• অন্যান্য খবর
  • " />

     

    ম্যারাডোনার সেই গোলের সাক্ষী হতে পেরে গর্বিত তিউনিসিয়ান রেফারি

    ম্যারাডোনার সেই গোলের সাক্ষী হতে পেরে গর্বিত তিউনিসিয়ান রেফারি    

    এমনিতে রেফারিদের কেউ মনে রাখে না। নেপথ্যে থেকে খেলা পরিচালনা করাই তার কাজ। কিন্তু ব্যতিক্রম হয় কখনো, কোনো ম্যাচের সঙ্গে অমরত্ব পেয়ে যান রেফারিও। তিউনিসিয়ার আলি বিন নাসেরও সেরকম পেয়েছিলেন। ডিয়েগো ম্যারাডোনা যে ম্যাচে নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে উঠেছেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনালে শেষের বাঁশি বেজেছিল নাসের হাতেই। ম্যারাডোনার প্রয়াণের পর সেই নাসের বললেন, সেই ম্যাচে শতাব্দীর সেরা গোলটা করাতে পেরে তিনি গর্বিত।

    যদিও সেই ম্যাচে তার আগে বিতর্কিত গোলটা আগে করেছিলেন ম্যারাডোনা, দ্বিতীয় গোলটা নিয়ে আগে কথা বলা যাক। একের পর ইংলিশ ফুটবলারকে ছিটকে ফেলে ম্যারাডোনা ঢুকে পড়েছিলেন ডি বক্সে। নাসেরের তখন মনে হচ্ছিল, এই বুঝি পড়ে যাবেন ম্যারাডোনা। বাকিটা তার কথাতেই শুনুন, 'সে মধ্যমাঠ থেকে বলটা পেয়েছিল, আর আমি তাকে ছায়ার মতো দেখছিলাম। যলখন ম্যারাডোনার মতো কারও পায়ে বল পায়, আপনার জন্য চোখ সরিয়ে নেওয়া কঠিন।'

    'অন্তত তিন বার ওকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই ওর জয়ের ইচ্ছাটাই শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে ওকে। আমাকে প্রতিবারই চেঁচিয়ে বলতে হচ্ছিল, ‘অ্যাডভান্টেজ’, যতক্ষণ না সে পড়ে যাচ্ছিল। আমি বক্সের বাইরে থেকে দেখছিলাম কীভাবে সে তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঢুকে পড়ল। এভাবেই সে ৫০ মিটার দৌড়াল। আমার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি ওকে ফেলে দেওয়া হবে। পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম আমি। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, সে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটানোর পর গোলকিপারকেও কাটিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিল। যে গোলটাকে এখন বলা হয় শতাব্দীর সেরা গোল।'

    'আমি যদি অ্যাডভান্টেজ না দিয়ে ফাউলের বাঁশি বাজাতাম তাহলে এই অসাধারণ গোলটা আর দেখা হতো না। এরকম কিছুর সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত।'

    কিন্তু দ্বিতীয় গোলের কথা যদি হয়, তাহলে প্রথম গোলের প্রসঙ্গও চলে আসে। ডি বক্সের ভেতর লাফ দিয়ে হাত ছুঁইয়ে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা, যেটি নিয়ে বিতরক্র চলে এখনো। তিউনিসিয়ান রেফারি ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের প্রতিবাদের পরও গোলের সিদ্ধান্ত জারি রেখেছিলেন। নাসেরের দাবি, ম্যারাডোনার হ্যান্ডবল তিনি দেখতে পাননি, ‘ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার বলটা পাঠানোর পর ম্যারাডোনা আর শিলটন দুজনেই লাফিয়ে উঠল, তবে তারা আমার পেছনের দিকে ফিরে ছিল। আমি শুরুতে দ্বিধায় ছিলাম, এরপর আমার অ্যাসিসট্যান্টের (গচেভের) সঙ্গে আলাপ করার জন্য গেলাম। সে পিচের সেন্টারের দিকে গোলের সংকেত দিচ্ছিল। সে হ্যান্ডবলের বাঁশি বায়ানি।’

    'ফিফার সিদ্ধান্ত ছিল পরিষ্কার। কোনো সিদ্ধান্তে আপনার সহকর্মী যদি আপনার চেয়ে ভালো জায়গায় দেখে থাকে, তাহলে সেটার জন্য তার ওপরেই নির্ভর করা উচিত।'

    সেই ম্যাচের লাইন্সম্যান গচেভ মারা গেছেন তিন বছর আগে। তিনি বলেছিলেন, লাইন্সম্যানের রেফারির সিদ্ধান্তের ওপর কিছু বলার এখতিয়ার ছিল না। তবে নাসেরের জায়গায় ইউরোপিয়ান কোনো রেফারি থাকলে সেটা গোল হতো না বলেই দাবি গচেভের।

    পরে তিউনিসিয়ায় গিয়ে ম্যারাডোনা দেখা করেছেন নাসেরের সঙ্গে, দ্বিতীয় গোলে অ্যাডভান্টেজ দেওয়ায় ধন্যবাদ দিয়েছেন তাকে।নাসের অবশ্য ইংলিশ খেলোয়াড়দের মানসিকতার প্রশংসা করেছেন। তবে স্বীকার করেছেন, ইংল্যান্ড একটা গোল দিক সেটা তিনি চেয়েছিলেন। জমজমাট ম্যাচটা ১২০ মিনিট পর্যন্ত পরিচালনা করার ইচ্ছা ছিল তার।

    সেটা অবশ্য হয়নি, ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়েই আর্জেন্টনা ওঠে সেমিতে। বাকিটা ইতিহাস। যে ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে চলে গেছেন ম্যারাডোনা।