• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের স্কোয়াড: শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের স্কোয়াড: শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা    

     গত বিশ্বকাপে গ্রুপ রাউন্ডে বাদ যাওয়ার পরে এবারের এশিয়া কাপেও সুপার ফোরে উঠতে পারেনি ভারত। দুটি বড় টুর্নামেন্টে ভরাডুবির পরেও বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি দল অবশ্য এখনও ভারত।
    আর বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে নিজেদের স্কোয়াডের শক্তিমত্তাও বাজিয়ে দেখেছে ভারত। যদিও জাসপ্রিত বুমরাহকে বিশ্বকাপে না পাওয়াতে বিশ্বকাপে বড় একটা ক্ষতিই হয়ে গিয়েছে ভারতের। তা সত্ত্বেও বিশ্বকাপের অন্যতম দাবীদারদের স্কোয়াড এবার কেমন হয়েছে সেটাই খতিয়ে দেখা যাক এই প্রতিবেদনে।


    ব্যাটার: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (সহ অধিনায়ক), ভিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব
    উইকেটকিপার: ঋষাভ পান্ট, দীনেশ কার্তিক
    অল-রাউন্ডার: হার্দিক পান্ডিয়া, দীপক হুডা, অক্ষর পাটেল, রবিচন্দ্রন আশ্বিন
    বোলার: ভুবনেশ্বর কুমার, যুঝবেন্দ্র চেহেল, হার্শাল পাটেল, আরশদীপ সিং, মোহাম্মদ শামি
    স্ট্যান্ডবাই: মোহাম্মদ সিরাজ, শ্রেয়াস আইয়ার, রবি বিষ্ণোই, শার্দুল ঠাকুর


    ব্যাটিং পরিসংখ্যান

    গত এক বছরে ভারতের সর্বোচ্চ দুই রান সংগ্রাহক একই সাথে এই ফরম্যাটে যথাক্রমে ৩য় ও ৪র্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক - সূর্যকুমার যাদব ও রোহিত শর্মা। গত এক বছরে কমপক্ষে ৫০০ রান করা খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট সূর্যকুমারের - ১৭৭.৯৯! ৩৭.৭৫ গড়ে এই সময়ে ৩০ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি সহ তিনি করেছেন ৯০৬ রান। অধিনায়ক রোহিত এই সময়ে ৩১ ম্যাচ খেলে ১৪৬.২৩ স্ট্রাইক রেট ও ৩০.১ গড়ে করেছেন ৮৭৩ রান। সহ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল এই সময়ে ১৭ ম্যাচ খেলে ১৩৫.৮৩ স্ট্রাইক রেট ও ৩৮.৬৬ গড়ে করেছেন ৫৮০ রান। তবে ভারতের পক্ষে এই সময়ে কমপক্ষে ৩০০ রান করা খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় ছিল ভিরাট কোহলির - ৪২.৫৩। এশিয়া কাপে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি পাওয়া কোহলি এই সময়ে ১৯ ম্যাচে ১৩২.৯৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন দলের পক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫৫৩ রান।

    বোলিং পরিসংখ্যান

    গত এক বছরে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বিশ্বে ছিলেন ৪র্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী - ভুবনেশ্বর কুমার। ২৮ ম্যাচ খেলে তিনি এই সময়ে ৭.২৭ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। ২৩ ম্যাচে ৯.২ ইকোনমিতে ২৬ উইকেট এবং ২০ ম্যাচে ৭.৫৩ ইকোনমিতে ২২ উইকেট নিয়ে দলের পক্ষে যথাক্রমে ২য় ও ৩য় সর্বোচ উইকেট শিকারী হার্শাল ও চেহেল। তবে এই সময়ে ১৩ ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়ে কমপক্ষে ১০ ওভার বল করার বোলারদের মধ্যে ভারতের হয়ে সবচেয়ে হিসেবী বোলার ছিলেন তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী - রবিচন্দ্রন আশ্বিন।

    পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভার বিশ্লেষণ

    ২০২১ সাল থেকে পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত রান তোলায় ভারত দেখিয়েছে দারুণ পারদর্শিতা। এই সময়ে তারা পাওয়ারপ্লেতে তাদের রান রেট ছিল ৮.২৭। ২০২১ সাল থেকে সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ পর্যন্ত পাওয়ারপ্লেতে তারা রান তুলেছে ১৪১.৯৮ স্ট্রাইক রেটে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। শুরু থেকেই মেরে খেলার পন্থা অবলম্বন করা ভারত ডেথ ওভারেও এই সময়ে ছিল দারুণ। এই সময়ে ডেথ ওভারে তাদের রান রেট ছিল ১১.৫, যা বিশ্ব ক্রিকেটেও ৩য় সর্বোচ্চ।

    পাওয়ারপ্লেতে এই সময়ে বোলিংয়ে তুলনামূলকভাবে হিসেবী ছিল ভারত; রান রেট ছিল ৭.২৬। ডেথ ওভার বোলিং গত কয়েক মাসে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর প্রমাণ মেলে ২০২১ সালের পর থেকে তাদের পরিসংখ্যানেও। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে এই সময়ে ডেথ ওভারে তাদের রান রেট ছিল সর্বোচ্চ - ১০.৪।   
     

    শক্তি ও দুর্বলতা

    ভারতের মুল শক্তি নিশ্চিতবেই তাদের ব্যাটিং; বিশেষভাবে তাদের টপ অর্ডার। পাওয়ারপ্লের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েই গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে খেলে আসা ভারতের হয়ে সঠিক সময়ে ফর্মে ফিরেছেন কোহলিও; সেই সাথে তাদের দলে রয়েছেন বিশ্বের দুই নম্বর ব্যাটার সূর্যকুমার। ডেথ ওভারেও ভারতের মাথাব্যাথার তেমন কোনও জায়গা নেই। হার্দিকের দুর্দান্ত ফর্ম, স্কোয়াডে কার্তিকের অন্তর্ভুক্তি, দীপক হুডাদের মত ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে ভারত ডেথ ওভারের চাপ সামলাতে যে যথেষ্ট সামর্থ্যবান তার প্রমাণ তারা রেখেছে বহুবার।

    ভারতের চিন্তার জায়গা বলতে গেলে তাদের ডেথ বোলিং। বুমরাহর ইনজুরিতে এই জায়গায় তৈরি হয়েছে বিশাল এক শূন্যস্থান। অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর  পাওয়ারপ্লেতে এখনও দুর্দান্ত; তবে ডেথ ওভারে আগের ধারটা নেই। এশিয়া কাপের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ১৯তম ওভারে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ভুবনেশ্বরের ডেথ ওভার শঙ্কা, বুমরাহর অনুপস্থিতি উতরে আরশদিপ সিংয়ের মত তরুণরা কেমন করবেন সেটা সময়ই বলবে। তবে এই জায়গা সন্দেহাতীতভাবে ভারতের চিন্তার খোরাক যোগাবে।

    এক্স ফ্যাক্টর

    ব্যাটে-বলে ভারতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হার্দিক। গত এক বছরে বেশিভাগ সময়ে ৫ বা তার নিচে খেলেও তিনি ছিলেন দলের ৫ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এই সময়ে ১৫১.৬৫ স্ট্রাইক রেটে ৫০৫ রান করার পাশাপাশি পুরো চার ওভার বল করার ফিটনেস ফিরে পেয়ে এশিয়া কাপ ও অন্যান্য সিরিজেও নজর কেড়েছেন তিনি। এই ফরম্যাটে তর্কসাপেক্ষে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডার নিজের দিনে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।