নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড: শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা
২০১৫ সাল থেকে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে নেমে গতবারও নিউজিল্যান্ডকে ফিরতে হয়েছে এক রাশ হতাশা নিয়ে, সেটাও তাসমান অঞ্চলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে। কেন উইলিয়ামসনে দল এবার সেই হতাশা ঝেড়ে সেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হয়ত মুদ্রার উলটো পিঠের সন্ধানে মুখিয়ে থাকবে। উইলিয়ামসন-সাউদিদের ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড এবার কেমন হয়েছে তাতেই চোখ বুলিয়ে আসা যাক।
ব্যাটার: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, গ্লেন ফিলিপস, ড্যারিল মিচেল, মার্ক চ্যাপম্যান
অল রাউন্ডার: মিচেল স্যান্টনার, জিমি নিশাম, মাইকেল ব্রেসওয়েল
উইকেটকিপার: ডেভন কনওয়ে, ফিন অ্যালেন
বোলার: টিম সাউদি (সহ অধিনায়ক), ইশ সোধি, অ্যাডাম মিলনে, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট
ব্যাটার পরিসংখ্যান
গত দুই বছরে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সফল দুই ব্যাটার হলেন মার্টিন গাপটিল ও গ্লেন ফিলিপস। তবে এই দুজন একইসাথে এই সময়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ ম্যাচ খেলেছেন।এই সময়ে গাপটিল ১৩৯.০৭ স্ট্রাইক রেটে ৫ ফিফটি সহ করেছেন ৯৬১ রান। আর ফিলিপস তো ছিলেন আরও বিধ্বংসী; ১৫২.৫৯ স্ট্রাইক রেটে ১ সেঞ্চুরি সহ করেছেন ৮২৪ রান। তবে এই দুজনের চেয়ে ১০ ম্যাচ কম খেলে১৩৮.২৮ স্ট্রাইক রেটে ৭০৮ রান করে ডেভন কনওয়ে প্রমাণ করেছেন দলের অপরিহার্য সদস্য তিনি।
বোলার পরিসংখ্যান
বল হাতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই দুই বছরে আলো ছড়িয়েছেন ইশ সোধি। ৭.৯৭ ইকোনমি রেটে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই দুই বছরে বেশিরভাগ সময়ের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা টিম সাউদি ৭.৬৭ স্ট্রাইক রেটে নিয়েছেন দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসনরা এই সময়ে খেলেছেন ১৯ ও ১৩ ম্যাচ; উইকেট পেয়েছেন যথাক্রমে ২৪টি ও ১৮টি। দলের পক্ষে তাই এই সময়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন শেষ দুই সিরিজে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা মিচেল স্যান্টনার; ৬.৮৬ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ২৬ উইকেট।
দলীয় পরিসংখ্যান
পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড গত দুই বছরে তুলেছে গড়ে ২৯.১২ রান। গড় স্ট্রাইক রেট ১২০.১৩ এবং রান রেট ৭.৫৪ প্রমাণ করে নিউজিল্যান্ডের পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করার ক্ষমতা। তবে গত বিশ্বকাপে সেই রান রেট নেমে দাঁড়িয়েছিল ৭-এ।
ডেথ ওভারে নিউজিল্যান্ড গত বিশ্বকাপে ছিল দারুণ; সেমি-ফাইনালে মিচেল, নিশামদের ব্যাটিং ইংল্যান্ড ভক্তদের অনেক দিন হয়ত কাঁদাবে। গত বিশ্বকাপে তারা ডেথ ওভারে গড়ে ১১.২৯ রান তুলেছে, যা আসরে ছিল ৪র্থ সর্বোচ্চ।
১৫ উইকেট নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে দলের সবচেয়ে সফল বোলার টিম সাউদি। ৯টি ও ৮টি উইকেট নিয়ে এরপরেই আছেন যথাক্রমে লকি ও বোল্ট। পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণের জুড়ি মেলা ভার। বোলিং ওপেন না করলেও লকি এদের মাঝে আলাদা করে নজর কাড়ার মতই। পাওয়ারপ্লেতে দুই বছরে তার ইকোনমি ছিল মোটে ৬; গড়ও মাত্র ১২.৬৬! পাওয়ারপ্লেতে যে নিউজিল্যান্ড বোলিং দল হিসেবে অন্যতম সেরা তার প্রমাণ তারা রেখেছিল গত বিশ্বকাপেই; পাওয়ারপ্লেতে তাদের ইকোনমি ছিল মোটে ৬.০৭, যা ছিল টুর্নামেন্টের ৩য় সেরা।
পাওয়ারপ্লের মত ডেথ ওভারেও ১১ উইকেট নিয়ে দলের সবচেয়ে সফল বোলার সাউদি। তবে ৭টি করে উইকেট পাওয়া বোল্ট ও নিশামের মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় বোল্টের কথা। ডেথ ওভারে এই সময়ে তার ইকোনমি ছিল মোটে ৭.৮! গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডেথ ওভারে নিউজিল্যান্ডের ইকোনমি ছিল ৯.২১, যা ছিল টুর্নামেন্টের ৫ম সেরা।
শক্তি ও দুর্বলতা
নিউজিল্যান্ড দলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের পেস আক্রমণ। সাউদি-বোল্ট-ফার্গুসনদের নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ যেকোনো প্রতিপক্ষের শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সাথে স্পিন আক্রমণটাও দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। সোধি কিছুটা খরুচে হলেও উইকেট পান নিয়মিত; আর রান আটকানোর কাজটা দারুণভাবে করেন স্যান্টনার ও ব্রেসওয়েল।
নিউজিল্যান্ডের মুল সমস্যার জায়গা হয়ে দাঁড়াতে পারে তাদের টপ অর্ডার ব্যাটিং। ফিলিপস, মিচেল, নিশাম, ব্রেসওয়েলদের নিয়ে গড়া মিডল অর্ডার যথেষ্ট শক্ত। মিচেল ও ফিলিপসের সাম্প্রতিক ফর্মও দুর্দান্ত। তবে তাদের রান তোলার জন্য টপ অর্ডারে ভাল শুরু জরুরী। গাপটিল অনেকটাই ‘হিট অর মিস’ প্রথায় হাঁটছেন। চিন্তার জায়গা হল কেন উইলিয়ামসনের ফর্ম, যথেষ্ট ম্যাচের অভাব। লম্বা ইনজুরি থেকে ফিরে যথেষ্ট ম্যাচ না খেলা কনওয়েকে নিয়েও চিন্তার জায়গাটা একই। তবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ফিন অ্যালেন, মার্ক চ্যাপম্যানরা রয়েছেন দারুণ ফর্মে। স্কোয়াডে রদবদলের দিকে নিউজিল্যান্ডকে তাই বিশেষ নজর দিতে হতে পারে।
এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন মাইকেল ব্রেসওয়েল ও জিমি নিশাম। সাম্প্রতিক ইউরোপ সফরে তো ব্রেসওয়েল হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। আর নিশাম বরাবরই ডেথ ব্যাতিং, বোলিং দুই জায়গায় সফল। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দুইজনের ক্ষণিকের ঝড় বদলে দিতে পারে ম্যাচের গতিপথ।