• অন্যান্য খবর
  • " />

     

    কেমন দল গোছাল ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো?

    কেমন দল গোছাল ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো?    

    দলবদল সমাচার: ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে যেভাবে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের শীর্ষ দলগুলো

    কোভিড ও কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক ঝুঁকি কাটিয়ে এ মৌসুমেই আবার হাত খুলে খরচ করতে শুরু করেছে ইউরোপীয় ক্লাবগুলো। দলবদল বাজারের দিকে তা চোখে পড়বে। তবে এরমধ্যে অর্থের প্রবাহ ও একই সাথে বৈশ্বিক ফুটবলের অর্থনৈতিক শক্তি কাঠামোও যে বদলে গেছে, সেটিও চোখে পড়বে বাজারের দিকে তাকালেই। ১লা সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে শেষ হওয়া গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো খরচ করেছে মোট ২.২ বিলিয়ন ইউরো, যা ইউরোপের বাকি চার শীর্ষ লিগের মোট খরচের সমান। 

    স্বাভাবিকভাবেই কোনো লিগের জন্য এক উইন্ডোতে সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড এটি। এই উইন্ডোতে খেলোয়াড় কেনায় সর্বোচ্চ খরচ করা ১০ ক্লাবের মধ্যে ৭টি ইংল্যান্ডের। শীর্ষে থাকা চেলসি খরচ করেছে ৩১০ মিলিয়ন ইউরো, যেটি প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে যেকোনো ক্লাবের জন্যই সর্বোচ্চ। 

     

    চলুন দেখে নেওয়া যাক ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে কীভাবে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো- 

     

    ম্যানচেস্টার সিটি

    গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রহিম স্টার্লিং ও ওলেসান্দার জিনচেঙ্কোর মতো দীর্ঘদিনের সেবকদের হারানোটা মোটেও সহজ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু দলটা যে সিটি! প্রথমবারের মতো খেলোয়াড় কেনার চেয়ে বিক্রিতে বেশি অর্থ দেখা সিটিজেনদের মাঠের খেলায় এর আঁচ যেন একেবারেই পড়ছে না। তার কারণ দুটো। আগে থেকেই মজবুত স্কোয়াড ডেপথ এবং নতুন সাইনিং আর্লিং হালান্ডের এসেই বাজিমাত করা।   

    উল্লেখযোগ্য দলবদল

    আগমন: আর্লিং হালান্ড, কেলভিন ফিলিপস, ম্যানুয়েল আকানজি  

    প্রস্থান: রহিম স্টার্লিং, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ওলেকজান্দার জিনচেঙ্কো, গ্যাভিন বাজুনো।

    নেট খরচ: ২১ মিলিয়ন ইউরো।  

     

    লিভারপুল

    সাদিও মানের প্রস্থান নিঃসন্দেহে  লিভারপুলের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তবে আক্রমণভাগে গোলের অভাব তাদের ভোগাচ্ছে না, বাকি মৌসুমে ভোগানোর সম্ভাবনাও কম। লিভারপুলকে ভোগাচ্ছে মিডফিল্ডের ইনজুরি সংকট। নতুন সাইনিং আর্থুর মেলোসহ দলে মোট ১০জন মিডফিল্ডার থাকলেও মধ্যমাঠই যে দলকে ভাসাবে/ডোবাবে, তা ইয়ুর্গেন ক্লপ জানেন। দলবদল বাজারে বরাবরই চৌকসতার পরিচয় দেওয়া লিভারপুল এবার একটু ব্যাকফুটে রয়েছে কেইটা-চ্যাম্বারলিনের মতো ইনজুরি-প্রোন খেলোয়াড়দের বিক্রি না করায়, এবং মিলনার-হেন্ডারসনের মতো বয়স্কদের সাইডলাইন না করায়। যে কারণে মৌসুমটা খুবই বাজেভাবে শুরু করতে হয়েছে মার্সিসাইডের দলটিকে। তবে কামব্যাকে ওস্তাদ ক্লপের শিষ্যরা প্রাথমিক বাধা পেরিয়ে আবারও সব শিরোপার জন্য লড়াই করবে, সেটিই এখন ভক্তদের প্রত্যাশা। 

    উল্লেখযোগ্য দলবদল

    আগমন: ডারউইন নুনেজ , ফাবিও কারভালিও, ক্যালভিন রামসি, আর্থুর মেলো।

    প্রস্থান: সাদিও মানে, তাকুমি মিনামিনো, নিকো উইলিয়ামস, দিভক অরিগি। 

    নেট খরচ: -১০ মিলিয়ন ইউরো।

     

    চেলসি 

    রোমান আব্রামোভিচের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চেলসির নতুন মালিক টড বোয়েহলিও প্রথম উইন্ডোতেই দেদারে খরচ করেছেন। ক্লাবে স্পোর্টিং ও ট্যাকনিক্যাল ডিরেক্টরকে বরখাস্ত করায় গ্রীষ্মের শুরুতে তাদের ভুগতে হয়েছে। ভুগতে হয়েছে বার্সেলোনার হাতেও। তবে শেষপর্যন্ত নয়জন নতুন সাইনিং নিয়ে উইন্ডো শেষ করেছে তারা। এই নতুনদের নিয়ে টমাস টুখেল মাঠে ফলাফল বের করতে পারেন কি না, সেটিই এখন দেখার পালা। 

    উল্লেখযোগ্য দলবদল

    আগমন: রাহিম স্টার্লিং, কালিদু কুলিবালি, কার্নি চুকুমেকা, ওয়েসলি ফোফানা, মার্ক কুকুরেয়া, পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং। 

    প্রস্থান: অ্যান্তনিয়ো রুডিগার, আন্দ্রেস ক্রিশ্চেনসন, রোমেলু লুকাকু, ড্যানি ড্রিংকওয়াটার। 

    নেট খরচ: -২২৭ মিলিয়ন ইউরো। 

     

    আর্সেনাল

    গত দুই মৌসুমে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে আর্সেনাল। মালিকপক্ষ ক্রঙ্কি পরিবার যেভাবে তরুণ ম্যানেজার মিকেল আরতেতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। কেননা, আর্সেন ওয়েঙ্গার, উনাই এমেরিরা কখনোই পাননি এরকম অর্থনৈতিক সমর্থন। তবে একটি পরিপূর্ণ দল গড়তে তিন মৌসুম সময় আরতেতাকে এবার প্রস্তুতই মনে হচ্ছে। জেসুস, মার্টিনেল্লিদের নিয়ে ইতোমধ্যে দুর্দান্তভাবে মৌসুম শুরু করেছে গানাররা। পাঁচ বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-খরা কাটিয়ে এবার বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে লন্ডনের সাদা-লাল শিবির।      

    উল্লেখযোগ্য দলবদল 

    আগমন: গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ওলেকসান্দার জিনচেঙ্কো, ফাবিও ভিয়েরা, মার্কুইনোজ।

    প্রস্থান: মাতেও গেন্দৌজি, আলেকজান্দার লাকাজেট । 

    নেট খরচ: -১০৮ মিলিয়ন ইউরো। 

     

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড 

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে এরিক টেন হাগের প্রথম কয়েক মাস মোটেও সুখকর ছিল না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রস্থান-বিতর্ক, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও আদ্রিয়ান রাবিওর মতো ট্রান্সফার টার্গেটদের নিয়ে গ্রীষ্মজুড়েই ট্রলের শিকার হতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। ব্রাইটন ও ব্রেন্টফোর্ডের কাছে হেরে মৌসুম শুরু করার পর তো চারদিকে গেল গেল রব লেগে যায়। তবে পরবর্তী ম্যাচে লিভারপুলকে হারিয়ে এরিক টেন হাগ শুধু নিজের রাজত্বের শুরুই করেননি, ওল্ড ট্রাফোর্ডকে দেখিয়েছেন নতুন ফুটবলের স্বপ্নও। সে ম্যাচের পর ড্রেসিং রুমে যোগ হয়েছে আরও দুই নতুন মুখ- কাসেমিরো ও অ্যান্টনি। এই দুই ব্রাজিলিয়ানের পিছনে ১৬০ মিলিয়ন খরচ করে ‘গ্লেজার আউট’ স্লোগানকেও আপাতত ধামাচাপা দিয়েছে ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ। তবে দলবদল বাজারে যতই খরচ করুক না কেন, মৌসুম শেষে ইউরোপা লিগের স্পটেই যদি থেকে যায় ইউনাইটেড, বলা বাহুল্য এই স্লোগান আবারও শোনা যাবে ওল্ড ট্রাফোর্ড প্রাঙ্গণে। 

    উল্লেখযোগ্য দলবদল

    আগমন: লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, অ্যান্টনি, কাসেমিরো, টাইরেল মালাসিয়া।

    প্রস্থান: এডিনসন কাভানি, পল পগবা, জেসি লিনগার্ড, নেমানিয়া মাতিচ, হুয়ান মাতা, ডিন হেন্ডারসন, আন্দ্রেস পেরেইরা। 

    নেট খরচ: -২২৬ মিলিয়ন ইউরো।

     

    টটেনহাম হটস্পার 

    যেকোনো ক্লাব যোগ দেওয়ার অ্যান্টনিও কন্তের প্রথম লক্ষ্য হয়ে থাকে নিজের দর্শন-মাফিক একটি দল তৈরি করা। তার জন্য খুবই নির্দিষ্ট ঘরানার কিছু খেলোয়াড়কে স্কাউট করেন তিনি। কন্তের পছন্দ অনুযায়ীই এবার মোট সাতটি সাইনিং করেছে স্পার্স। পেরিসিচ-বিসুমারা ইতোমধ্যে নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন মাঠে। আর সার্বিকভাবেও লন্ডনের সাদা দল পুরোদস্তুর কন্তে-সুলভ ফুটবল খেলা শুরু করেছে এই মৌসুমে। ছন্দপতন না হলে পাঁচ ম্যাচশেষে এখনও অপরাজিত থাকা স্পার্স এবারও শীর্ষ চারে থেকে মৌসুম শেষ করবে।  

    উল্লেখযোগ্য দলবদল 

    যারা ক্লাবে এসেছেন: রিচার্লিসন, ইউভেস বিসুমা, ডিড স্পেন্স, ক্লেমন লংলে, ইভান পেরিসিচ, ফ্রেজার ফস্টার।

    যারা ক্লাব ছেড়েছেন: স্টিভেন বারগুয়াইন, সার্জ রেগুইলন। 

    নেট খরচ: -১৩১ মিলিয়ন ইউরো।

     

    বার্সেলোনা

    অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা বার্সেলোনা এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে পুরো ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত ক্লাব হয়েও এবছর দলবদল বাজারে খরচ করেছে ১৬৮ মিলিয়ন ইউরো। দলে ভেড়ানো খেলোয়াড়দের নিবন্ধন করতে বিক্রি করেছে ক্লাবের টিভি-সত্ত্বের একটি বড় অংশ (যা ভবিষ্যতে ক্লাবকে ভোগাতে পারে অর্থনৈতিকভাবে)। বলা বাহুল্য, বড় মাপের একটা জুয়াই খেলেছেন বার্সা সভাপতি লাপোর্তা। জাভির শিষ্যরা সেটিকে কাজে লাগিয়ে এবার বড় কোনো শিরোপা জিততে পারে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। 

    উল্লেখযোগ্য দলবদল 

    যারা এলেন: রাফিনহা, রবার্ট লেভানডফস্কি, জুলস কুন্ডে, ফ্রাঙ্ক কেসি, আন্দ্রেয়াস ক্রিশ্চেনসন, হেক্টর বেলেরিন, মার্কোস অ্যালোনসো। 

    যারা গেলেন: ফিলিপ কুটিনহো, দানি আলভেস, ক্লেমেন লেংলে, ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও, অস্কার মিনগুয়েজা, নেটো, রিকি পুজ, নিকো। 

    নেট খরচ: -১১৫ মিলিয়ন ইউরো।

     

    রিয়াল মাদ্রিদ 

    অনেক জল্পনা-কল্পনার পর কিলিয়ান এমবাপেকে না পেলেও মাদ্রিদের ট্রান্সফার উইন্ডোটি ঠিক খারাপ যায়নি। তাদের লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী দলে যোগ দিয়েছেন দুজন নতুন সদস্য- রুডিগার ও সুয়ামেনি। গতবার অপেক্ষাকৃত ছোট একটি দল নিয়ে মিরাকল ঘটিয়ে ফেলা কার্লো আনচেলত্তি এতেই সন্তুষ্ট। হবেনই না কেন! মাঠের ফুটবলে গতবারের মতোই যে রেজাল্ট বের করে আনছেন মদ্রিচরা। তবে ক্লাবের শীর্ষ তারকা করিম বেনজেমা মৌসুমের কোনো পর্যায়ে চোটের কবলে পড়লে ভুগতে হতে পারে মাদ্রিদকে। 

    উল্লেখযোগ্য দলবদল 

    যারা এলেন: অ্যান্টোনিও রুডিগার, অরেলিয়েন সুয়ামেনি। 

    যারা গেলেন: ইসকো, বোরহা মায়োরাল, তাকি কুবো, লুকা ইয়োভিচ, গ্যারেথ বেল, মার্সেলো । 

    নেট খরচ: -৬২ মিলিয়ন ইউরো।