• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    পার্থের ঝাঁঝালো পিচে পেসারদের দিনে প্রোটিয়াদের জয় মিলার-মার্করামে

    পার্থের ঝাঁঝালো পিচে পেসারদের দিনে প্রোটিয়াদের জয় মিলার-মার্করামে    

    সুপার ১২, পার্থ (টস- ভারত/ব্যাটিং)

    ভারত- ১৩৩/৯, ২০ ওভার (সূর্যকুমার ৬৮, এনগিডি ৪/২৯, পারনেল ৩/১৫)

    দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৩৭/৫, ১৯.৪ ওভার (মিলার ৫৯*, মার্করাম ৫২, আর্শদীপ ২/২৫)

    ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী

     

    দক্ষিণ আফ্রিকানরা যদি তাদের পেস আক্রমণ নিয়ে গর্ব করে, ভারতও সেটি সামলাতে সক্ষম তাদের ব্যাটারদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। ভারতের সাথে তর্কে যোগ দিতে পারে পাকিস্তানও, প্রোটিয়াদের হারের প্রয়োজনীয়তা যে ভারতের সমর্থকই বানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদের। মাঠের খেলায় কিন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পেসে পরাস্তই হয়েছে ভারতের ব্যাটাররা, একজন ছাড়া! সূর্যকুমারের ৬৮ রানের ইনিংস ভারতকে ১৩৩ রানের পুঁজি দিয়ে লড়াইয়ের সুযোগ করে দিয়েছিল। আর্শদীপ-শামিরা তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রোটিয়াদের উপর, তবে মার্করাম-মিলারের ফিফটিতে জয়টা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকারই।

    প্রোটিয়াদের ‘দুই উইকেটের ওভার’ এসেছিল চতুর্থ ওভারে, ভারতের তা এসে যায় দ্বিতীয় ওভারেই। প্রথমে আর্শদীপের আউট সুইঙ্গারে ড্রাইভে যাওয়া ডি কক স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে, রুশো এসে ইনসুইঙ্গারে এলবিডব্লিউ হয়ে।  এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ঝাঁপিয়েই পড়ে ভারত। ওপেনিংয়ে উঠে বেঁচে যাওয়া বাভুমা হাঁসফাঁশ করছিলেন রানের জন্য, পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে তিনিও আউট হয়ে গেলে প্রথম ছয় ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। শামি-হার্দিক মিলে সেই চাপের বেলুনে ফুটো হতে দেন না একটুও। রানের কথা ভুলে যাওয়া প্রোটিয়াদের টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবু মার্করাম-মিলার মিলে দশ ওভার কাটিয়ে দেন আর কোন উইকেট না খুইয়ে, তবে তখন যে তাদের আস্কিং রেটটাও নয় পাড়ি দিয়ে ফেলেছিল!

    ইনিংস ব্রেকের পরেই আক্রমণের ইঙ্গিত দেন মার্করাম-মিলার। হার্দিকের ওভারে বাই-এজে সবকিছু মিলিয়ে আসে ১৬ রান, আশ্বিনের পরের ওভারে আরও ৯ রান। শামি এসে তিন রানে ওভার শেষ করলেও আশ্বিনের পরের ওভারে মিলার-মার্করামের দুই ছয়ে এসে যায় ১৭ রান। আক্রমণে মন দিয়ে ফেলা মার্করাম আর্শদীপের ওভারেও আরেক চারে মোট আনেন ১০ রান। পাঁচ ওভারেই ৫৫ রান তুলে ফেলে মার্করাম-মিলার জুটি। তবে সেসময়ে কয়েকবার বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন মার্করাম। ইনিংসের প্রথম অর্ধে দু-দুবার রান আউটের ছুরি তার গলার পাশ দিয়ে গেছে। দ্বিতীয়ার্ধে কোহলির হাত থেকে ফসকে যায় লোপ্পা ক্যাচ, আরেকবার নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে যান। শেষমেশ ৫২ রানে যখন আউট হয়েছেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ২৪ বলে ৩৬ রান। ১৮তম ওভারে মিলার দুই ছক্কায় হিসেব আরও সহজ করে ফেলেন, শেষমেশ দুই বল বাকি রেখেই ৫৯ রান

    পার্থের ঝাঁঝালো পিচে ভারত শুরু করেছে সাবধানে। পারনেলের প্রথম ওভার মেডেন দিয়ে দেন রাহুল। পরে রাহুল-রোহিত দুজনেই ছক্কায় রানের খাতা খুলেছেন। কিন্ত কিছুটা সাবধানতার খোলস ছেড়ে বেরুতে গিয়েই আউট হয়েছেন রোহিত, এনগিডির অতিরিক্ত বাউন্সে ক্যাচ তুলে ১৫ রানে ফিরে গেছেন। অতিরিক্ত বাউন্স পুরো ইনিংসেই ভুগিয়েছে ভারতকে, সাথে যোগ করুন পার্থের পেস- দক্ষিণ আফ্রিকার পেস চতুষ্টয় হয়ে উঠেছিলো ভয়ঙ্কর। তবে তা শুধু বাকিদের জন্য, সূর্যকুমার যে তার চেনা রুপেই খেলে গেছেন!

    যদিও দলীয় ২৬ রানে ক্রিজে আসার পর শুরুতে সূর্যকেও কিছুটা নড়বড়ে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ। সেই সাথে অপর প্রান্তে একের পর এক সতীর্থের অস্বস্তিকর চিত্র তাকেও ফেলে দিয়েছিল চাপে। এনগিডি তার প্রথম ওভারে রোহিতের পর রাহুলকেও ফিরিয়ে দেন। তবে কোহলির ব্যাটে আত্মবিশ্বাস ঠিকই ফুটে উঠছিল, এনগিডিকে মারেন টানা দুই চার, কিন্ত এনগিডির ওই ওভারেই আবার মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ১২ রানেই। আক্সারের জায়গায় সুযোগ পাওয়া দীপক হুদাও তার পথ অনুসরণ করলে ৪৩ রানেই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। পঞ্চাশ পেরুনোর আগেই হার্দিকও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রাবাদার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে।

    একপাশে টিকে থাকার লক্ষ্যে খেলতে থাকেন কার্তিক, কিন্ত সূর্যকুমারের তেমন কোন ভাবনা ছিল না। তার ব্যাটে দশ ওভারে ৬০ রান তুলতে পারা ভারত লড়াকু স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। দশ ওভারের পরের পাঁচ ওভারে ভারত ৪১ রানে এনে ১৫তম ওভারে একশ পেরিয়ে যায়। কিন্ত আগের ১৪ বলে কোন আক্রমণাত্মক শট না খেলা কার্তিক ১৫তম বলে বড় শট খেলতে যান প্রথম, সেটিতেই ক্যাচ তুলে আউট! সূর্যকুমার তার মতো একপাশে খেলে গেলেও অন্যপাশে সহায়তার হাত পাননি, শেষ পর্যন্ত তারও ইনিংসের শেষ হয়ে যায় ৪০ বলে ৬৮ রানে। ভারতকে টেনেটুনে বোলাররা তাই যে স্কোরে নিয়ে যান, তা ১৩৩ এর বেশি হয়নি। তবে এই রান তাড়া করার কষ্টটাও হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিয়েছে ভারতের বোলাররা!