কেমন হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড?
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি আরও মাসখানেকের বেশি। তবে এখনই শুরু হয়ে গেছে দল গোছানোর তোড়জোড়। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলগুলো ইতোমধ্যে স্কোয়াডও ঘোষণা করে দিয়েছে। যদিও এখনো বাকি আছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার। বিসিবির হাতে সময় আছে আর সপ্তাহখানেক। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে কারা যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথাগত উইকেট উপমহাদেশের মতো নয়। সেখানকার কন্ডিশন ও বাউন্সি উইকেটের কথা বিবেচনায় নিয়েই স্কোয়াড ঘোষণার প্রক্রিয়া চলমান। আগামী ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর টি-টোয়েন্টি কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের অধীনে চলবে বিশেষ ক্যাম্প। সেখান থেকেই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে বিশ্বকাপের দল। কেমন হতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াড?
ওপেনার
চলতি এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। হতাশামাখা সেই টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে ছিলেন তিন ওপেনার। আনামুল হক বিজয়, পারভেজ হোসেন ইমন ও নাঈম শেখ। নাঈম শেখ প্রথম ঘোষিত স্কোয়াডে না থাকলেও, পরবর্তীতে ব্যাক আপ ওপেনার হিসেবে তাকে উইন্ডিজ থেকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বিসিবি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিজয়ের সাথে শুরু করেছিলেন তিনিই। সেখান ব্যর্থ দুজনই।
শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংস শুরু করেছিলেন। বিকল্প ভাবনায় ওপেনার হিসেবে থাকতে পারেন তারাও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লিটন দাস ফিরছেন স্কোয়াডে। ওপেনিংয়ে মিরাজ-সাব্বিরদের কাউকে দেখা যাবে কিনা, এশিয়া কাপের মতো বিশ্বকাপেও টিম ম্যানেজমেন্ট সেই পথে হাঁটবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।
ব্যাক আপ ওপেনার হিসেবে কে থাকবেন, সেটা নির্ধারিত হতে পারে শ্রীরামের তিনদিনের বিশেষ ক্যাম্পের পর। ব্যাক আপ ওপেনার হিসেবে নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্তদের থেকে কেউ একজন দলভুক্ত হতে পারেন। এই তিন বাঁহাতির মধ্যে সৌম্য দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন গত বিশ্বকাপে।
টপ ও মিডল অর্ডার
টপ অর্ডারে থাকছেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মিডল ও লেট অর্ডার সাজানো হতে পারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ইয়াসির রাব্বি ও নুরুল হাসান সোহানদের নিয়ে। ব্যাটিং অর্ডারে টিম ম্যানেজমেন্টের পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন একজন।
মুশফিকুর রহিম বিদায় বলেছেন টি-টোয়েন্টিকে। তাই উইকেটরক্ষক হিসেবে সোহানই এগিয়ে থাকবেন। নির্ভরযোগ্য গ্লাভসজোড়ার সাথে ডেথ ওভারে কার্যকরী ব্যাটিংয়ের সক্ষমতা তাকে দলভূক্ত করবে। ব্যাটিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক এশিয়া কাপেও ঝলক দেখিয়েছেন। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। সাথে আছে স্পিন খেলার দক্ষতা। সব মিলিয়ে তার অস্ট্রেলিয়া যাত্রা এক প্রকার নিশ্চিত।
মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ। খেলেছেন শতাধিক টি-টোয়েন্টি। কিন্তু ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে তার সাম্প্রতিক ব্যাটিং, ব্যাটিংয়ের ধরন কিংবা ফিল্ডিং প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। তার সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে এক টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইয়াসির আলীকে। ইনজুরির জন্য দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকা এই ব্যাটারের ফিটনেসও হতে পারে দলে ডাক পাওয়ার বেঞ্চমার্ক।
অলরাউন্ডার
আদর্শ অলরাউন্ডার হিসেবে অধিনায়ক সাকিব তো আছেনই। অস্ট্রেলিয়ার উইকেট বিবেচনায় স্কোয়াড তো বটেই, একাদশে জায়গা করে নেয়ায় প্রাধান্য পেতে পারেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। যদিও এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার এশিয়া কাপে বলার মতো কিছু করতে পারেননি। তার সাথে লেট অর্ডারে শেখ মাহেদী হাসানও ব্যাট হাতে রাখতে পারেন কার্যকরী ভূমিকা। আর চার ওভারের নিশ্চয়তাও তিনি দিতে পারেন অধিনায়ককে।
বোলার
স্পিন আক্রমণের নেতৃত্বে সাকিব । ব্যাক আপ বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নাসুমকে দেখা যেতে পারে স্কোয়াডে। শেখ মাহেদীর সাথে মিরাজ-মোসাদ্দেক তো থাকছেনই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদই থাকবেন স্কোয়াডে। তৃতীয় পেসার হিসেবে দলে ঢুকতে পারেন এবাদত হোসেন, শরীফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদের মধ্যে থেকে কেউ। এবাদতের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছে এশিয়া কাপে। শরীফুল বাদ পড়েছিলেন। প্রথম ঘোষিত স্কোয়াডে হাসান মাহমুদ থাকলেও ইনজুরিতে ছিটকে যান ডানহাতি এই পেসার।
মূল স্কোয়াডে জায়গা না পেলেও স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকতে পারেন সৌম্য-শান্তদের কেউ। এবারের এশিয়া কাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে সৌম্যর সাথে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রিপন মন্ডল ও মুশফিক হাসান।
সম্ভাব্য টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড: লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার/ নাঈম শেখ/নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মাহমুদউল্লাহ/ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, এবাদত হোসেন/শরীফুল ইসলাম/হাসান মাহমুদ।
সম্ভাব্য স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটার: সৌম্য সরকার/নাঈম শেখ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রিপন মন্ডল