মানসির মুন্সিয়ানার পর ওয়াট-লিস্কের স্পিন বিষে ক্যারিবিয়ানদের নীল করে স্কটিশদের চমক
গ্রুপ পর্ব, হোবার্ট(টস-ওয়েস্ট ইন্ডিজ/বোলিং)
স্কটল্যান্ড-১৬০/৫, ২০ ওভার (মানসি ৬৬*, ম্যাকলয়েড ২৩, জোনস ২০, হোল্ডার ২/১৪, জোসেফ ২/২৮, স্মিথ ১/৩১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-১১৮, ১৮.৩ ওভার (হোল্ডার ৩৮, মে ২০, কিং ১৭, ওয়াট ৩/১২, লিস্ক ২/১৫, শরীফ ১/২৩)
ফলাফল: স্কটল্যান্ড ৪২ রানে জয়ী
গত বিশ্বকাপের ধারাবাহিকতায় এবারও চমক দিয়েই শুরু করল স্কটল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধরাশায়ী করে আরও একবার মুল পর্বের দাবী জানিয়ে অসাধারণ সূচনা করেছে তারা। জর্জ মানসির প্রথম বিশ্বকাপ ফিফটিতে লড়াকু সংগ্রহ পাওয়ার পর স্পিন জুটি মার্ক ওয়াট-মাইকেল লিস্কে ক্যারিবিয়ান দের রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়ল স্কটিশরা।
১৬১ রানের লক্ষ্যে পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে তৃতীয় ওভারেই জশ ডেভির শিকার হয়ে ১৩ বলে ২০ রানে করে ফেরেন কাইল মেয়ার্স। ব্র্যান্ডন কিং আর এভিন লুইসও এরপর উড়ন্ত সূচনার ইঙ্গিত দিলেও পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ব্র্যাডলি উইলের খাটো লেন্থের বলে ডিপ স্কয়্যার লেগে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওই দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে তোলে ৫৩ রান।
পাওয়ারপ্লের পর স্কটিশ স্পিনাররা আক্রমণে আসলেই ঘটে বিপত্তি। কোচের পাঠানো চিরকুটে চোখ বুলিয়ে বলে হাতে নিয়ে ২৩ গজ দূর থেকে বল ঢেলেই কিংয়ের স্টাম্প উপড়ে ফেললেন ওয়াট। স্কটিশরা যে তাদের পড়াশোনাটা ভালোমতই সেরে এসেছে তার প্রমাণ মিলল গুড লেংথে স্পিনারদের বল করে যাওয়াতেই। আর তাতেই কাবু হয়ে এরপর নিকোলাস পুরান ফেরেন লিস্কের কাছে স্টাম্প খুইয়ে। নিজের পরের ওভারে অস্থির হয়ে ওঠা রভম্যান পাওয়েলকেও বাউন্ডারিতে তালুবন্দি করেন ওই লিস্ক। পরের ওভারে লিষ্কের দারুণ ক্যাচ ফেরাল শামার ব্রুকসকে। লিষ্কের নিজের করা পরের ওভারে আকিল হোসেন রান আউটের শিকার হলে ওয়াট আক্রমণে এসে ফেরান জোসেফকে। ৫৩-১ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ড মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গেলো ৭৯-৮!
সেখান থেকে একাই লড়েছেন জেসন হোল্ডার। মাঝে স্মিথ ৫ রানে ফিরলে শেষ পর্যন্ত উইকেট ধরে রেখে ১৯তম ওভারে বাউন্ডারির খোঁজ করতে গিয়ে থামেন ৩৩ বলে ৩৮ রান করে, সাফিয়ান শরীফের শিকার হয়ে। সেই সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে প্রথম দেখাতেই স্কটল্যান্ড পেয়ে যায় জয়।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ হয়েছিল স্কটল্যান্ডের। মাইকেল জোনসের সাথে জুটি বেঁধে কাইল মেয়ার্সের করা ৩য় ওভার থেকে ১৬ রান নেওয়ার পরে আলজারি জোসেফের করা ৪র্থ ওভারে তো টানা তিন চারে ১৫ রান নিয়েছিলেন মানসি। দুজনের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের মাঝেই বৃষ্টির জন্য খেলা বিঘ্ন হলেও শুরু হওয়ার পরে পাওয়ারপ্লেতে স্কটল্যান্ড তুলে ফেলে ৫৪ রান। তবে বৃষ্টির ওই বাঁধাতে মনঃসংযোগ ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নিয়ে হোল্ডার পরের ওভারেই ফেরান ১৭ বলে ২০ রানে থাকা জোনসকে। নিজের পরের ওভারে এসেই ম্যাট ক্রসকেও হোল্ডার ফেরালে ইনিংস মেরামতের দিকে মন দিতে হয় স্কটিশদের।
মেরামতের পন্থা অবলম্বন করতে যাওয়ায় পাওয়ারপ্লের পরের ৬ ওভারে স্কটিশরা তুলতে পারে মোটে ৩৩ রান; বিনিময়ে হোল্ডারের দুই শিকারে পাশাপাশি ওই ১২তম ওভারে আকিলের শিকার হয়ে ১৬ রানে ফেরেন বেরিংটন। উইকেটে এসে ক্যালাম ম্যাকলয়েদ রানের চাকা সচল করার জন্য উইন্ডিজ বোলারদের ওপর চড়াও হতে গেলে ১৬তম ওভারে ওডিন স্মিথের কাছে উইকেট খুইয়ে তিনি ফেরেন ১৪ বলে ২৩ রান করে। তবে এক প্রান্ত আগলে ৪৩ বলে ঠিকই নিজের ৮ম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেয়ে যান মানসি।
ঠিক তার পরের বলেই জোসেফের কাছে স্টাম্প খুইয়ে লিস্ক ফিরলে ইনিংস সামাল দেওয়ার দায়িত্ব মানসিকেই বুঝে নিতে হয়। সেটা তিনি করলেন দারুনভাবেই। ১৮তম ওভারে আকিলকে দুই চার মেরে উইকেটে এসে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ক্রিস গ্রিভসও। তারই পরিক্রমায় শেষ ওভারে স্মিথকে মানসি ৩টি চার মেরে অপরাজিত থাকেন ৫৩ বলে ৬৬* রান করে, আর দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি।