• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    'রশিদ-হুমকি' কাটিয়ে আফগান-জয়ের পর শ্রীলংকার দিকে তাকিয়ে অস্ট্রেলিয়া

    'রশিদ-হুমকি' কাটিয়ে আফগান-জয়ের পর শ্রীলংকার দিকে তাকিয়ে অস্ট্রেলিয়া    

    সুপার ১২, অ্যাডিলেইড (টস- আফগানিস্তান/ বোলিং)

    অস্ট্রেলিয়া- ১৬৮/৮, ২০ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ৫৪*, মার্শ ৪৫, নাভিন ৩/২১, ফারুকি ২/২৯)

    আফগানিস্তান- ১৬৪/৭, ২০ ওভার (রশিদ ৪৮, গুলবাদিন ৩৯, জাম্পা ২/২২)

    ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৪ রানে জয়ী


    রশিদের ঘরের বাইরে আরেক ঘর, অ্যাডিলেইড। অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের রশিদকে অ্যাডিলেইডও আপনই ভাবে। সেই রশিদ মোটেও হতাশ করেননি তার সমর্থকদের। তবে তিনি তাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন ব্যাট হাতেই। ৪৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আফগানিস্তানকে জয়ের দারপ্রান্তেই নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৬৮ রানের পুঁজিতে অস্ট্রেলিয়া তাই ৪ রানের বড় জয় হাসিল করতে পারেনি। এখন তারা তাকিয়ে থাকবে শ্রীলংকার দিকে। ইংলান্ডকে যদি লংকানরা হারাতে পারে, তাহলেই শুধু কপাল খুলবে অস্ট্রেলিয়ার।

    যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, এই বিশ্বকাপে জয়ের ঘরে শূন্যতা দূর করার লক্ষ্য ফুটে উঠছিল গুরবাজের ব্যাটে। হেজলউডের প্রথম ওভারেই মারেন দুই বাউন্ডারি। আক্রমণাত্মক মনোভাবে তিনি খেললেও উসমান গণি অজি পেস কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। এক অঙ্কেই উসমান ফিরে গেলেও গুরবাজ নিয়মিত বাউন্ডারি খুঁজে নিচ্ছিলেন। পাঁচ ওভারে ৪০ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে ভালোই চিন্তায় ফেলে দেওয়ার দিকে এগুচ্ছিলো গুরবাজ ও তার আফগানিস্তান। কিন্ত পাওয়ারপ্লের ফায়দা তুলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিপদ ডেকে আনেন গুরবাজ। ৬ষ্ট ওভারে রিচার্ডসনের বলে প্রথমে মিসহিটে ক্যাচ তুলে বেঁচে গেলেও দুই বলের ভিতরে আবার মারতে যান, এবার তাকে ১৭ বলে ৩০ রানে ফিরতেই হয়। 

    ইব্রাহিমের কচ্ছপ গতির ব্যাটিংয়ে আস্কিং রেট বাড়ছিল তরতর করে। তবে গুলবাদিন এসে খোলস ছেড়ে খেলতে শুরু করেন। পাওয়ারপ্লের পরের দুই ওভারে মাত্র চার রান এনেছিল আফগানিস্তান, গুলবাদিনের ব্যাটে তবু তারা দশ ওভারে ৭২ রানে পৌঁছায়। ইনিংস ব্রেকের পর আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠেন গুলবাদিন। ৮ ওভারে ৭৩ রানের সহজ সমীকরণেই খেলা নিয়ে এসেছিলেন গুলবাদিন-ইব্রাহিম মিলে। ১৮ বলে ১০ রানে থাকা ইব্রাহিম মাঝখানে কয়েকটা বাউন্ডারি খুঁজে নিলেও ১৩তম ওভারে আবার পড়েন ভোগান্তিতে। কামিন্সের ওভারে আসে মাত্র ২ রান। তারপরেও আফগানিস্তানের ভালো সুযোগ ছিল, কিন্ত এরপরেই ম্যাক্সওয়েল ম্যাজিকে যেন বদলে যায় সবকিছু! 

    গুলবাদিনকে সীমানা থেকে ছুটে এসে ডিরেক্ট হিটে ম্যাক্সওয়েল ফিরিয়ে দেন ৩৯ রানে। নাজিব এসে দ্বিতীয় বলেই মারতে গিয়ে বিদায়, নাবিরও একই হাল। ৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে হাতের মুঠোয় যে ম্যাচ করতে পারার সম্ভাবনা ছিল, সেখানেই আফগানিস্তান ছিটকে পড়ে। লড়াকু রশিদ তা মানতে নারাজ, দুর্দান্ত বাউন্ডারি হিটিং সক্ষমতা দেখিয়ে খেলা নিয়ে যান শেষ ওভারে। ২২ রানের সমীকরণে এক ছয় ও দুই চার মারলেও আফগানিস্তান ৪ রানের দুরত্বে আটকে যায়।

    নেট রানের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে অস্ট্রেলিয়ার বড় স্কোরের বিকল্প ছিল না। অজিরা তাই আগ্রাসী মনোভাবেই শুরু করে। পাওয়ারপ্লেতে দুর্দান্ত মুজিবকে ওয়ার্নার স্বাগত জানান টানা তিন চার মেরে। ওয়ার্নার ছন্দে থাকলে যা হয়, বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটে যা-ই লাগছিল তা যেন গ্যাপ খুঁজে নিচ্ছিল। অন্যপ্রান্তে এদিন তার সঙ্গী ইনজুরিতে পড়া ফিঞ্চের বদলে ছিলেন গ্রিন। গ্রিন তার দ্বিতীয় বলেই বিদায় নিলেও ওয়ার্নার-মার্শের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় উড়ন্ত সূচনা। ৬ষ্ট ওভারে পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় অজিরা, কিন্ত ওই ওভারেই দেখা দেয় সর্বনাশ। 

    বাঁহাতি ওয়ার্নার ডানহাতি হয়ে যান, নাভিন-উল-হকের স্লোয়ারে বোল্ড। ঠিক যেন কোন অফ স্পিন বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ঢুকে গেল স্টাম্পে! ডেভিডের ইনজুরিতে সুযোগ পাওয়া স্মিথও এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন ওই ওভারেই। পাওয়ারপ্লেতে ৫৪ রান এনে ফেললেও অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। উইকেটের ঘরে ৪ হয়ে যেত পারত কিছুক্ষণ পরেই। ৭ম ওভারে মার্শের সহজ ক্যাচ মিস দিয়ে দেন নাজিব। ১৯ রানে জীবন পাওয়া মার্শ শেষ পর্যন্ত গিয়ে থামেন ৪৫ রানে। তবে ১১তম ওভারেই ৪র্থ উইকেট হারিয়ে ফেললেও ম্যাক্সওয়েল-স্টোইনিস মিলে আগ্রাসী মুডেই থাকেন।

     

    ইনিংসের অর্ধেক পথে ৮৩ রানে থাকা অস্ট্রেলিয়া পরের ৫ ওভারে এনে ফেলে ৫০ রান। ১৬ ওভারে ১৪৩ রান তুলে ফেলা অস্ট্রেলিয়া তাদের কাঙ্খিত বড় স্কোরের বেশি দূরে ছিল না। কিন্ত নাভিন ও ফারুকির দুর্দান্ত বোলিং তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ চার ওভারে দুজনে মিলে দেন মাত্র ২৫ রান। নাভিনের ১২ বলে অজিরা আনতে পারে মোটে ৭ রান।

    ফারুকি তার দুই ওভারে ১৮ রান দিলেও নিখুঁত ইয়র্কারে ওয়েডকে ফিরিয়ে দেন ৬ রানেই। শেষ ওভারে বিধ্বংসী ম্যাক্সওয়েলের সামনে টানা ইয়র্কারে আট রানের বেশি দেননি। তবে ততক্ষণে ২৯ বলে ফিফটির দেখা পেয়ে যান ম্যাক্সওয়েল, ২৭ ইনিংসে যা তার প্রথম পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস। তার সে ইনিংসের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় পেয়েছে ঠিকই, তবে তা ঠিক স্বস্তি দিবে না অজিদের!