মেলবোর্নে যে কারণে কোহলির চোখে জল
ভিরাট কোহলি কখনোই আবেগটা ধরে রাখার খুব একটা চেষ্টা করেন না। যখন ফিল্ডিং করেন, প্রতিটা আউটেই উদযাপনে ফেটে পড়েন। যখন ব্যাট করেন, চার বা ছয় মারলে সেটাও উদযাপন করেন। কিন্তু কোহলির চোখে কান্না? সেই দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। ধারাভাষ্যকার হর্শ ভোগলে যখন বলেন, এই প্রথম তিনি কোহলির চোখে অশ্রু দেখলেন। মেলবোর্নের ৯০ হাজার দর্শক নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করতেই পারেন।
একটা সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা ছিল বহুদিনের। সেই ২০১৯ সালের পর তিন বছর কেটে গেছে, দুই অংকের আর দেখা পাননি। সেই ফাঁড়াটা কেটেছিল তিন বছর পর গত আগস্টে এশিয়া কাপে এসে। সেদিন কোহলির সাথে উদযাপন করেছিল পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। কিন্তু কোহলি-স্পেশাল যেটা, সেটা তা ছিল না। যখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন সামনে আর কিছু দেখা যায় ন, যখন মনে হয় সব দরজা বন্ধ হয়ে আসছে- তখন যে কোহলিকে দেখা যায় সেটা অনেক দিন দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে সেটা দেখা গেল মেলবোর্নে এসে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০ হাজার দর্শকের সামনে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। চাপ তত বড়, কোহলি তত বড়-পুরনো সত্যটা আরেকবার দেখা গেল আজ।
আজকের ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসটা অনেকের চোখে এখন কোহলির সেরা। কেউ কেউ বলবেন, টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস। কোহলি নিজে এতোদিন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ইনিংসটা সবার ওপরে রেখেছিলেন। সেদিনও রান তাড়ায় প্রায় একাই দলকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তবে আজকের ইনিংসের মহিমা শুধু ম্যাচের প্রেক্ষাপটের কারণেই সেরা নয়।
দল যখন ৩১ রানের ভেতর ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে, অনেকেই ভারতের আশা দেখেননি। এমন পরিস্থিতি থেকে কোহলি জিতিয়েছেন আগেও। শেষ ৩ ওভারে যখন ৪৮ রান দরকার, তখন ম্যাচ অনেকটাই পাকিস্তানের দিকে হেলে। রউফ, আফ্রিদি, নাসিমরা আশা দেখাচ্ছিলেন পাকিস্তানকে। সেখান থেকে প্রায় একা যেভাবে ম্যাচ করে নিলেন, সেটা কোহলি করেননি অনেক দিন। তবে আজকের ইনিংসটা আসলে অন্য মহিমা পাবে দুইটি স্পেশাল শটের কারণে। রউফের প্রায় গুড লেংথ বলকে এভাবে লং অনের ওপর দিয়ে ছয় মারলেন, সেটা কয়জন ক্রিকেটার খেলতে পারবেন তা নিয়ে অবশ্যই তর্ক করা যায়। পরের বলে এভাবে কব্জির মোচড়ে আরেকটি ছয় মারলেন, সেটাও চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। এমন শট এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোহলি অনেক দিন খেলতে পারছিলেন না। এমন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতিই আবার কোহলির সেরা বের করে আনল।
তবে কোহলির চোখের জল শুধু এ কারণেই নয়। সেঞ্চুরিবিহীন তিন বছর তার কেটেছে বিনিদ্র রজনীতে। স্বীকার করেছেন, একটা সময় মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। এটা বলার পর সাবেকদের কারও কাছ থেকে সহানুভূতি দূরে থাক, পেয়েছেন টিপ্পনী। এমনও শুনতে হয়েছে, পারফর্ম না করলে এসব নাকি কান্নার মানে নেই। কোহলি ঝিনুক হয়ে নীরবে সয়ে গেছেন। মুক্তোটা ফলিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। এমন একটা উপলক্ষে হয়তো জবাব ব্যাটেই দিতে চেয়েছিলেন। যে ব্যাট একসময় নীরব হয়ে গিয়েছিল, সেই ব্যাটে গিটারের ঝংকারটা তো স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকের সামনেই মানায়।
রাজা আসলেই সবাইরে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান...