লংকান স্পিনের হুমকি সামলে হেইলস-স্টোকসের ব্যাটে সেমিতে ইংল্যান্ড
সুপার ১২, সিডনি (টস- শ্রীলংকা/ ব্যাটিং)
শ্রীলংকা- ১৪১/৮, ২০ ওভার (নিসাঙ্কা ৬৭, রশিদ ১/১৬, উড ৩/২৬)
ইংল্যান্ড- ১৪৪/৬, ১৯.৪ ওভার (হেইলস ৪৭, স্টোকস ৪২*, হাসারাঙ্গা ২/২৩, ধনঞ্জয়া ২/২৪)
ফল: ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী।
টি-টোয়েন্টিতে ঠিক চেনা রূপে দেখা যাচ্ছিল না স্টোকসকে। ব্যাটে হাতে সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সও তার সাথে বেমানান। তবুও তার ওপর কেন এত ভরসা ইংল্যান্ডের? স্টোকস আরেকবার দিলেন এই প্রশ্নের উত্তর, তাও 'জিততেই হবে' এমন ম্যাচে। সহজ সমীকরণ, শ্রীলংকার বিপক্ষে স্টোকসদের পা হড়কালেই সেমিতে উঠে যাবে অস্ট্রেলিয়া। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৩৬ বলে ৪২* রানের ইনিংস অত আহামরি কিছু হয়তো না। তবে যে পরিস্থিতিতে স্টোকসের ব্যাট কথা বলেছে, তাতে 'মহামূল্যবান; শব্দটা জুড়ে দেয়া যায় অনায়াসে।
শ্রীলংকার দুই স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-ধনঞ্জয়া ডি সিলভার স্পিন জাদুতে ১৪২ রানের লক্ষ্যই কঠিন হয়ে পড়েছিল ইংলিশদের। সেই ঝক্কি সামলে ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডকে টানা তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করেছেন স্টোকস। সিডনির রি-ইউজড উইকেটে, স্টোকসের আগে ঝড় তুলেছিলেন অ্যালেক্স হেইলস।
বাটলার-হেইলসের ওপেনিং জুটিতেই সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। বাটলার দেখেশুনে খেললেও হেইলস ছিলেন আগ্রাসী। লংকানদের এলোমেলো বোলিংয়ে পাওয়া উপহারও তারা কাজে লাগাতে ভুল করেননি। রাজিতার দুই ওভার থেকেই নিয়ে আসেন ৩২ রান। পাওয়ারপ্লে শেষে দলীয় রান ৭০! এ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ।
কিন্ত ইংল্যান্ডের পাওয়ারপ্লে ঝড়ের পরেই শুরু হয় লংকান স্পিনারদের জাদু। হাসারাঙ্গা-থিকশানা-ধনঞ্জয়া স্পিনত্রয়ীর করা টানা ৪২ বলে ইংলিশ ব্যাটাররা তুলতে পেরেছিলেন মাত্র ৩৬ রান। উইকেট হারাতে হয় তিনটি। ২৮ রানে বাটলারের ফেরার পর হেইলসও তার পথ অনুসরণ করেছেন ৪৭ রানে আউট হয়ে। ব্রুক ও লিভিংস্টোনও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন এক অঙ্কের রানেই। কিন্ত যখন মঈনও ফিরলেন ১ রানেই, তখন হয়তো লংকান সমর্থকদের মনে অঘটনের আশা জেগে গিয়েছিল। কিন্ত তখনও যে ক্রিজে ছিলেন স্টোকস!
স্টোকস কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ধীরে সুস্থে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। ওদিকে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ থেকে উঠে গিয়েছিলেন মালান। মালানের আগেই ব্যাটে পাঠানো হয় কারান ও ওকসকে। ৩ ওভারে যখন লাগে ১৫ রান, কারান ৫ বল খেলে ১ রান এনে আউট হয়ে যান। শেষ দুই ওভারে ১৩ রানের প্রয়োজনে তবু স্টোকস বাউন্ডারির প্রলোভনে না পড়ে সিঙ্গেল-ডাবলসেই মন দেন। দুই বল আগে চার মেরে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন ওকস। কিন্ত ফর্মে না থাকলেও কেন তাকে বিগ ম্যাচ প্লেয়ার বলা হয়, সেটি আরেকবার দেখিয়ে দিলেন স্টোকস। ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচটার শেষ দেখেই তবে মাঠ ছাড়েন স্টোকস।
প্রথম রাউন্ডে সাফল্যের পর মূল পর্বে এসে ইনজুরির সাথে নিসাঙ্কার ফর্মেও ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তবে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে এসে শুরুটা হয় দারুণ। কুসাল-নিসাঙ্কা মিলে পাওয়ারপ্লেতে তোলেন ৫৪ রান। কুসাল মেন্ডিস ১৮ রানে ফিরে গেলেও পাওয়ারপ্লের পরেও স্বাচ্ছন্দে খেলে যান নিসাঙ্কা।
৩৩ বলে পেয়ে যান ফিফটির দেখা। তবে লংকান ব্যাটিং ইনিংসে রানের স্রোতে বাধা হয়ে আসেন আদিল রশিদ। এই বিশ্বকাপে কিপটে বোলিং করে গেলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না রশিদ। এদিনও ইকোনমিকাল বোলিং করে যাচ্ছিলেন, উইকেটও পেয়ে যান তার শেষ ওভারে এসে। ১৬তম ওভারে নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন ৬৭ রানে। এরপরেই খেই হারিয়ে ফেলে লংকানরা!
১৩তম ওভারে শতরান পূর্ণ করেছিল শ্রীলংকা। পরের সাত ওভারের মাত্র একটিতে দশের উপরে রান আনতে পারে তারা। রাজাপাকসে শুরুতে কয়েকটা বাউন্ডারি খুঁজে নিলেও পরে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ২২ বলে ২২ রানেই থেমে গেছে তার ইনিংস। শ্রীলংকার আরেক ভরসা শানাকা টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে এসেও রানখরা কাটাতে পারেননি, ৮ বলে ৩ রানেই ফিরে গেছেন।
লংকানরা তাদের ইনিংসের শেষ ৩০ বলে আনতে পারে মাত্র ২৫ রান! উড-কারানরা দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ পাঁচ ওভারে বিদায় করেন পাঁচজনকে। ১০ ওভারে ৮০ রান ছিল যে শ্রীলংকার, ইনিংসের পরের অর্ধে মাত্র ৬১ রান এনে তারা আটকে যায় ১৪১ রানেই! আর সেই সম্বল নিয়েই খেলা শেষ ওভারে নিয়ে ইংলিশদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল শ্রীলংকা। কিন্ত শেষমেশ ইংল্যান্ডের জয়ে আগেই বিদায় নেওয়া শ্রীলংকার সাথে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও।