কেন গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচ একই সময়ে শুরু হয়?
বিশ্বকাপের শেষ হয়ে গেছে ৩২টি ম্যাচ, বাকি গ্রুপ পর্বের শেষ পর্বের খেলা। তবে এই পর্বে একই গ্রুপের সব দলের খেলা শুরু হচ্ছে একই সময়ে। কেন ফিফা এই নিয়মটা করল? সেটা জানতে ফিরে যেতে হবে বেশ আগে।
১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়ার পর সবসময় বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো আলাদা সময়েই শুরু হতো। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে প্রথম এটার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ আসে। আর্জেন্টিনায় আয়োজিত সেই আসরে সেবার স্বাগতিক আর্জেন্টিনাকে সুবিধা করে দিতে তাদের খেলা ফেলা হয় সবার পরে। সেজন্য পরের পর্বে ওঠার জন্য কী করতে হবে, সেটা আগেই জানত তারা। সেবার পেরুর বিপক্ষে তাদের শেষ ম্যাচে জিততে হতো চার গোলের ব্যবধানে। আর্জেন্টিনা ম্যাচটা জিতেছিল ৬-০ গোলে, যে ম্যাচ নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন।
পরের বিশ্বকাপেই, মানে ১৯৮২ বিশ্বকাপে এমন একটা ঘটনা ঘটে, যে কারণে ফিফা শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ একই সময়ে শুরু করতে বাধ্য হয়। স্পেনের সেই আসরে একই গ্রুপে ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আলজেরিয়া ও চিলি। আলজেরিয়ার জন্য সেই বিশ্বকাপ ছিল স্বপ্নপূরণের মতো। উদ্বোধনী দিনেই তারা ফেবারিট পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে। কোনো ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে আফ্রিকার কোনো দলের বিশ্বকাপে সেটা ছিল প্রথম জয়, আরব কোনো দেশের বিশ্বকাপে প্রথম জয়ও বটে।
এই জয়ের পরের ম্যাচেই তারা অস্ট্রিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে বসে। যদিও চিলিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে আবার ফিরে আসে তারা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটা ছিল পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার। সমীকরণ এমন দাঁড়ায়, পশ্চিম জার্মানি যদি এক গোলের ব্যবধানে জেতে তাহলে তারা ও অস্ট্রিয়া চলে যাবে পরের পর্বে। আর যদি তিন গোলের বেশি ব্যবধানে জেতে তাহলে অস্ট্রিয়া বাদ পড়বে। আর তিন গোলে জিতলে অস্ট্রিয়া ও আলজেরিয়ার মধ্যে যে দল বেশি গোল করবে তারা যাবে। আর জার্মানি হারলে বা ড্র করলেই বাদ। সাথে এটাও উল্লেখ্য যে, তখন ম্যাচ জিতলে দুই পয়েন্ট দেওয়া হত আর ড্র হলে এক পয়েন্ট।
২৫ জুন, ১৯৮২। ম্যাচের শুরুতেই ১০ মিনিটের মাথায় একটি গোল দেয় পশ্চিম জার্মানি। এরপর পুরো সময় অস্ট্রিয়া বা পশ্চিম জার্মানি, দুই দলের কেউ আর গোল করার কোনো চেষ্টাই করেনি। বোঝাই যাচ্ছিল, দুই দল এই ফলটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছে, কারণ ম্যাচের ঐ ফলাফল (১-০) বজায় থাকলে দুই দলই চলে যাবে পরের রাউন্ডে।
এই ম্যাচের পর তুমুল সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। ''গিজনের কেলেংকারি''-খ্যাত সেই ম্যাচের পর নতুন করে নিয়ম নিয়ে ভাবে ফিফা। পরের বিশ্বকাপ থেকেই গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচ একই সময়ে চালুর সিদ্ধান্ত হয়, যে নিয়মটা চালু আছে আজও।