• আইপিএল ২০২১
  • " />

     

    দানবীয় পোলার্ডে চেন্নাইয়ের ২১৮ টপকে গেল মুম্বাই

    দানবীয় পোলার্ডে চেন্নাইয়ের ২১৮ টপকে গেল মুম্বাই    

    গ্রুপ পর্ব, দিল্লি (টস- মুম্বাই/ ফিল্ডিং)
    চেন্নাই সুপারকিংস ২১৮/৪, ২০ ওভার (রায়ডু ৭২*, মইন ৫৮, ডু প্লেসি ৫০, পোলার্ড ২/১২, বোল্ট ১/৪২,  বুমরাহ ১/৫৬)
    মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ২১৯/৬, ২০ ওভার ( পোলার্ড ৮৭*, ডি কক ৩৮, রোহিত ৩৫, কারান ৩/৩৪, জাদেজা ১/২৯, মইন ১/১)
    মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ৪ উইকেটে জয়ী 


    কাইরন পোলার্ডের ৬ চার ও ৮ ছয়ে ৩৪ বলের ৮৭* রানের দানবীয় ইনিংসে চেন্নাইয়ের ২১৮ রান তাড়া করে জিতেছে মুম্বাই। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ফাফ ডু প্লেসির ৫০ আর মইন আলীর ৫৮ রানের পর আম্বাতি রায়ডুর ২৭ বলে ৭২ রানের ঝড়ে ২০০-পেরুনো স্কোর গড়ার পর বোলিংয়েও চেন্নাই কুইন্টন ডি কক আর রোহিত শর্মাকে বড় ইনিংস খেলতে না দিয়ে ম্যাচে ছিল ভালোভাবেই। তবে কাইরন পোলার্ড যেদিন রুদ্রুমূর্তি ধারণ করেন সেদিন যে প্রতিপক্ষের কিছুই করার থাকে না সেটা তিনি দেখালেন আরও একবার। বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন দলকে, আর ব্যাটিংয়ে নেমে পরে যা করলেন তাতে ছাপিয়ে গেল সবকিছু। যখন নেমেছিলেন, ৫৮ বলে ১৩৮ রান প্রয়োজন ছিল মুম্বাইয়ের, মুখোমুখি হওয়া ৬ষ্ঠ বলে ছয় দিয়ে সেই যে শুরু করেছেন, পোলার্ডকে এরপর আর থামাতে পারেনি চেন্নাই। 

    দিল্লির ছোট মাঠে রানতাড়া করা সহজতর হলেও মুম্বাইকে তাড়া করতে হতো ২১৮, যা তারা করেনি এর আগে কখনোই। শুরুটা অবশ্য তাদের হয়েছিলো মনমতোই- আগেরদিন রানতাড়া করে ম্যাচসেরা হওয়া কুইন্টন ডি কক ফর্ম বজায় রেখে দারুণ শুরু করেছিলেন, বেশ কয়েকবার এজ হলেও রোহিত শর্মাও খেলেছেন দারুণ কিছু শট, দুজন মিলে পাওয়ারপ্লেতে তুলেছিলেন ৫৮ রান।

    তবে বোলিংয়ে পরিবর্তন আসতেই ম্যাচের দৃশ্যপটে আসে পরিবর্তন। আক্রমণে এসেই রোহিতকে ফেরান শারদুল ঠাকুর, ২৪ বলে ৩৫ করেই থামতে হয় মুম্বাই অধিনায়ককে। এরপর স্পিনারদের আনা হলে পরের দুই ওভারেও আসে দুই উইকেট। রবিন্দ্র জাদেজার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সূর্যকুমার যাদব। ২৮ বলে ৩৮ রান করে মইন আলির প্রথম ওভারেই তার কাছে ফিরতি ক্যাচ দেন ডি ককও। 

    এখান থেকে ম্যাচ জিততে হলে রায়ুডুর মতই একটা ইনিংস দরকার ছিল মুম্বাইয়ের। উইকেটে এসে পোলার্ড করলেন তার চেয়েও বেশি কিছু। পেশীশক্তির দারুণ প্রদর্শনীতে উইকেট পড়ার প্রভাব পড়তেই দেননি তিনি। জাদেজার এক ওভারে তিন ছয়ে শুরু করেছিলেন, মাত্র ১৭ বলেই এরপর পূর্ণ করেন ফিফটি, যা এই আসরের দ্রুততম ও মুম্বাইয়ের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম। অপর প্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া ক্রুনাল পান্ডিয়া অবশ্য নিজে মাত্রই চড়াও হওয়া শুরু করেছিলেন। তবে ১৭তম ওভারে বল করতে আসা স্যাম কারানের দুর্দান্ত ইয়র্কারের কোন জবাব তার কাছে ছিল না, ২৩ বলে ৩২ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান তিনি, ওই ওভারে কারান দেন মাত্র ২ রান।  

    তবে ম্যাচের যে তখনও বাকি ছিল অনেক কিছুই, পোলার্ডও এরপর শুরু করেছেন দুর্দান্ত হিটিং। ১৮তম ওভারে চেন্নাইয়ের অন্যতম সেরা ফিল্ডার ডু প্লেসি পোলার্ডের ক্যাচ ফেলে দেন, ম্যাচটাও যেন সেখানেই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। পরের ওভারে হারদিক পান্ডিয়ার ক্যাচ নিয়েই কিছুটা শাপমোচনের চেষ্টা করেছিলেন ডু প্লেসি, কারানের ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই ছয় মেরে ১৬ রানের ক্যামিও শেষ হয়েছে পান্ডিয়ার তেতে। ওই ওভারেই স্কুপ করতে গিয়ে প্রথম বলেই ফিরে যান মৌসুমে প্রথম নামা জিমি নিশামও। তবে সেসব দমাতে পারেনি পোলার্ডকে, লুঙ্গি এনগিডির করা শেষ ওভারে দুই চার, এক ছয় আর শেষ বলের ডাবলসে ১৬ রান তুলে দিল্লিতে মুম্বাইয়ের রূপকথার নায়ক হয়ে গেছেন তিনি আরেকবার। 

    অথচ এদিন রায়ডু খেলেছিলেন ২৭ বলে ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, নায়ক তো হতে পারতেন তিনিও!
    ট্রেন্ট বোল্টের তোপে প্রথম ওভারেই রুতুরাজ গায়কোয়াড় ফিরলেও ফাফ ডু প্লেসি ও মইন আলি উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন চেন্নাইকে। ৩৩ বলে ফিফটি করা মইন ফিরেছেন ৩৬ বলে ৫৮ রান করে, ডু প্লেসির সঙ্গে ১০৮ রানের জুটি গড়ে। এরপর পোলার্ডের টানা দুই বলে দুই উইকেটে মুম্বাই প্রথম মোমেন্টাম নিয়েছিল নিজেদের দিকে- ২৮ বলে ঠিক ৫০ রান করা ডু প্লেসির পর সুরেশ রায়না ফিরেছিলেন ৪ বলে ২ রান করে। চেন্নাইয়ের স্কোর তখন ১২ ওভারে ১১৬, এরপর তারা যে উড়ান দিল, তাতে মূল অবদান তো রায়ডুর ঐ ইনিংসেরই। 

    উইকেটে এসে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন, ভীতিকর, বিশাল কোন শারীরিক গঠন না হলেও তার স্ট্রোকপ্লে ছিল অসাধারণ। বোল্ট-বুমরাহকে এদিন পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলেছিলেন রায়ডুরা, তাদের কোটার আট ওভার থেকে এসেছে ৯৮ রান! মাত্র ৫৬ বলে জাদেজার সঙ্গে রায়ডুর জুটিতে উঠেছিল ১০২ রান, যেখানে জাদেজার অবদান সমানসংখ্যক বলে ২২ রান। একই ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি জুটি- আইপিএল দেখল প্রথমবার। 

    এদিন ২২ বলে ফিফটি করেছিলেন রায়ডু, যা আইপিএলের এ আসরে তখন দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। পোলার্ড পরে সেটিকে বানিয়ে দিয়েছেন তৃতীয়, পোলার্ড ম্লান করে দিয়েছেন রায়ডুকে, আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানতাড়া করে এদিন তিনি ম্লান করে দিয়েছেন পুরো চেন্নাইকেই।