• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    মন রাঙানো ফুটবলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে সেমিতে ইতালি

    মন রাঙানো ফুটবলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে সেমিতে ইতালি    

    কোয়ার্টার ফাইনালে সবচেয়ে অপেক্ষা ছিল ইতালি-বেলজিয়ামের ম্যাচ নিয়ে। দর্শকদের সেই অপেক্ষার ফল এর চেয়ে মধুর কমই হতে পারত। রোমাঞ্চ জাগানিয়া এক ম্যাচে নিকোলা বারেল্লা ও লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের গোলে বেলজিয়ামকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ চারে চলে গেছে ইতালি। শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন।

    চোট কাটিয়ে আজ মাঠে নেমেছিলেন ডি ব্রুইন। তাকে নিয়ে এত আলোচনার কারণটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সামান্যের জন্য গোল পাওয়া হয়নি। তাতে অবশ্য কৃতিত্ব ইতালি গোলরক্ষকের। বক্সের কিনারা থেকে নেওয়া ডি ব্রুইনের বাঁ পায়ের অসাধারণ শট সেভ দিয়ে বেলজিয়ামকে গোলবঞ্চিত করেন জিয়ানলুইজি ডোনারুমা। এরপর আরেকবার কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে গিয়ে ডি ব্রুইন বল লুকাকুর দিকে বল বাড়ালে বক্সের ভিতর থেকে লুকাকু বাঁ পায়ে শট নেন, সেটিও ফিরিয়ে দেন ডোনারুমা।



    গোলের দেখা না পেলেও ম্যাচে উত্তেজনার কমতি ছিল না। ইতালি কোচ মানচিনি টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বলেছিলেন, তিনি চান তার দলের খেলা যেন মানুষ উপভোগ করে। টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট বেলজিয়ামের সাথে প্রথমার্ধে উপভোগের সকল রসদই উপস্থিত ছিল। একের পর এক আক্রমণে চোখ সরানোর উপায় নেই। শেষমেশ ব্যবধান গড়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গোলও হাজির হয়ে যায় ম্যাচে। প্রথমার্ধেই দেখা মিলে তিন তিনটি গোলের। তার সবকটিই এসেছে শেষের পনেরো মিনিটে।
     

    শুরুর আধা ঘন্টায় ইতালি যদিও একবার বল জালে জড়িয়েছিল ঠিকই। ভিএআরের সিদ্ধান্তে পরে সেটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইড হওয়ায়। এরপর ৩১ মিনিটে অবশেষে গোল পেয়েই যায় ইতালি। মার্কো ভেরাত্তি বেলজিয়াম ডি-বক্সের সামনে ইন্টারসেপ্ট করে পাস দেন বারেলাকে। তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বের হয়ে তারপর ডান পাশ থেকে নেওয়া দুর্দান্ত শটে ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডার জালে পাঠিয়ে দেন বল। বেলজিয়াম এরপর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করে। ইতালি তা সামলে আবার ব্যবধান বাড়িয়ে দেয় ৪৪ মিনিটে। বাঁম প্রান্ত থেকে ইনসিনিয়ে ডান পায়ের বাঁকানো শটে কর্তোয়াকে পরাস্ত করে বল জড়িয়ে দেন ডান কর্নারে। তবে গোলশূন্য অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষে বিরতিতে যেতে পারেনি ইতালি। ইনজুরি টাইমে জেরেমি ডকু ইতালি বক্সে ডি লরেঞ্জোর ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বেলজিয়াম। পেনাল্টিতে লুকাকুর গোলে তাই বেলজিয়াম তখনও বেঁচে থাকে। 

    সে বেঁচে থাকাটা স্থায়ী করবার পথে তাদের একটি গোলের দরকার ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ডকু ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে থাকা ডি ব্রুইনার দিকে বল বাড়ালে গোলের খুব কাছেও চলে যায় বেলজিয়াম। ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত ক্রস সিক্স-ইয়ার্ড বক্সে থাকা লুকাকুকে খুঁজে নেয়। তার ফার্স্ট টাচ দুর্বল হলেও তা জাল খুঁজে নিতে পারতো, স্পিনাজ্জোলা গোললাইনের সামনে এসে তা ক্লিয়ার করে প্রায় নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন। আরেকবার বাঁ পাশ থেকেই করা চ্যাডলির ক্রসে মাথা লাগাতে পারেননি লুকাকু, গোললাইনের সামনে থাকা লুকাকুর মাথার উপর দিয়ে চলে যায় বল। বেলজিয়ামের আর ভালো সুযোগ যেটিকে বলতে হয়, সেটিও গেছে ওই বারের উপর দিয়েই। 

    পুরো দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের পাশাপাশি বেলজিয়ামের প্রতি-আক্রমণ দারুণভাবে সামলানো ইতালিই তাই শেষ হাসিটা হেসেছে। ম্যাচের সমাপ্তি ঘটেছে ২-১ গোলের ব্যবধানেই।  দুই রবার্তোর লড়াইয়ে জয় হলো মানচিনিরই। তাতে বেলজিয়াম গেলবারের পর এবারও ইউরোতে বিদায় নিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। গন্তব্যের বহু আগে, বেলজিয়ামের এই সোনালী প্রজন্ম সম্পর্কে তো মন্তব্য ছিল- এবার শিরোপা না হলে আর কোনওবারই না। ইতালির তেমন লক্ষ্য থাকলেও টুর্নামেন্টের আগে মানচিনি বলেননি, আমরা শিরোপা জিততে এসেছি। তবে ইতালি তাদের খেলায় তা বুঝিয়ে দিচ্ছে পরিষ্কারভাবেই। কোয়ালিফায়ার সহ ইউরোতে টানা ১৫ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও তারা করে ফেলেছে। টানা ১৪ ম্যাচ জেতা বেলজিয়াম যা পারেনি আজ ইতালির কাছে হারাতে।