শান্ত-তাসকিন-মোস্তাফিজে্র পর 'অভূতপূর্ব' ব্রিসবেন-নাটকে বাংলাদেশের জয়
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫০/৭ (শান্ত ৭১, আফিফ ২৯, সাকিব ২৩; মুজারাবানি ২/১৩, এনগারভা ২/২৪)
জিম্বাবুয়ে ১৪৭/৮ (উইলিয়ামস ৬৪; তাসকিন ৩/১৯, মোস্তাফিজ ২/১৫)
ফলঃ বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী
প্রায় গযারান্টি দিয়ে বলা যায়, এরকম কিছু আপনি কখনো দেখেননি। বাংলাদেশ জয় পেয়ে গেছে, মাঠে উদযাপনও করে ফেলেছে। জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান মাঠ ছেড়ে চলে গেছে। এমন সময় বড় স্ক্রিনে লেখা উঠল নো বল। কেন? কারণ মোসাদ্দেকের বলে স্টাম্পিং করার সময় নুরুল হাসান সোহান তার গ্লাভস স্টাম্পসের সামনে নিয়ে এসেছিলেন। যে কারণে এটি নো বল। আবার ফ্রি হিট।
না, নাটক আর হয়নি। শেষ বলে তারপরও চার দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের। ব্লেসিং মুজারাবানি আবারও বলটা লাগাতে পারলেন না। এবার সোহান স্টাম্পি ভেঙে দিলেন। বাংলাদেশ পেল ৩ রানের জয়। অনেক দিন মনে রাখার মতো জয়। স্মরণীয় জয়।
নানা কারণে এই ম্যাচটা বাংলাদেশের কাছে ছিল প্রায় বিশ্বকাপের নকআউটের মতো। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারার পর পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে। জিম্বাবুয়ের সাথে সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে হার, তার ওপর জিম্বাবুয়ের আগের ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে জয়- এই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য ছিল কিছুটা যুদ্ধই। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য তো বটেই। সেই যুদ্ধে যে এভাবে জিততে হবে কে ভেবেছিল?
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে প্রায় জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন শন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্ল। বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ উইলিয়ামস চার মেরে মেরে ম্যাচটা নিজেদের পকেটে নিয়ে আসছিলেন। হাসান মাহমুদের বলে দুই চার মেরে ম্যাচের পাল্লা হেলে গেল জিম্বাবুয়ের দিকে। তখন শেষ ২ ওভারে দরকার ২৫ রান, তার চেয়েও বড় কথা উইলিয়ামস ছিলেন ক্রিজে।
পরের ওভারে সাকিব এলেন। তৃতীয় বলে উইলিয়ামস একটা চারও মারলেন। কিন্তু এরপরের বলই হয়ে রইল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলে উইলিয়ামস, সাকিব দুর্দান্ত এক দৌড়ের পর তার চেয়েও দারুণ এক থ্রোতে ভেঙে দিলেন স্টাম্প। সেটাই হয়ে গেল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
কিন্তু নাটক আসলে শুরু। শেষ ওভারে দ্বিতীয় বলে ইভান্সের আউটের পর ম্যাচ আবার বাংলাদেশের দিকে। এরপরের বলে হলো চার লেগ বাই থেকে। ৩ বলে দরকার ১১। কিন্তু পরের বলটা ছয় মেরে দিলেন এনগারভা, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার প্রথম ছয়। পরের বলটা আবার মারতে গিয়ে হলেন স্টাম্পড। এরপরের বলে মুজারাবানির চেষ্টা, আবার নো বল নাটক। যেটা বলা হয়েছে ওপরে।
এত নাটক হয়েছে শেষ দিকে, তাসকিন আর মোস্তাফিজের বোলিং নিয়ে কথা আর হলো কই? আজও স্বপ্নের এক প্রথম স্পেলে দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন তাসকিন, প্রথমটা প্রথম ওভারেই। তবে বড় ব্রেকথ্রু দিয়েছেন দ্বিতীয় স্পেলে চাকাভাকে ফিরিয়ে। আর মোস্তাফিজ প্রথম ওভারেই পেয়েছিলেন দুই উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয়টা ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত, ফিরিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজাকে শূন্য রানে। তখন বাংলাদেশের দিকেই ম্যচ, জিম্বাবুয়ের কাজ কঠিন। কিন্তু উইলিয়ামস আর বার্ল মিলে কাজটা সহজ করে ফেলেছিলেন প্রায়।
তার আগে বাংলাদেশের ১৫০ পর্যন্ত যাওয়ার মূল কৃতিত্ব শান্তর। টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটি পেয়েছেন। সৌম্য লিটন শুরুতে ফিরে যাওয়ার পর শান্ত আর সাকিবের জুটিতে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। সাকিব আউট হয়ে গেলেও শান্ত তুলে নিয়েছেন ফিফটি। ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসটা ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ওদিক দিয়ে আফিফ ১৯ বলে ২৯ রান করলেও শেষ দিকে মোসাদ্দেক বেশি কিছু করতে না পারায় ১৫০ রানে থামতে হয় বাংলাদেশ।
কে জানত, এই রান নিয়েই এত নাটক হবে?