• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    আগ্রাসী অ্যালেন, কান্ডারি কনওয়ের পর বল হাতে অজিদের নাভিশ্বাস তুলে নিউজিল্যান্ডের শুভসূচনা

    আগ্রাসী অ্যালেন, কান্ডারি কনওয়ের পর বল হাতে অজিদের নাভিশ্বাস তুলে নিউজিল্যান্ডের শুভসূচনা    

    সুপার ১২, সিডনি(টস-অস্ট্রেলিয়া/বোলিং)
    নিউজিল্যান্ড-২০০/৩, ২০ ওভার (কনওয়ে ৯২*, অ্যালেন ৪২, নিশাম ২৬*, হেজলউড ২/৪১, জাম্পা ১/৩৯)
    অস্ট্রেলিয়া-১১১, ১৭.১ ওভার (মাক্সওয়েল ২৮, কামিন্স ২১, মার্শ ১৬, সাউদি ৩/৬, স্যান্টনার ৩/৩১, বোল্ট ২/২৪)
    ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৮৯ রানে জয়ী

     

    ২০১১ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ শেষ জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপেও তাসমানের ওপারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল ব্ল্যাকক্যাপসদের। পাশার দান উলটে এবারের সুপার ১২ কিউইরা শুরু করল অস্ট্রেলিয়াকে বিধ্বস্ত করে। ফিন অ্যালেন-ডেভন কনওয়ের ২৬ বলে ৫৫ রানের ওপেনিং জুটিতে শুরু কনওয়ে-জিমি নিশামের ২৪ বলে ৪৮* রানের ঝড়ে শেষ; কিউইরা সেই ২০০ রানের পুঁজিতে পিষে মারল অজিদের। টিম সাউদির অভিজ্ঞতা, আর দুই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার-ইশ সোধিতে হতবিহবল অজিদের কাছে বহু প্রশ্ন রেখেই দুর্দান্ত সূচনা করেছে নিউজিল্যান্ড।


    অ্যালেনে স্তব্ধ সিডনি

    মার্টিন গাপটিলকে বসিয়ে রাখার মত সাহসী ও বিস্ময়কর সিদ্ধান্তের পর ফিন অ্যালেনকে নিজেকে প্রমাণ করার জন হয়ত বাড়তি তাড়না ছিল। তবে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ, সুপার ১২-এর ম্যাচ - চাপটাও তো তাই ছিল প্রবল। সেসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রথম ওভার থেকেই অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের পাড়ার বোলারদের মত পেটালেন অ্যালেন। স্টার্ক, কামিন্স, হেজলউড কাউকেই তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে এসে খেললেন অসাধারণ সব শট। হেজলউডের দ্বিতীয় ওভারে সেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়েই হয়েছিল তার কাল; ব্যাটারের মন পড়ে ফেলে হেজলউড দারুণ এক ইয়র্কার দিলে সেটা মিস করে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন অ্যালেন। তবে তার আগেই যে ১৬ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে বার্তা দিয়ে দিয়েছিলেন অজি বোলারদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অ্যালেনের নির্দয় ব্যাটিংয়ের দরুণ পাওয়ারপ্লেতেি ৬৫ রান তুলে বড় সংগ্রহের ভিত তৈরি করে ফেলেছিল নিউজিল্যান্ড।

    কনওয়ের কারিকুরি

    পাওয়ারপ্লেতে কনওয়ে ছিলেন দর্শক, মাঝের ওভারে মনোযোগ দিলেন প্রান্ত বদলের পাশাপাশি নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে নেওয়াতে। জাম্পাকে বেরিয়ে এসে মাঠছাড়া করে ৩৬ বলে ফিফটিও তুলে নেন তিনি। ওই ওভারেই সমানসংখ্যক বলে ২৩ রান করে উইলিয়ামসন ফিরলে ভাল শুরু ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল কিউইদের মনে। সেসব সম্ভাবনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে গিয়ার পাল্টালেন কনওয়ে। মাঝে ফিলিপসের ক্ষণস্থায়ী ইনিংসের পর নিশাম এসেও যোগ দেন বাউন্ডারি উৎসবে। দুজনে মিলে শেষ ৪ ওভারে তোলেন ৪৮ রান। নিশাম ১৩ বলে ২৬* রান করলে অন্য প্রান্তে সেঞ্চুরির আশায় থাকা কনওয়েকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দলের বড় সংরহেই। এই অস্ট্রেলিয়ার সাথেই ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা ৯৯ রানের ইনিংস। এবারও প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৫৮ বলে ৯২* রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাকে। তবে ৭ চার ও ২ ছয়ে সাজানো ইনিংসে ব্যাট ক্যারি করে দলকে যে ২০০ রানের সংগ্রহ এনে দিতে তিনি রেখেছেন অগ্রণী ভুমিকা।

    পাওয়ারপ্লে নায়ক সাউদি

    ২০১ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকাময়। সাউদির বল ওয়ার্নারের প্যাডে লেগে পেছনে চলে যাওয়া ব্যাট ছুঁয়ে উপড়ে ফেলল বেইলস। সেখান থেকে ফিঞ্চ বেরিয়ে এসে বোল্টকে ১০২ মিটার ছয় মেরে অবিচল থাকার চেষ্টা করেন; মার্শও উইকেটে এসে আগ্রাসী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। স্যান্টনারের বলে জায়গা বানিয়ে এক্সট্রা কাভারে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিঞ্চ ফেরার পর সাউদিকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মার্শও। অস্ট্রেলিয়ার চেষ্টা ভন্ডুল করতে অভিজ্ঞ সাউদি ছিলেন নেপথ্যে; ২ ওভারে মাত্র ৬ রান গুনে হানেন জোড়া আঘাত। পাওয়ারপ্লেতে গুরুত্বপূর্ণ তিনজনকে হারিয়ে মাত্র ৩৭ রান তুলতে পারা অজিরা ছিটকে যায় ওখানেই।

    স্পিন জুটিতে পথভ্রষ্ট অজিরা

    পাওয়ারপ্লের ধাক্কা সামলে স্টোইনিস-ম্যাক্সওয়েল জুটি চেষ্টা করছিলেন ইনিংস মেরামতের। তবে পাহাড়সম লক্ষ্যে সেই সুযোগ যে নেই তা বলাই বাহুল্য। স্টোইনিস শেকল ছিড়ে বের হতে গিয়ে স্যান্টনারকে মাঠছাড়া করতে গেলে বাঁধ সাধেন ‘ফ্লাইং ফিলিপস’। বাউন্ডারিতে রীতিমত উড়ন্ত এক ক্যাচে স্টোইনিসকে বাকরুদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়ার আশার পারদে পেরেক ঠুকে দেন। সেই স্যান্টনারকে প্রতি আক্রমণের চেষ্টা করলে একটি ছয় মারার পরের বলেই ফিরতে হয় টিম ডেভিডকে। ফার্গুসনের আগুনে বলে এরপর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ওয়েড ফেরার পর একমাত্র আশার আলো হয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। এর আগে সোধিকে সুইচ হিটে ছয় মারার পর সোধি ঠিকই নেন প্রতিশোধ। ২০ বলে ২৮ রানে থাকা ম্যাক্সওয়েলকে নিজের শেষ ওভারে তিনি ফেরালে এরপর আনুষ্ঠানিকতা সারেন বোল্ট-সাউদি জুটি।