• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    যে গোলরক্ষকরা গোল করতেও জানতেন

    যে গোলরক্ষকরা গোল করতেও জানতেন    

    গোলরক্ষকদের কাজ কি? প্রশ্নটার সবচেয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর, গোলপোস্ট পাহারা দেওয়াটাই তাদের মূল কাজ। তবে গোল ঠেকানোর সঙ্গে খেলার ধরনের কারণে কখনো কখনো দলের আক্রমণের শুরুটাও তাদের দিয়েই হয়। দারুণ একটা গোল কিক প্রতিপক্ষের অর্ধে জায়গা মতো ফেলতে পারলে বা নিজ দলের আক্রমণভাগের কোনও একজনের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে গোল বানিয়ে দেওয়ার কাজটাও করে দিতে পারেন তারা। তবে একজন গোলরক্ষক যদি  গোলস্কোরার বনে যান, বিষয়টা কেমন হবে? ইতিহাসে এমন বেশ কয়েকজন গোলরক্ষক রয়েছেন, দল ফ্রি-কিক বা পেনাল্টি পেলে যাদের ডাক পড়ত গোল করার জন্য। অনেকসময় তারা সেট-পিস ছাড়াও জহর দেখাতেন দর্শনীয় সব আউটফিল্ড গোল করে। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করা ১০ গোলরক্ষকদের নিয়েই এই লেখা।

    রজেরিও সেনি (১৩১ গোল)


    গোলরক্ষকদের ‘মেসি’ বলা হয় তাকে। ১৯৯৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু সাও পাওলোর হয়ে খেলেই ১৩১ গোল করেছেন রজেরিও সেনি। ক্যারিয়ারে রেকর্ড ৬২ টি ফ্রি-কিক এবং ৭০ টি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন তিনি। মোট গোলের মাঝে ৬৫ টি করেছেন ব্রাজিলিয়ান লিগে এবং ১৪ টি করেছেন কোপা লিবার্তোদোরেসে, আর বাকি গোলগুলো এসেছে অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মাঝে ৪৭ গোল করেছিলেন সাও পাওলোর এই কিংবদন্তি গোলরক্ষক। এই সময়টাতে সাও পাওলোর মূল স্ট্রাইকারের গোল সংখ্যা ছিল মোটে ১৩ টি। পেশাদার ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ব্রাজিলেই কাটিয়েছেন সেনি।

    হোসে লুইস চিলাভার্ট (৬৭ গোল)


    নব্বইয়ের দশকে যারা ফুটবল সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতেন নিয়মিত তাদের এই নামটা পরিচিত মনে হওয়ার কথা। গোলরক্ষক হিসেবে এক কথায় ‘ফুল প্যাকেজ’ ছিলেন হোসে লুইস চিলাভার্ট। প্যারাগুয়ের এই গোলরক্ষক তার দারুণ নেতৃত্বগুণ, দ্রুত গতির রিফ্লেক্স এবং ‘অসম্ভব’ সব সেভের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন, তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন তার ফ্রি-কিক থেকে গোল করার সক্ষমতার জন্য। প্যারাগুয়েতে ‘এল বুলডগ’ হিসেবে পরিচিত চিলাভার্ট বিশ্বের একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন। ১৯৯৯ সালে আর্জেন্টাইন ক্লাব ভেলেজ সার্সফিল্ডের হয়ে সেই কীর্তি গড়েন তিনি। ক্যারিয়ারে রেকর্ড ৮ টি আন্তর্জাতিক গোলও করেছেন এই প্যারাগুইয়ান গোলরক্ষক।

    হোর্হে কাম্পোস (৪৬ গোল)


    মেক্সিকান এই কিংবদন্তি গোলরক্ষকের শুধু গোল ঠেকানোই কাজ ছিল না, গোল করার কাজটাও নিয়মিত করতেন দলের জন্য। প্রায় নিয়মিতই গোলরক্ষক হিসেবে ম্যাচ শুরু করলেও পরে পুরোদস্তর স্ট্রাইকার বনে যেতেন কাম্পোস। অবশ্য শুধু গোল করেই নয়, নিজের আকর্ষণীয় গোলকিপার জার্সি দিয়েও ম্যাচজুড়েই নজর কাড়তেন এই মেক্সিকান গোলরক্ষক। ক্যারিয়ারে মেক্সিকোর হয়ে ১৯৯৯ সালে ফিফা কনফেডারেশনস কাপ এবং দুটি কনকাকাফ গোল্ড কাপও জিতেছেন তিনি।   

    দিমিতার ইভানকোভ (৪২ গোল)


    বুলগেরিয়া জাতীয় দলে মূল গোলরক্ষকের ১ নম্বর জার্সিটির জন্য জ্রাদকো জ্রাদকোভের সঙ্গে তার লড়াই চলত সবসময়। তবে একটি বিষয়ে ইভানকোভের ধারে কাছেও ছিলেন না জ্রাদকোভ, আর তা হচ্ছে পেনাল্টি থেকে গোল করা। জাতীয় দল এবং নিজের ক্লাবগুলোর হয়ে নিয়মতি স্পটকিক থেকে বল জালে পাঠাতেন তিনি। তবে তার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তটি আসে তুর্কি ক্লাব কায়সারিস্পরের হয়ে টার্কিশ কাপ ফাইনালে, ম্যারাথন টাইব্রেকারে সেদিন তার অনন্য নৈপুণ্যে সেদিন শিরোপা জিতেছিল তার দল। টাইব্রেকারে ৪ টি স্পটকিক ঠেকিয়ে দেওয়ার সঙ্গে ২ টি স্পট কিক থেকে গোলও করেছিলেন এই বুলগেরিয়ান গোলরক্ষক।

    রেনে হিগুইতা (৪১ গোল)


    কলম্বিয়ান রেনে হিগুইতা পরিচিত ছিলেন গোলরক্ষক হিসেবে তার ‘ঝুঁকি’ নেওয়ার সক্ষমতার জন্য। ‘সুইপার কিপার’ স্টাইলে দলকে রক্ষণভাগকে দারুণ সহায়তা করতেন তিনি। অ্যাথলেটিক সব সেভের জন্য সমর্থকদের মাঝেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল ‘এল লোকো’র। ক্যারিয়ারে কোপা লিবার্তোদোরেসসহ অসংখ্য ট্রফি জেতা হিগুইতা ১৯৯০ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে গোলরক্ষক হয়েও ৪১ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন হিগুইতা।

    জনি ভেগাজ ফার্নান্দেজ (৩৯ গোল)


    ২০ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ১৩ টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন জনি ভেগাজ ফার্নান্দেজ। পেরুর জাতীয় দলের হয়ে মোটে ৩ টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ক্যারিয়ারে তাই গোলরক্ষক হিসেবে কোন জায়গায় থিতু হয়ে খুব একটা খ্যাতি কুড়ানোর সুযোগ হয়নি তার। তবে তার একটি গুণের জন্য ফুটবল ভক্তরা সবসময় মনে রাখবে ফার্নান্দেজকে। দলের প্রয়োজনে স্পটকিক নেওয়ার জন্য তিনি সবার অগ্রভাগে থাকতেন সবসময়। ক্যারিয়ারের মোট ৩৯ টি গোলের মধ্যে ৩০ টিই করেছেন এই স্পটকিক থেকে, আর বাকি ৯ টি হচ্ছে আউটফিল্ড থেকে করা গোল।

    মার্সিও (৩৪ গোল)

    ১৯৮১ সালে ব্রাজিলের আরাকাজুতে জন্ম নেওয়া মার্সিও লুইজ ব্রাজিলের জাতীয় দলের ধারে-কাছেও আসতে পারেননি কখনও। এখন পর্যন্ত পেশাদার ফুটবলে ব্রাজিলের বিভিন্ন পর্যায়ের ঘরোয়া লিগে খেলেই দিন কাটছে। মার্সিও ক্যারিয়ারের দীর্ঘ ৯ বছর কাটিয়েছেন ব্রাজিলের সিরি বি-র ক্লাব অ্যাটলেটিকো গইয়ানিয়েন্সে। খুব বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের মালিক না হলেও গোলরক্ষক হিসেবে ৩৪ গোল করার ফলেই পাঁড় ফুটবল ভক্তদের মাঝে পরিচিতি তার।

    হান্স-জর্জ বাট (৩২ গোল)

    পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করার জন্য খ্যাতি ছিল হান্স-জর্জ বাটের। অবশ্য দল পিছিয়ে থাকলে ম্যাচের শেষের দিকে প্রায়শই গোল করার জন্য প্রতিপক্ষের বক্সের দিকে দৌড়ে যেতেন এই জার্মান গোলরক্ষক। এতে কালেভদ্রে সাফল্য আসলেও বেশিরভাগ সময় দলের জন্য উল্টো বিপদ তৈরি করতেন তিনি। তবুও পেশাদার ক্যারিয়ারে গোলরক্ষক হিসেবে ৩২ গোল করে ইতিহাসে নামটা ঠিকই টুকিয়ে নিয়েছেন বাট।

    মিসায়েল আলফারো (৩১ গোল)

    এল সালভাদরের গোলরক্ষক মিসায়েল আলফারো পেশাদার ক্যারিয়ারে গোলরক্ষক হিসেবে ৩১ টি গোলের সবকটিই করেছেন বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে। জাতীয় দলের হয়ে ৪২ টি ম্যাচ খেললেও সেখানে কোনও গোল পাননি। দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এল সালভাদরের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালে খেলা থেকে অবসর নিলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন আলফারো।

    দ্রাগান পানতেলিচ (২৬ গোল)

    পেশাদার ফুটবলে যুগোস্লাভিয়ার গোলরক্ষক দ্রাগান পানতেলিচের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালে রাদনিকি নিস ক্লাবের হয়ে। এরপর ফরাসি ক্লাব বোর্দো এবং সার্ব ক্লাব তিমক ঘুরে ১৯৮৫ সালে আবারও রাদনিকিতে এসেই ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি। ক্যারিয়ারে পেনাল্টি থেকে গোল করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন পানতেলিচ। গোলরক্ষক হওয়ার পরও তাই তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ২৬ গোল।