পার্থ থ্রিলারে হতভম্ব পাকিস্তান, রাজা-ইভান্সে জিম্বাবুয়ের দুর্দান্ত জয়
সুপার ১২, পার্থ (টস- জিম্বাবুয়ে/ ব্যাটিং)
জিম্বাবুয়ে- ১৩০/৮, ২০ ওভার (উইলিয়ামস ৩১, শাদাব ৩/২৩, ওয়াসিম ৩/১৪)
পাকিস্তান- ১২৯/৮, ২০ ওভার (মাসুদ ৪৪, রাজা ৩/২৫, ইভান্স ২/২৫)
ফলঃ জিম্বাবুয়ে ১ রানে জয়ী।
ভারতের বিপক্ষে ‘খলনায়ক’ বনে যাওয়া নাওয়াজের সুযোগ ছিল ‘নায়ক’ হওয়ার। কিন্ত নাওয়াজ পারেননি, পারেনি পাকিস্তান। পাওয়ারপ্লেতে ভালো শুরুর পর ব্যাটিং ধ্বসে লড়াকু স্কোরেরই আশা মিটে যায় জিম্বাবুয়ের। কিন্ত ১৩০ রানের পুঁজি নিয়ে জিম্বাবুয়ে শুধু লড়াই-ই করেনি, পাকিস্তানের হৃদয়ে এক বিশাল ক্ষতের সৃর্ষ্টি করে দিয়েছে। গেল দুই বছরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে দুবার হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এবার আরভিন-রাজারা পেয়ে গেছেন আইসিসি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়। যে জয় পাকিস্তানের সেমিফাইনাল সম্ভাবনাকে একেবারে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দিল।
লক্ষ্যতাড়ায় অসাধারণ পাকিস্তান, আলাদা করে বলতে গেলে বাবর-রিজওয়ান। এটা বলতে তাই আপত্তির সুযোগ নেই, জিম্বাবুয়ের দেওয়া লক্ষ্যটা তাদের কাছে বাঁ হাতের খেল। কিন্ত দুই ডানহাতি ব্যাটারকে জিম্বাবুয়ে ফিরিয়ে দেয় ২৩ রানেই। এক চারে বাবর বিদায়, রিজওয়ান ১৪ রানে। পার্থের ফাস্ট পিচে রানের দেখা পেতে বেশ কষ্টই করতে হয়েছে পাকিস্তানিদের। জিম্বাবুয়ের পেসত্রয়ী শর্ট লেংথে করে সবকটি চারের মারে খেয়েছিলেন, তবু তারা পাওয়ারপ্লেতে ২৮ রানের বেশি দেননি।
৮ম ওভারে ইফতিখারও ৫ রানে ফিরে গেলে চাপ ঝেঁকে বসে পাকিস্তানের উপর। কিন্ত সেই চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকে শান মাসুদের ব্যাটে। দুর্দান্ত রানিং বিট্যুইন দ্যা উইকেটে দৌড়ের উপর রেখেছেন জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের। এগারো ওভার শেষে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৭০ রান। আরও দুই ওভার শেষে সেই প্রয়োজন নেমে এসেছিল ৪২ বলে ৫১ রানে। ১৪তম ওভারে শাদাবের ছয়ের পর ম্যাচটা সহজ সমাপ্তিরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। কিন্ত সেই ছয়ের পরে আরেক ছয় মারতে গিয়ে ১৭ রানে ফিরে যান শাদাব। পরের বলেই হায়দারও ফিরে গেলে বিপদ ঘনীভূত হয় আরও।
রাজার পরের ওভারে চাকাভার দুর্দান্ত এক স্টাম্পিংয়ে ৪৪ রানে সেট হয়ে থাকা মাসুদ ফিরে গেলে বিপদের মহাসাগরেই পড়ে যায় পাকিস্তান। ৪ ওভারে ৩২ রান যখন লাগে, তখন এনগারাভা এসে ৩ রান দেন। পরের ওভারে মুজারাবানি টপ এজে এক চার খেলেও ওভার শেষ করেন ৭ রান। দুই ওভারে ২২ রানের সমীকরণে এসে ফুল-টসে নাওয়াজের হাতে ছক্কা খেয়ে যান এনগারাভা, তবু শেষ ওভারের জন্য রাখতে পারেন ১০ রান। ইভান্সকে প্রথমে নাওয়াজের তিন ও পরে ওয়াসিমের চারের মারে হিসেব চলে আসে ৩ বলে ৩ রানে। নাওয়াজকে লেংথ বলে ডট দিয়ে পরের বলে মিড অফে ক্যাচ তুলিয়ে বিদায় করেন ইভান্স, শাহিন এসে এক রানই আনতে পারেন কেবল।
ম্যাচের আগে পাকিস্তানি পেসারদের গোলা কীভাবে মোকাবেলা করবে জিম্বাবুয়েইনরা, তা নিয়ে ছিল আগ্রহ। কিন্ত শুরুতে যেভাবে জিম্বাবুয়ে খেলেছে, তাতে তাদের অপ্রস্তত মনে হয়নি মোটেও। শাহিনের প্রথম ওভারেই আলতো করে ড্রাইভে মাধেভেরে মারেন দুই চার, পরের ওভারেই নাসিমকে টানা দুই চারে স্বাগতম জানান আরভিন। দুই ওভারেই জিম্বাবুয়ে তুলে ফেলে ২৩ রান। ভালোই চলতে থাকা জিম্বাবুয়ের ইনিংসে রউফের গোলা আঘাত হানে পঞ্চম ওভারে, রউফের কুইক বাউন্সারে টপ এজে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আরভিন। দুই বল হতে না হতেই আরভিনের সমান ১৯ রানে তার ওপেনিং সঙ্গী মাধেভেরেও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে পাওয়ারপ্লেতে তুলে ৪৭ রান। শাহিনকে প্রথম ওভারের পরে বাবর আনেন পাওয়ারপ্লে শেষে। শাহিন-শাদাব মিলে এরপর চেপে ধরেন জিম্বাবুয়েকে। শাহিন দুই ওভারে ৯ রান দিয়ে একটা সুযোগও তৈরি করেন। কিন্ত ৯ রানে থাকা উইলিয়ামসের দেওয়া সহজ ক্যাচ ইফতিখারের হাত ফসকে যায়। জীবন পেয়ে দেখেশুনে খেলে উইলিয়ামস যখন আক্রমণের রুপ ধরতে যান, শাদাবের বলে বোল্ড হয়ে ৩১ বলে ২৮ রানেই থেমে যেতে হয় তাকে। রাজার সাথে মিলে এর আগের ১০ বলে ১৯ রান এনে ফেলেছিলেন, জিম্বাবুয়ের চোখে তখন লড়াকু স্কোরই ভাসছিলো। ৬ বলের ব্যবধানেই এরপর সেই চোখে অন্ধকার দেখে জিম্বাবুয়ে। স্কোরে কোন রান না লিখিয়েই জিম্বাবুয়ের চার ব্যাটসম্যান চলে যান প্যাভিলিয়নে।
১৪তম ওভারে উইলিয়ামসের আউট হওয়ার পরের বলেই চাকাভা ফিরে যান স্লিপে বাবরের দুর্দান্ত ক্যাচে। ওয়াসিমের পরের ওভারের চার বলেই আরও দুজন আউট। জঙ্গুয়ে প্রথম বলেই বোল্ড হওয়ার আগে প্রথম রাউন্ডের সেরা খেলোয়াড় সিকান্দার রাজারও প্যাভিলিয়নে ফেরা সারা। রাজাকে এদিন পেসে বেশ ভুগিয়েছেন রউফ আর ওয়াসিম, জিম্বাবুয়ে তাদের ভরসা থেকে তাই পেয়েছে ১৬ বলে মাত্র ৯ রান। ৯৫/৩ থেকে মূহুর্তেই ৯৫/৭ স্কোরে চলে যাওয়া জিম্বাবুয়ের ইনিংস এরপর টেনে নিয়েছেন বার্ল ও ইভান্স। ১৯ রানের পর সেই ইভান্সের বলেই জিম্বাবুয়ে পেয়ে গেছে ঐতিহাসিক এক জয়