• কোপা আমেরিকা ২০২১
  • " />

     

    কিক অফের আগে: ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মহারণে আবেগ ভুলিয়ে দেবে ট্যাকটিকস?

    কিক অফের আগে: ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মহারণে আবেগ ভুলিয়ে দেবে ট্যাকটিকস?    

    কোপা আমেরিকা, ফাইনাল 

    ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা 

    মারাকানা স্টেডিয়াম 

    ১১ জুলাই, বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা


     

    লিওনেল মেসি। নেইমার। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। মারাকানা। ফাইনাল।

    এই শব্দগুলোই আসলে যথেষ্ট সবকিছু বুঝিয়ে দিতে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ মানেই যেখানে উত্তেজনা আর আবেগের এক রোলারকস্টার, সেখানে ম্যাচটা ফাইনাল হলে তো কথাই নেই। তার ওপর লিওনেল মেসি আর নেইমারের জন্য যখন সেই ফাইনালটা আর সবকিছুর চেয়ে আলাদা, তখন সেটার গুরুত্ব বেড়ে যায় আরও বেশি।



    মেসির কথাটাই ধরা যাক। কলম্বিয়ার ম্যাচে যখন দল টাইব্রেকার খেলছে, তখন মেসির অভিব্যক্তি নিয়ে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। টাইব্রেকারে একেকটা গোলের সাথে যেভাবে উল্লাস করছেন, যেভাবে ফেটে পড়ছেন, সেটার সঙ্গে স্বভাবত অন্তর্মুখী মেসিকে চট করে মেলানো যায় না। রক্তমাখা গোড়ালিতে যেভাবে ম্যাচটা শেষ করেছেন, তাতে আরেকবার জানা হয়ে গেছে, এই কোপা মেসির জন্য কী। ক্লাবের হয়ে সবকিছু জিতেছেন, কিন্তু দেশের হয়ে এখনো একটা শিরোপা অধরা থেকে গেছে। সেই ২০০৭ কোপায় যখন প্রথম ফাইনাল খেলেছিলেন, সেবার আর্জেন্টিনার সামনে ব্রাজিলকে কেউ গোণায় ধরেনি। কিন্তু সেবার হেরে গিয়েছিলেন মেসিরা। এরপর একে একে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আরও দুইটি কোপার ফাইনালে উঠেও মেসিকে বরণ করতে হয়েছে একই রকম দুর্ভাগ্য। কখনো অতিরিক্ত সময়ে, কখনো টাইব্রেকারে  লেখা হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের এপিটাফ। এবার আরও একবার দলকে নিয়ে ফাইনালে গেছেন মেসি। কে জানে, এটাই হয়তো তার শেষ সুযোগ দেশের হয়ে কিছু জেতার। কিন্তু প্রতিপক্ষে আছেন এমন একজন, যার জন্য এই ফাইনালের মূল্যটা অন্যরকম।

    মেসির মতো অতটা দুর্ভাগা নন নেইমার। দেশের হয়ে দেশের মাটিতেই তার কনফেডারেশন্স কাপ জেতার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সেখানেই শেষ। ২০১৪ বিশ্বকাপে যখন দল সেমিফাইনালে, নেইমারের তখন টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে ভয়াবহ এক ট্যাকলে। কান্নাভেজা চোখে দেখতে হয়েছে দলের বিপর্যয়। এরপর ২০১৯ সালে আবার বড় আসর ফিরল ব্রাজিলে, কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই নেইমারের খেলার স্বপ্ন শেষ। এবার আবারও চোট। এবার দল জিতেছে, কিন্তু নেইমার ছিলেন বাইরে। আর এই বছর কোপা তো ব্রাজিলে হওয়ারই কথা ছিল না। কলম্বিয়া আর আর্জেন্টিনা থেকে সরে আসার পর শেষ মুহূর্তে চলে আসে ব্রাজিলে। আর ফাইনাল হচ্ছে মারাকানায়, যেখানে একটা ট্রফির জন্য নেইমার হয়তো বিসর্জন দিতে পারবেন অনেক কিছু। ৫ হাজার দর্শকও থাকবে, সেটাও বা খারাপ কী! কিন্তু নেইমার জানেন, এই সুযোগ হয়তো আর আসবে না তার সামনে।

    এবারের ফাইনালটা এমন অনেক আবেগকে সামনে নিয়ে আসছে, যার সামনে আড়াল হয়ে যাচ্ছে দলের কৌশল। অথচ তিতে কীভাবে মেসিদের ঠেকাবেন, বা স্কালোনি কীভাবে নেইমারকে আটকানোর চিন্তা করছেন, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলিয়ে এসেছেন স্কালোনি, সেটা থেকে হয়তো চট করে সরতে চাইবেন না,। অন্যদিকে তিতেও একই ফর্মেশনে খেলান, কখনো ৪-৪-২ তে। ফাইনালে কীভাবে খেলাবেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। তিতের অভিজ্ঞতা বেশি, ট্যাকটিক্যালি হয়তো এগিয়ে থাকবেন স্কালোনির চেয়ে। তবে এমন একটা ম্যাচে হতে পারে যে কোনো কিছুই।

     

    দলের খবর

    আর্জেন্টিনার জন্য বড় দুশ্চিন্তা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো কি খেলবেন? চোটের জন্য আগের ম্যাচে ছিলেন না, তার না থাকাটা বড় একটা ধাক্কা হতে পারে আর্জেন্টিনার জন্য। একই সঙ্গে মিডফিল্ডে পারেদেস, গুইদো, লে সলসোদের কাকে খেলাবেন, সেটা নিয়েও আছে সংশয়। ডি মারিয়া আগের ম্যাচে বদলি নেমে যেভাবে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন, তাতে তারও দাবি আছে প্রথম একাদশে। সবকিছু নির্ভর করছে স্কালোনি কী ট্যাকটিক্সে খেলান সেটার ওপর।

    গ্যাব্রিয়েল জেসুস লাল কার্ড দেখায় তিতে তাকে ফাইনালে পাচ্ছেন না নিশ্চিতভাবেই। সেক্ষেত্রে তার জায়গায় ফিরমিনো আসতে পারেন হতো। আবার আগের ম্যাচের মতো নেইমার-রিচার্লিসনও খেলতে পারেন সামনে।

    সম্ভাব্য একাদশ

    আর্জেন্টিনা

    মার্টিনেজ, পেজ্জেলা, ওটামেন্ডি, মন্টিয়েল, আকুনা, পারেদেস, রদ্রিগো দে পল, লে সলসো, নিকো গঞ্জালেজ, মেসি, লাউতারো মার্তিনেজ।

    ব্রাজিল

    মার্কিনিয়স, থিয়াগো সিলভা, দানিলো, রেনান লদি, ফ্রেড, কাসেমিরো, পাকেতা, এভারটন, নেইমার, রিচার্লিসন।

     

    আগে কী হয়েছিল?

    সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রীতি ম্যাচে দেখা হয়েছিল দুই দলের, মেসির গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ব্রাজিলার কোনো ম্যাচে হারেনি, আর্জেন্টিনাও অপরাজিত স্কালোনির অধীনে। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দুই দলের দেখা ওই ১৯ এর কোপার সেমিতে, সেবার জিতেছিল। আর কোপার ফাইনালে ২০০৭ এ দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, সেবারও জিতেছিল ব্রাজিল। সব মিলে দুই দলের ১০৭ ম্যাচে ব্রাজিল জিতেছে ৪৩টি, আর্জেন্টিনা ৩৯টি। ড্র হয়েছে ২৫টি।