স্পিনে কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আইরিশরা বিদায় দিল স্টার্লিং-বালবির্নি-টাকারদের নির্ভয় ব্যাটিংয়ে
গ্রুপ পর্ব, হোবার্ট(টস-ওয়েস্ট ইন্ডিজ/ব্যাটিং)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-১৪৬/৫, ২০ ওভার (কিং ৬২*, চার্লস ২৪, স্মিথ ১৯*, ডেলেনি ৩/১৬, সিমি ১/১১, ম্যাকার্থি ১/৩৩)
আয়ারল্যান্ড-১৫০/১, ১৭.৩ ওভার (স্টার্লিং ৬৬*, টাকার ৪৫*, বালবির্নি ৩৭, আকিল ১/৩৮)
ফলাফল: আয়ারল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী
প্রত্যাবর্তনের উপাখ্যানে গ্রুপে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল আয়ারল্যান্ড। খাদের কিনারা থেকে নিজেদের উদ্ধার করে সেই আয়ারল্যান্ডই সুপার ১২-তে জায়গা করে নিল দোর্দণ্ড প্রতাপে, সেটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাক লাগিয়ে। ব্র্যান্ডন কিং ইনজুরি শঙ্কা কাটিয়ে একাদশে ফিরে ৬২* রান করলেও আয়ারল্যান্ডের বোলারদের সম্মিলিত প্রচেস্টায়, বিশেষত স্পিনারদের দক্ষতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলতে পেরেছিল ১৪৬ রান। অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি-পল স্টার্লিংয়ের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটির পর লরকান টাকারের সাথে স্টার্লিংয়ের ৭৭* রানের অনবদ্য জুটিতে বাজিমাত করেছে আইরিশরা।
১৪৭ রানের লক্ষ্যে স্পিনার পেসার কাউকেই তোয়াক্কা না করে নিজেদের সহজাত খেলাটাই খেলেন দুই আইরিশ ওপেনার। পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করে দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতেই তুলে ফেলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ ৬৪ রান। ১৬ রান দিয়ে শুরু করা আকিল হোসেনকে পরে আক্রমণে ফেরানো হলে তিনিই থামান ২৩ বলে ৩৭ রান করে ছুটতে থাকা বালবির্নিকে।
৭৩ রানের জুটি ভেঙে অধিনায়কের বিদায়ের পরেও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে টাকারকে নিয়ে প্রান্ত বদলে মনোযোগ দিয়েছিলেন স্টার্লিং। ১১তম ওভারেই দুজন মিলে দলের শতরান পূর্ণ করার পরের ওভারে ৩২ বলে নিজের ফিফটি তুলে নেন স্টার্লিং। ওই ওভারেই টাকার ১৭ রানে থাকার সময় স্মিথকে ফিরতি ক্যাচ দিলেও নো বলের দরুন বেঁচে যান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৪৮ বলে ৬৬* রান করে স্টার্লিং এক প্রান্ত সামলালে ১৫ বলে হাতে রেখেই ৩৫ বলে ৪৫* রানে অপরাজিত থেকে তুলির শেষ আঁচড়টা টানেন সেই টাকারই।
এর আগে ব্যাটিংয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩য় ওভারেই ম্যাকার্থির শিকার হয়ে ফিরে যান কাইল মেয়ার্স। কার্টিস ক্যাম্ফারের করা পরের ওভারে ২ চার ও ১ ছয়ে জনসন চার্লস ১৬ রান তুলে প্রতি আক্রমণের চেষ্টা করেন। সেই চেস্টা ভন্ডুল করে পরের ওভারেই ২৪ রানে থাকার সময় তাকে ফেরান সিমি সিং। ওই দুই উইকেট খুইয়ে পাওয়ারপ্লেতে ৪১ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এভিন লুইসকে নিয়ে এরপর কিং ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলে দারুণ এক স্পেলে জুটি বেঁধে মার্ক অ্যাডেয়ার-জশুয়া লিটল চেপে ধরেন ক্যারিবিয়ানদের। হাঁসফাঁস করতে থাকা লুইসের জন্য আক্রমণে আসা লেগ স্পিনার গ্যারেথ ডেলেনি টোপ ফেললে সেই টোপ গিলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে ফেরেন লুইস। নিকোলাস পুরানকে নিয়ে এরপর ম্যাকার্থিকে ২ চার মেরে কিং শেকল ভাঙার চেষ্টা করেন। তবে আবারও বাঁহাতি সামলাতে ডেলেনিকে আক্রমণে আনা হলে প্রথম বলেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে পুরানকে ১৩ রানে ফেরান তিনি। অন্য প্রান্তে ৩৯ বলে কিং নিজের ফিফটি তুলে নিলেও নিজের শেষ ওভারে রভম্যান পাওয়েলকেও ফেরান ডেলেনি। নিজের কোটা পূর্ণ করে মাত্র ১৬ রান গুনে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে উইন্ডিজ মিডল অর্ডারকে একেবারেই মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি এই অফ স্পিনার।
ডেলেনির দুর্দান্ত স্পেল শেষ হওয়ার পরে শেষের তিন ওভারে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওডিন স্মিথকে নিয়ে শেষ তিন ওভারে ৩৪ রান তোলেন কিং। ৪৮ বলে ৬২* রান করে কিং ও ১২ বলে ১৯* করে স্মিথ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার রসদ। তবে আত্মবিশ্বাসের চুড়ায় অবস্থান করা আইরিশরা সেই সংগ্রহকে মামুলি প্রমাণ করেি বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।