ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড পর্যালোচনা: শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা
ওয়ানডে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড শেষ টি-টোয়েন্টি শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল সেই ২০১০ সালে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দোর্দণ্ড প্রতাপে গ্রুপ পর্ব পার করে ইংল্যান্ড শিরোপা জয়ের হুঙ্কার দিয়েই সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের দারুণ রানতাড়ার কাছে নতি স্বীকার করে ফিরেছিল রিক্ত হস্তে। বছর ঘুরে আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে; তবে বিশ্বকাপের আগে এবার হয়ত ফেভারেটের তকমাটা তাদের সাথে এবার নেই। কয়েক মাস আগেই অইন মরগান দায়িত্বে অব্যাহতি দেওয়ার পর জস বাটলার বুঝে নিয়েছেন অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী। দুর্দান্ত এক আইপিল কাটিয়ে বাটলার অবশ্য বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে থেকেই পা রেখেছেন অস্ট্রেলিয়া। শক্তিমত্তা বিবেচনায় এবারের ইংল্যান্ড স্কোয়াড কেমন হয়েছে তারই একটা পর্যালোচনা করা যাক এই প্রতিবেদনে।
ব্যাটার: হ্যারি ব্রুক, ডাভিড মালান, অ্যালেক্স হেইলস
অল রাউন্ডার: মঈন আলী, স্যাম কারান, লিয়াম লিভিংস্টোন, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস
উইকেটকিপার: জস বাটলার (অধিনায়ক), ফিল সল্ট
বোলার: ক্রিস জর্ডান, ডেভিড উইলি, মার্ক উড, রিস টপলি
স্ট্যান্ডবাই: লিয়াম ডসন, রিচার্ড গ্লিসন, টিমাল মিলস
ব্যাটিং পরিসংখ্যান
গত দুই বছরে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ডাভিড মালান। সাবেক এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার এই সময়েদলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩টি ম্যাচ খেলে ১৩১.৭৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৯০৫ রান। আইপিএলে রেকর্ড গড়া এক মৌসুম কাটানো জস বাটলার দেশের জার্সি গায়েও ছিলেন দুর্দান্ত। ১৫১.০৭ স্ট্রাইক রেটে একটি সেঞ্চুরি সহ ২৪ ম্যাচে তিনি করেছেন ৮৪০ রান। তবে এই সময়ে দলের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করা জেসন রয় এবার স্কোয়াডে নেই শেষ কয়েক মাসের পড়তি ফর্মের কারণে।
বোলিং পরিসংখ্যান
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ ম্যাচ খেলে গত দুই বছরে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আদিল রশিদ; ৭.৩২ ইকোনমি রেটে তিনি নিয়েছেন ৪০ উইকেট। সমান ২৯ ম্যাচ খেলে দলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ক্রিস জর্ডান ও মঈন আলি; যথাক্রমে ৮.৬৮ ইকোনমি রেটে ২৭ ও ৮.২১ ইকোনমি রেটে ২৩ উইকেট নিয়েছেন এই দুজন।
পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভার বিশ্লেষণ
পাওয়ারপ্লের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের জুড়ি মেলা ভার। বাটলারের কল্যাণে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং যে প্রখর তার প্রমাণ ২০২০ সাল থেকে পাওয়ারপ্লেতে তাদের ৮.৩৩ স্ট্রাইক রেট। ডেথ ওভারেও ঝড় তলায় ইংলিশরা সমান পারদর্শী। এই সময়ে ডেথ ওভারগুলোতে তাড়া রান তুলেছে ১০.৮৭ স্ট্রাইক রেটে।
ডেথ ওভারে বোলিংয়ে অবশ্য বেশ ধুঁকতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। এই সময়ে ডেথ ওভারে তাড়া রান গুনেছে ১০.৮৭ রান রেটে। ২০২১ সাল থেকে চলমান অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগ পর্যন্ত যদিও ডেথ ওভারে ৫ম সর্বোচ্চ ৬২টি ডট বল করেছেন জর্ডান। তবে শেষের ওভারগুলোতে অন্যদের পারফর্ম্যান্স খুব একটা আশা জাগানিয়া নয়। পাওয়ারপ্লেতেও খুব একটা হিসেবী নয় ইংল্যান্ড। ২০২০ থেকে তাড়া পাওয়ারপ্লেতে রান দিয়েছে ৮.৩৩ স্ট্রাইক রেটে।
শক্তি ও দুর্বলতা
ইংল্যান্ডের মুল শক্তি তাদের ব্যাটিং। বিশেষ করে পাওয়ারপ্লেতে তাদের বিস্ফোরক শুরু এনে দেওয়ার মত রয়েছে বেশ কিছু খেলোয়াড়। ২০২০ সাল থেকে নিয়মিত ওপেনার বাটলারের পাওয়ারপ্লে স্ট্রাইক রেট ১৫২.১। দলের আরেক ওপেনার সল্টের তো এই সময়ে পাওয়ারপ্লেতে স্ট্রাইক রেট ১৬৯.২৩। এমনকি মাত্র ৪ ইনিংসে পাওয়ারপ্লেতে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে লিভিংস্টোন পাওয়ারপ্লেতে রান তুলেছেন ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে! এমনকি ডেথ ওভারেও এই সল্ট ও বাটলার দুর্ধর্ষ। এই সময়ে দুজনে যথাক্রমে ডেথ ওভারে রান তুলেছেন ২৫৩.৮৪ ও ১৯০.৬২ স্ট্রাইক রেটে। ডেথ ওভারের দিকেই সাধারণত ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া মঈনও এই সময়ে রান তুলেছেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে! ইংল্যান্ডের জন্য ২০০+ সংগ্রহ তাই সম্ভাব্য যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই।
দুর্বলতার জায়গা বলতে গেলে তাদের ডেথ ওভার বোলিং। ডেথ ওভারে তাদের সফলতম বোলার জরদানের পড়তি ফর্মের কারণে দলে জায়গা সন্দিহান। দলে জায়গা পাওয়া রিস টপলি বা স্যাম কারানরা গত দুই বছরে এই জায়গায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। টপলি, রশিদ, মঈন, উড, উইলি সবাই ২০২০ সাল থেকে ডেথ ওভারে রান গুনেছেন ৯+ ইকোনমি রেটে।
এক্স ফ্যাক্টর
এবারের টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন হেইলস, ব্রুক ও মইন। ২০২০ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যেকোনো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের (১৫৮৬) রেকর্ড হেইলসের! দলীয় ম্যানেজমেন্টের সাথে শীতল সম্পরক পেছনে ফেলে আসা হেইলস যে দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন পাকিস্তান সিরিজেও। সেই একই সিরিজে নিজেকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন টানা দ্বিতীয় বছর ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ব্রুক পাকিস্তানে গিয়ে ১৬৩.০১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন সিরিজ সর্বোচ্চ ২৩৮ রান; হয়েছেন সিরিজ সেরা। জনি বেইরস্টোর শূন্যস্থান পূরণ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে তাই মুখিয়ে থাকবেন এই তরুণ। এই সিরিজেই ইংল্যান্ডের অধিনায়কের ভূমিকায় থাকা মঈন এই ফরম্যাটে এখনও বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। ২০২০ সাল থেকে তিনি রান করেছেন ১৫৬.৫৩ স্ট্রাইক রেটে, সেই সাথে ১৯.২১ গড়ে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। এবারের বিশ্বকাপেও ব্যাটে-বলে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন মঈন।