ধাপে খেলা থামিয়ে স্টেডিয়ামের মাইকে সমর্থকদের এ ব্যাপারে জানাতে হবে।"
"যদি এরপরও সমস্যা চলতেই থাকে, তাহলে রেফারি চাইলে খেলা বাতিলও করতে পারেন। পুরো ব্যাপারটিই রেফারির জন্য গুরুদায়িত্ব। বর্ণবাদী আচরণ চলতে থাকলে রেফারির খেলা বাতিল করার সৎ সাহস থাকতে হবে, কোনোভাবেই বর্ণবাদকে জিততে দেওয়া যাবে না। বর্ণবাদী সমর্থকদের চিহ্নিত করে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দিতে হবে, অন্য কোনও স্টেডিয়ামেও তাদের ঢুকতে দেওয়া উচিত না।"
"এ ধরণের সমর্থকদের আইনের আওতায়ও আনব আমরা, কারণ বর্ণবাদ একটি গুরুতর অপরাধ। সব দেশেই বর্ণবাদকে অপরাধের চোখে দেখা উচিত। এবং ফিফার মাধ্যমে আমরা এই ব্যাপারটিতে সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে দিতে চাই।"
সাম্প্রতিক সময়ে কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচে দর্শক সংকট নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল ইনফান্তিনোকে। জবাবে ফিফা প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন; ২০২২ বিশ্বকাপে দর্শক ঘাটতি নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না তিনি, "কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি দারুণভাবে চলছে। আর স্টেডিয়ামগুলোর মাঝের দূরত্বও একেবারেই কম, সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। আর কাতার বিশ্বকাপে খেলাও হবে নভেম্বরের ২১ থেকে ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত। যেটা সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত অ্যাথলেটিকস টুর্নামেন্টগুলো থেকে আলাদা। ঐ সময়ে তাপমাত্রা থাকবে ১৫-২৫ ডিগ্রি, যেটা সবার জন্যই আদর্শ।"
"আর এ সময়ে খেলোয়াড়রাও, বিশেষ করে যারা ইউরোপিয়ান লিগে খেলে থাকেন, সেরা ফর্মে থাকবে। কারণ এ সময়ের আগে তারা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলে থাকবে, এবং নিজেদের লিগে মাত্র দু’মাসের মত খেলবে বিশ্বাপের আগে। অন্যান্য বিশ্বকাপে তাদের খেলতে হত জুন-জুলাইয়ে, লম্বা মৌসুম শেষ করে আসায় তারা ক্লান্ত থাকত একটু বেশি। এই সময়ে বিশ্বকাপ হওয়াতে তারা সেরা ফর্মে থেকেই খেলতে আসবে বলে আমি মনে করি।"
"আমি নিশ্চিত কাতারে টেকনিক্যাল দিকের বিচারে আমরা এখন পর্যন্ত সেরা বিশ্বকাপটাই দেখব। এবং স্টেডিয়ামও ভরা থাকবে, কারণ ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলা। স্টেডিয়ামে দর্শকদের ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই, কাতারে সব ম্যাচেই দর্শকদের উপচেপড়া ভীড় থাকবে। কারণ বিশ্বকাপ শুধু ফুটবলের জন্য নয়; পুরো বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। এ সময় পুরো পৃথিবীই খেলা দেখার জন্য সব কাজ বন্ধ করে দেয়।"