• আইপিএল ২০২১
  • " />

     

    বোলারদের ভিতে দাঁড়িয়ে মুম্বাইকে হেলেদুলে হারালেন রাহুল-গেইলরা

    বোলারদের ভিতে দাঁড়িয়ে মুম্বাইকে হেলেদুলে হারালেন রাহুল-গেইলরা    

    গ্রুপ পর্ব, চেন্নাই (পাঞ্জাব/ ফিল্ডিং)
    মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১৩১/৬, ২০ ওভার ( রোহিত ৬৩, সূর্যকুমার ৩৩, পোলার্ড ১৬*, বিষ্ণয় ২/২১, শামি ২/২১, হুডা ১/১৫) 
    পাঞ্জাব কিংস ১৩২/১, ১৭.৪ ওভার ( রাহুল ৬০*, গেইল ৪৩*, আগারওয়াল ২৫, চেহের ১/১৯, যাদব ০/২০ )
    পাঞ্জাব কিংস ৯ উইকেটে জয়ী


    টানা তিন হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল পাঞ্জাব কিংস, দুই অধিনায়কের ফিফটির দিনে রোহিত শর্মার ৬৩ রানের ইনিংসকে ছাপিয়ে পাঞ্জাবকে জয় এনে দিয়েছে লোকেশ রাহুলের অপরাজিত ৬০* রানের অপরাজিত ইনিংস। ১৩১ রানেই মুম্বাইকে আটকে দিয়ে মূল কাজটা সেরেছিলেন পাঞ্জাব বোলাররা, সে ভিতে দাঁড়িয়ে মুম্বাইকে হেলেদুলে হারানোর কাজটাই সেরেছেন রাহুল, সঙ্গে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা ক্রিস গেইল। 

    চিপকের মন্থর উইকেটে ১৩০-পেরুনো লক্ষ্য তাড়া করতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে বেশ কয়েকবারই। মুম্বাই সফলভাবে এই মাঠে ছোট সংগ্রহ নিয়েও ম্যাচ জিতেছে সেটাও হয়ত মাথায় ছিল পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানদের। পাওয়ারপ্লেতে আজ মুম্বাইয়ের ব্যাটিংয়ে ছিল না কোন আক্রমণের চিহ্ন, ঠিক সেই জায়গাতেই আক্রমণাত্মক হলেই যে জয়ের পথটা সহজ হয়ে যাবে সেটা মাথায় নিয়েই নেমেছিলেন পাঞ্জাবের দুই ওপেনার। ক্রুনাল পান্ডিয়ার করা দ্বিতীয় ওভারেই তাই তার ওপর চড়াও হয়ে ১৫ রান তোলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও লোকেশ রাহুল, পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে তোলেন ৪৫ রান। 

    তবে পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই ফিরে যান আগারওয়াল, রাহুল চাহারের উপর চড়াও হতে গিয়ে লং অনে সূর্যকুমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ২০ বলে ২৫ রানের ইনিংস। সেটিকে কাজে লাগিয়ে যে মুম্বাই চড়ে বসতে পারে সেটা ভালই বুঝেছিলেন ক্রিস গেইল, নেমেই ছিলেন সতর্ক, খেলেননি খুব একটা বড় শট। উইকেটের দেখা না মিললেও মুম্বাইয়ের স্পিনাররা বেঁধে রেখেছিলেন রাহুল-গেইলকে। চাহারের দারুণ স্পেল শেষ হলে রোহিত তার অভিজ্ঞ অল-রাউন্ডার পোলার্ডকে আক্রমণে আনার সিদ্ধান্ত নেন, ফাটকাটা কাজে লেগেই গিয়েছিল প্রায়। তবে ফিরতি ক্যাচটা একটু সামনে পড়ায় নিতে পারেননি পোলার্ড, রাহুলের কাছে ছয় খেয়ে অবশ্য রান গুনেছিলেন ১১।

    এরপরে অবশ্য দুজনেই বেশ কয়েকবার আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন, তবে কোনোবারই ফিল্ডারদের হাতে পৌঁছায়নি সেসব। রাহুলও তাই সমানসংখ্যক বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি। এরপর দুজনেই আর বেশি সময় নেননি, বোল্টের করা শেষ ওভারে দুজনে তুলেছেন ১৭ রান। দুজনেই অপরাজিত থেকেই ম্যাচ শেষ করে ফিরেছেন। 

    টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা পাঞ্জাব এর আগে শুরু থেকেই চেপে বসেছিল মুম্বাইয়ের ওপর। বাঁহাতি কুইন্টন ডি ককের জন্য দ্বিতীয় ওভারেই দীপক হুডাকে আক্রমণে এনেছিলেন অধিনায়ক রাহুল। পরিকল্পনা কাজে লেগে যায় ওই ওভারেই, মিড অনে মইসেস হেনরিকসের কাছে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে মাত্র ৩ রানেই ফিরে যান তিনি। হেনরিকস-হুডার আঁটসাঁট বোলিংয়ে একদমই সুবিধা করতে পারেনি মুম্বাই, পঞ্চম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় তারা। পাওয়ারপ্লেতে আসে মাত্র ২১ রান, যা তাদের আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। পাওয়ারপ্লেতে তিন ওভার করে কোন উইকেট না পেলেও হেনরিকস দিয়েছেন মাত্র ১২ রান। 

    পাওয়ারপ্লেতে গড়ে তোলা চাপকে কাজে লাগিয়ে সপ্তম ওভারেই প্রথমবার বোলিং করতে এসে উইকেট পান এই মৌসুমে প্রথম খেলতে নামা তরুণ রভি বিষ্ণয়, এদিন তিনে নামা ঈশান কিষানের ১৭ বলে ৬ রানের দুঃসহ ইনিংস শেষ হয় তার দারুণ গুগলিতে রাহুলের ক্যাচে। এরপর অবশ্য সূর্যকুমার যাদবকে সাথে নিয়ে বিপদ সামাল দেন রোহিত। প্রান্ত বদল করে দুজনই উইকেটে থিতু হলে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন রোহিত, ৪০ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। অপর প্রান্তে অত্যন্ত সাবলীল যাদব অবশ্য ১৭তম ওভারে বিষ্ণয়ের বলে সুইচ হিট খেলতে গিয়ে টপ-এজে গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, করেন ২৭ বলে ৩৩ রান। বিষ্ণয় শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। 

    সূর্যকুমারের বিদায়ে রানের চাকা সচল রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছিলেন রোহিত। সেই লক্ষেই শামির বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রোহিত, ৫২ বলে খেলা তার ৬২ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি চার আর ২টি ছয়। 

    বিপদ সামলে মাঝের ওভারে গড়ে তোলা ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ইনিংস খুব বেশি বড় করতে পারেনি মুম্বাই, এর পেছনে মূল কৃতিত্ব পাঞ্জাবের দারুণ ডেথ বোলিংয়ের। বড় শট খেলতে গিয়েই বিদায়ঘন্টা বেজেছে পান্ডিয়া ভাইদের, হারদিক ও ক্রুনাল যথাক্রমে মাত্র ১ ও ৩ রানে ফিরে গেছেন।  শেষ ওভারে একটি ছয় মারা ছাড়া কাইরন পোলার্ডও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি, অপরাজিত ছিলেন ১২ বলে ১৬ রান করে। ১৮ তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে রোহিতের উইকেট নিয়েই শামি মূল ক্ষতিটা করেছিলেন, নিজের শেষ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট, মুম্বাই গিয়ে থেমেছিল ১৩১ রানে।