• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    গ্রুপ এ প্রিভিউ: নেদারল্যান্ডসের সাথে ফেবারিট সেনেগাল?

    গ্রুপ এ প্রিভিউ: নেদারল্যান্ডসের সাথে ফেবারিট সেনেগাল?    

    নেদারল্যান্ডস, সেনেগাল, ইকুয়েডর ও স্বাগতিক কাতারকে নিয়ে বিশ্বকাপের গ্রুপ এ। কেমন হয়েছে এই গ্রুপ? 

     

    নেদারল্যান্ডস 

    ২০১০ বিশ্বকাপে ফাইনাল, ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল। এরপর ২০১৮ বিশ্বকাপে আর জায়গায় পেল না। নেদারল্যান্ডসের জন্য ছিল কঠিন একটা সময় ছিল সেটি। এরপর ধীরে ধীরে তারা গুছিয়ে নিয়েছেন, দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ কোচ লুই ফন গাল। এই ফন গালই ডাচদের নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের শেষ চারে। এরপর আবার দায়িত্ব নিয়ে তার অধীনে দারুণ খেলছে ডাচরা। ফন গালের অধীনে এই দফায় কোনো ম্যাচে হারেই ডাচরা। শেষ ১০ ম্যাচে সাতটি জয়ের পাশাপাশি আছে তিনটি ড্র। 

     শক্তি

    এই ডাচ দলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের রক্ষণ। ক্যাপ্টেন ভ্যান ডাইক তো আছেনই, ডি ভ্রাই, ডি লিট, আকে, টিম্বার- ব্যাক থ্রির সবগুলো অপশনই দারুণ নেদারল্যান্ডসের। ডেঞ্জলেল ডামফাইরস হতে পারেন এবারের সেরা উইংব্যাক। মধ্যমাঠে ফ্রাংকি ডি ইয়ং হবেন বড় ভরসা। তার সাথে ডাবল প্রিভোট হিসেবে খেলতে পারেন মার্টিন ডি রুর বা বার্গুইসদের কেউ। 

    দুর্বলতা

    ডাচদের মূল চিন্তার জায়গা দলের মূল স্ট্রাইকার মেম্ফিস ডিপাইয়ের ফর্ম। ইউরোতে ভালো করেছিলেন, কিন্তু এরপর ক্লাব বদলে বার্সায় এসে এই মৌসুমে খেলতে পারেননি নিয়মিত। আক্রমণে বার্গউইনের সাথে থাকতে পারেন এই মৌসুমে ফর্মে থাকা পিএসভি উইঙ্গার কোডি গাকপো। সমস্যা হচ্ছে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা নেই বেশির ভাগ ফুটবলারের। ইউরোতেও ডাচরা ভালো শুরু করেও যেতে পারেনি বেশিদূর। 

    সেনেগাল 

    খুব বেশিদিন হয়নি আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। শিরোপা জেতার পর সেনেগালে হয়েছিল উৎসব। মানেরা হয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় বীর। বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসার পথে তারা মিশরকে হারিয়েছে আবার।  এবারের বিশ্বকাপে আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী দল মনে করা হচ্ছে তাদের। 

    শক্তি 

    সাদিও মানে এই দলের সবচেয়ে বড় তারকা, স্বাভাবিকভাবেই তার ওপর চোখ থাকবে সবার। তবে আক্রমণভাবে এমন দুজন আছেন, যারা মানের সাথে গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। ইসমাইলা সার ওয়াটফোর্ডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে নজর কেড়েছেন এর মধ্যে। আরেকজন বুলায়ে দিয়া নাম্বার নাইন হিসেবে খেলতে পারেন। এই মৌসুমে সিরি আতে ছয় গোল করে ফেলেছেন সালেরনিতানার হয়ে। মানের সাথে তার বোঝাপড়াও ভালো। 

    রক্ষণে বড় নাম চেলসির কালিদু কুলিবালি। গোলরক্ষক এদুয়ার্দ মেন্ডিও তার ক্লাব সতীর্থ। মাঝমাঠে লেস্টারের নামপালিস মেন্ডি, এভারটন ইদ্রুস গায়ে, টটেনহামের পাপা সারদের সবার আছে প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতা

    দুর্বলতা 

    সেনেগালের মূল সমস্যা হতে পারে মানের সাম্প্রতিক ইনজুরি। চোটের জন্য শুরু থেকে খেলতে পারবেন কি না তা পরিষ্কার নয় এখনো। ফুলব্যাকদের নিয়ে আছে প্রশ্ন। গোলরক্ষক মেন্ডির সাম্প্রতিক ফর্মও খুব সুবিধার নয়। 

    ইকুয়েডর

    গত কিছুদিনে বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে দেশটি, তবে অন্য কারণে। অবৈধ খেলোয়াড় মাঠে নামানোর জন্য ইকুয়েডরকে বাদ দেওয়া হতে পারে বিশ্বকাপ থেকে, উঠেছিল এমন গুঞ্জন। পেরু-চিলি সেজন্য চেষ্টাও করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিফা পরের বিশ্বকাপে বাছাইতে তিন পয়েন্ট কাটা ছাড়া আর শাস্তি দেয়নি ইকুয়েডরকে। 

    দক্ষিণ আমেরিকায় চতুর্থ হয়ে আসা ইকুয়েডর বাছাইপর্বে ভালোই করেছে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সাথেও ড্র করেছে। কোচ গুস্তাভো আলফারো এসেছে আন্টনিও ভ্যালেন্সিয়ার মতো বর্ষীয়ানদের বাদ দিয়ে ঝুঁকেছেন তারুণ্যের দিকে। 

    শক্তি 

    ইকুয়েডরের বড় শক্তি তাদের তারুণ্য। গড় বয়স ২৫, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বকাপে আসা দলগুলোর মধ্যে যা সবচেয়ে কম। দলে আছেন প্রিমিয়ার লিগের একই ক্লাব ব্রাইটনে খেলা তিন ফুটবলার- এস্তুপ্নিয়ান, ময়জেস কাসেদো ও জেরেমি সারমিয়েন্তো। কাসেদো তাদের মাঝমাঠের প্রাণ, এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু, আক্রমণে এখনো দলটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এনার ভ্যালেন্সিয়া ভরসা। এছাড়া দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তরুণ। বিশ্বকাপে প্রেসিং ফুটবলে চমকে দিতে পারে প্রতিপক্ষকে। 

    দুর্বলতা 

    ভ্যালেন্সিয়ার সেই আগের ফর্ম নেই এখন, সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে গোলস্কোরিং রেকর্ড খুব একটা ভালো নয় তাদের। 

     

    কাতার 

    বিশ্বকাপের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে কাতার। সেই সেপ্টেম্বর থেকে নিজেদের মাঠে লিগ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এরপর ইউরোপে লম্বা সময় ক্যাম্প করেছে। প্রীতি ম্যাচ খেলেছে কানাডা, চিলির সাথে। কানাডার সাথে হারলেও চিলির সাথে করেছে ড্র।

    যারা জানেন না, কাতারের বড় টুর্নামেন্টে রেকর্ডও বেশ ভালো গত কিছুদিনে। ২০১৯ এশিয়ান কাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেবছরের কোপাতেও ভালো করেছিল। ২০২১ গোল্ড কাপে তারা সেমি পর্যন্ত যায়। কোচ ফেলিক্স সানচেজ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কাতারে, এই দলটা চেনেন খুব ভালোমতোই। 

    শক্তি 

    এই কাতারের বড় শক্তি তাদের দল হিসেবে খেলার ক্ষমতা। আক্রমণে আকরাম আফিফ স্পেনে খেলেছেন, তাকে মনে করা হয় এশিয়ার সম্ভাবনাময় উইঙ্গারদের একজন। এমনকি জাভির কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছেন এই উইঙ্গার। 

    দুর্বলতা 

    অফ দ্য বলে কাতার কেমন করবে সেটা নিয় প্রশ্ন আছে। দলের বেশির ভাগের ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, সেটা নিয়েও আছে প্রশ্ন।

    গ্রুপ প্রেডিকশন: নেদারল্যান্ডস প্রথম, সেনেগাল দ্বিতীয়, ইকুয়েডর তৃতীয়, কাতার চতুর্থ।