নক আউটের টিকেট পেতে কোন দলকে কী করতে হবে?
আজ থেকে শুরু হচ্ছে গ্রুপ পর্বের শেষ রাউন্ডের খেলা। ইতোমধ্যেই শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও পর্তুগাল। তাদের সাথে বাকি আর কোন তের দল যোগ দেবে সেটার দৌড় শুরু হয়ে যাচ্ছে আজই। কাতার ও কানাডা ছাড়া বাকি সব দলের আশা রয়েছে গাণিতিক সমীকরণের বরাতে, কেউ আবার এক পা দিয়েই রেখেছে পরের রাউন্ডে। নক আউট নিশ্চিত করতে কোন দলকে কী করতে হবে সেটাই দেখে নেওয়া যাক।
গ্রুপ এ
নেদারল্যান্ডস: কাতারের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে ডাচদের জয় বা ড্র হলেই চলবে। হেরে গেলেও অবশ্য অন্য ম্যাচের ফলাফলের ভিত্তিতে সুযোগ থেকেই যাচ্ছে তাদের। সেনেগালের বিপক্ষে ইকুয়েডরের জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তখন তাদের। আর ডাচরা যদি ড্র করে আর সেনেগাল-ইকুয়েডর ম্যাচ ড্র হয় তাহলে সেনেগালের সাথে গোল ব্যবধানের হিসেব হবে, যেখানে এগিয়ে ডাচরা (নেদারল্যান্ডস ২ ও সেনেগালের ০)। ম্যাচ হারলেও তাই গোল ব্যবধানে উঠে যাবে ডাচরা।
ইকুয়েডর: জয় বা ড্র হলেই চলবে। তবে হেরে গেলে তাদের অপেক্ষা করতে হবে ডাচদের হারের জন্য। সেক্ষেত্রে সমান ২ গোল ব্যবধান থাকায় ইকুয়েডর ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কে বেশি গোল দিয়েছে সেই হিসেব দেখা হবে। সেখানেও সমতা থাকলে ওপরের নিয়মে নির্ধারিত হবে ভাগ্য।
সেনেগাল: উঠতে হলে জয়ের কোনও বিকল্প নেই তাদের।
কাতার: প্রথম দল হিসেবে বাদ পড়ে গিয়েছে স্বাগতিকরা
গ্রুপ বি
ইংল্যান্ড: জয় বা ড্রয়ের যেকোনো একটাই যথেষ্ট। তবে হারলেও থাকছে সুযোগ। অন্য ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, ওয়েলসের কাছে ৩ গোলের কম ব্যবধানে হারলেও উঠে যাবে ইংল্যান্ড, যেহেতু ইংল্যান্ডের গোল ব্যবধান ৪ ও ওয়েলসের -২। তবে ৪ গোলের ব্যবধানে হারলে হিসেব যাবে কে বেশি গোল দিয়েছে, যেখানে ৬ গোল দিয়ে ওয়েলসের ১ গোলের বিপরীতে অনেকটাই এগিয়ে ইংলিশরা।
ইরান: জয় পেলে নিশ্চিতভাবেই নক আউটের টিকেট পাবে ইরান। ড্র করলেও অন্য ম্যাচে ওয়েলস হেরে গেলে উঠে যাবে তারা। তবে তারা ড্র করলে আর ইরান হেরে গেলে হিসেব গড়াবে উপরোল্লিখিত সমীকরণে, যেখানে ওয়েলস ও ইরানের গোল ব্যবধান সমান -২।
যুক্তরাষ্ট্র: জয়ের কোনও বিকল্প নেই তাদের হাতে।
ওয়েলস: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি তাদের প্রার্থনা করতে হবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে ড্রয়ের। তাহলে সমান গোল ব্যবধানে থাকা ইরানকে ছিটকে নক আউটে উঠে যাবে বেলরা।
গ্রুপ সি
আর্জেন্টিনা: জয় পেলেই নক আউট নিশ্চিত মেসিদের। তবে ড্র করলেও থাকছে সুযোগ, যদি অন্য ম্যাচে সৌদি আরব ড্র করে তাহলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় উঠবে আর্জেন্টিনা। তবে যদি সৌদি আরব হারে ও আর্জেন্টিনা ড্র করে তাহলে ওপরের গ্রুপ টাইব্রেকারের হিসেবে গড়াবে আর্জেন্টাইনদের ভাগ্য। আর্জেন্টিনার ১ গোল ব্যবধানের বিপরীতে মেক্সিকোর গোল ব্যবধান -২ হওয়াতে সেই টাইব্রেকারে জেতেও মেক্সিকোকে জয় পেতে হবে কমপক্ষে ৩ গোল ব্যবধানে।
পোল্যান্ড: ড্র করলেই চলবে। তবে হারলেও থাকছে সুযোগ। সেক্ষেত্রে সৌদি আরব যদি জয় পায় তাহলে আর্জেন্টিনার চেয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় পোল্যান্ড চলে যাবে শেষ ষোলতে। তবে মেক্সিকো যদি জয় পায় তাহলে তাদের প্রার্থনা করতে হবে মেক্সিকোর জয়ের ব্যবধান যাতে ৪ গোল বা তার কম হয়। ব্যবধান ৫ হলে হিসেব হবে টাইব্রেকারে আর ব্যবধান ৬ হলে ভাগ্য খুলে যাবে মেক্সিকোর।
সৌদি আরব: জয় পেলেই পেয়ে যাবে নক আউটের টিকেট। ড্র করলে অন্য ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারতে হবে।
মেক্সিকো: গাণিতিক সমীকরণে মেক্সিকোর আশা টিকে থাকলেও সেটা দুরাশাই বলা যায়। জয়ের কোনও বিকল্প নেই তাদের। জয় পেলেও আর্জেন্টিনার হারের অপেক্ষা করতে হবে। আর অন্য ম্যাচ ড্র করতে হলে মেক্সিকোকে পেতে হবে বড় ব্যবধানের জয় (ওপরের হিসেবে)।
গ্রুপ ডি
ফ্রান্স: প্রথম দল হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা উঠে গিয়েছে পরের রাউন্ডে।
অস্ট্রেলিয়া: জয় হলে টিকেট নিশ্চিত, ড্র হলেও থাকছে সুযোগ। ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়া উভয়ের গোল ব্যবধান -১, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার -২। অন্য ম্যাচে ফ্রান্স জয় পেলেই ড্র করেও উঠে যাবে সকারুস।
ডেনমার্ক: জয়ের কোনও বিকল্প নেই। জয় পেলেও অন্য ম্যাচে তিউনিসিয়া তাদের চেয়ে বড় ব্যবধানে জয় পেলেই কাটা পড়বে ড্যানিশরা।
তিউনিশিয়া: জয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার হার বা ড্র আশা করতে হবে। তবে অস্ট্রেলিয়া হারলেও আবার আশা রাখতে হবে ডেনমার্ক যাতে তাদের চেয়ে বড় ব্যবধানে না জেতে।
গ্রুপ ই
স্পেন: ড্র যথেষ্ট স্প্যানিশদের জন্য। তবে হেরে গেলেও থাকছে সুযোগ যদি অন্য ম্যাচে জয়ী হয় জার্মানি। জার্মানির -১ গোল ব্যধানের বিপরীতে স্পেনের গোল ব্যবধান যে ৭!
জাপান: জয় পেলে কোনও হিসেবের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে না জাপানীদের। ড্র করলেও সুযোগ থাকবে যদি অন্য ম্যাচে জার্মানিকে রুখে দিতে পারে কোস্টারিকা। কোস্টারিকার -৬ গোল ব্যবধানের বিপরীতে জাপানের গোল ব্যবধান ০ হওয়াতে উঠে যাবে জাপান।
কোস্টারিকা: গোল ব্যবধানে অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে জয়ের কোনও বিকল্পই নেই তাদের।
জার্মানি: পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে থাকা জার্মানির জয়ের কোনও বিকল্প নেই। জয়ের পর জাপানের হারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাদের। তবে জাপান ড্র করলেও তাদের থাকছে সুযোগ। সেক্ষেত্রে তাদের জয় পেতে হবে ২ বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে। ১ গোলের ব্যবধানে জয় পেলেই চলে আসবে টাইব্রেকারের হিসেব।
গ্রুপ এফ
ক্রোয়েশিয়া: ড্রটাই যথেষ্ট গতবারের ফাইনালিস্টদের জন্য, যেহেতু বেলজিয়ামের -১ গোল ব্যবধানের বিপরীতে তাদের গোল ব্যবধান ১। হারলে তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে মরক্কোর হারের দিকে, সেটাউ তাদের সমান বা বেশি ব্যবধানের হার হতে হবে।
মরক্কো: ড্র করলেই চলবে। হারলেও থাকছে সুযোগ, সেক্ষেত্রে অন্য ম্যাচে যেকোনো এক দলের জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর অন্য ম্যাচ ড্র হলে গোল ব্যবধানে বেলজিয়ামকে ছিটকে দিয়ে হার সত্ত্বেও উঠে যাবে মরক্কো।
বেলজিয়াম: জয়ের আশাই করতে হবে গতবার ৩য় হওয়া দলটিকে। ড্র করলে তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে মরক্কোর ৪ বা বেশি গোলের ব্যবধানের হারের দিকে। ৩ গোলের ব্যবধানে মরক্কোর হার তাদের ঠেলে দিবে টাইব্রেকারের হিসেবের দিকে।
কানাডা: বাদ পড়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে।
গ্রুপ জি
ব্রাজিল: নিশ্চিত করে ফেলেছে শেষ ষোল।
সুইজারল্যান্ড: জয় পেলে টিকেট সুনিশ্চিত। ড্র করলেও থাকছে সুযোগ, সেক্ষেত্রে ব্রাজিলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। ড্র করেও ক্যামেরুনের হারে উঠে যাবে সুইসরা। তবে ক্যামেরুন যদি এরপর ১ গোলের ব্যবধানে জিতে তাহলে হিসেব গড়াবে টাইব্রেকারে যেখানে ৩ গোল নিয়ে ইতিমধ্যেই এগিয়ে ক্যামেরুন। আর ২ বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে ক্যামেরুন জিতলে কপাল পুড়বে সুইসদের।
ক্যামেরুন: জয়ের বিকল্প নেই। জয় পেলেও মেলাতে হবে ওপরের হিসেব।
সার্বিয়া: জয় তো পেতেই হবে, সেই সাথে ব্রাজিলের জয়ের জন্য প্রার্থনায় বসতে হবে সার্বিয়ানদের।
গ্রুপ এইচ
পর্তুগাল: তৃতীয় দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে পরের রাউন্ড।
ঘানা: জয় পেলেই নিশ্চিত নক আউট, তবে ড্র করলেও থাকছে আশা। অন্য ম্যাচটাও ড্র হলে শঙ্কা ছাড়াই তাও উঠে যাবে ঘানা। তবে নিজেরা ড্র করার পর যদি দক্ষিণ কোরিয়া জিতে যায় তাদের আশা রাখতে হবে যাতে জয়ের ব্যবধান যাতে একের বেশি না হয়। জয়ের ব্যবধান ১ হলেও হিসেব গড়াবে টাইব্রেকারে যেখানে আপাতত দক্ষিণ কোরিয়ার ২ গোলের বিপরীতে ৫ গোল নিয়ে এগিয়ে আছে ঘানা।
উরুগুয়ে: জয়ের তো কোনও বিকল্প নেই, উলটো জয়ের পরেও তাদের পর্তুগালের জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া যদি জিতেই যায় তাহলে উরুগুয়েকে জিততে হবে তাদের চেয়ে কমপক্ষে ২ গোল বেশি ব্যবধানে।
দ.কোরিয়া: জয়ের কোনও বিকল্প নেই, আর জয় পেলেও উপরোল্লিখিত হিসেব মেলাতে হবে তাদের। প্রথমত ঘানার ড্র বা হারের আশা তো রাখতে হবেই, সেই সাথে উরুগুয়ে জিতলেও তাদের চেয়ে কম ব্যবধানে যাতে জেতে সেই আশা করতে হবে।