ইতিহাস গড়ে শেষ ষোলতে মরক্কো, বেলজিয়ামের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে সঙ্গী ক্রোয়েশিয়া
বেলজিয়াম ০:০ ক্রোয়েশিয়া
কানাডা ১:২ মরক্কো
বেলজিয়ামের অভ্যন্তরীণ কলহের খবরে সরগরম সংবাদ মাধ্যম, চায়ের কাপে খেলা দিয়ে ঝড় তুলতে না পারলেও ড্রেসিং রুমের কথা দিয়ে ঠিকই পেরেছেন বেলজিয়ানরা। ব্যতিক্রম হল না শেষ ম্যাচেও, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়টা তাদের জন্য ছিল বড্ড প্রয়োজন। সেই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে গোলশূন্য ড্র করেছে বেলজিয়াম। আর অন্য দিকে কানাডাকে মরক্কোকে হারিয়ে নিজেদের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করেছে মরক্কো, সেই সাথে বাজিয়েছে বেলজিয়ামের বিদায় ঘণ্টা। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল তারা।
ম্যাচের কোনও পর্যায়েই সেই অর্থে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি বেলজিয়াম। ক্রোয়েশিয়ার সাথে কাজটা কঠিন হবে সেটা অনুমেয়, তবে খেলার মাঝে জয়ের আকাঙ্ক্ষাটাও যেন ছিল না বললেই চলে। ১৫ মিনিটের মাথায় তো উলটো পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। কারাস্কোর বাড়িয়ে দেওয়া পায়ে হোঁচট খেয়ে ক্রামারিচ সেবার পড়ে গেলে ভিএআরের বরাতে বেঁচে যায় বেলজিয়াম। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই নড়েচড়ে বসলেও থিবো কোর্তোয়াকে বেশ কয়েকবার ত্রাতার ভুমিকা পালন করতে হয়।
কোভাচিচের বাড়িয়ে দেওয়া পাস থেকে জায়গা পেয়ে ব্রজোভিচ জোরাল শট নিলে সেবার বাধা হয়ে দাঁড়ান কোর্তোয়া। পরের মিনিটে লিভায়ার বাড়ানো পাস থেকে মড্রিচ বাঁ পায়ে শট নিলে সেবারও প্রতিহত করেন কোর্তোয়া। তবে এরপরেই যেন নড়েচড়ে বসে বেলজিয়াম। ডি ব্রুইনার বাড়ানো পাস থেকে কারাস্কো মাটি কামড়ানো শট নিলে ডিফেন্ডার ইয়ুরানোভিচ বাধা দিলে ফিরতি বল থেকে গোলের পরিষ্কার সুযোগ পেয়েও গোলপোস্টে লাগান লুকাকু। ঠিক পরের মিনিটেই আবারও বিস্ময়করভাবে গোলের সুযোগ পায়ে ঠেলে দেন লুকাকু। বাঁ প্রান্ত থেকে ডি ব্রুইনা ক্রস বাড়িয়ে লুকাকুকে একদম মাথায় বল তুলে দিয়েছিলেন। তবে ফাঁকা জায়গা থেকে সেবার তিনি পোস্টের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারেন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এসেছিল শাপমুক্তির সুযোগ। টমা মুনিয়েরের বাড়ানো নিচু ক্রসে কোনমতে পা লাগালেও সেবার বল চলে যায় গোলবার ফাঁকি দিয়ে। তবে দুই মিনিট পরে যে অবিশ্বাস্য মিস করলেন সেটা হয়ত বেলজিয়ামের কফিনে শেষ পেরেক হয়ে এসেছিল। থরগান হ্যাজার্ড বক্সে ক্রস বাড়ালে সেটা সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হন দেয়ান লভরেন, পেছনেই থাকা লুকাকু সেবার বুঝেই উঠতে পারেননি। বল তার বুকে লেগে লিভাকোভিচের মুষ্টির ভেতরে জায়গা করে নিলে বেলজিয়ামকেও দেখতে হয় বিদায়ের রাস্তা। আর ক্রোয়েশিয়ার শেষ ষোলটাও সেখানেই নিশ্চিত হয়ে যায়।
অন্য ম্যাচে মরক্কো নিজেদের কাজটা সারতে বদ্ধপরিকর ছিল শুরু থেকেই। ম্যাচের ৪ মিনিটেই বক্সের মাঝে ভাগ্যক্রমে ফাঁকায় বল পেয়ে গেলে ঠান্ডা মাথায় গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান হাকিম জিয়েশ। ম্যাচের ২৪ মিনিটে মরক্কো পেয়ে যায় নিজেদের দ্বিতীয় গোলের দেখা। ডান প্রান্ত থেকে হাকিমির বাড়ানো নিখুঁত এক ক্রসে পা লাগিয়ে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি ইউসুফ এন-নেসিরি। সেই সাথে দুটো ভিন্ন বিশ্বকাপে মরক্কোর হয়ে গোল দেওয়া প্রথম খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি।
স্বল্প সময়েই মরক্কোর দুই গোলের লিডেও মুষড়ে না পড়ে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল কানাডা। ৪২ মিনিটের মাথায় বাঁ প্রান্ত থেকে উঠে এসে আদেকুগবে বক্সে দুর্দান্ত এক ক্রস ঠেলে দিলে সেখান থেকে বিপদমুক্তির আশায় ডিফেন্ডার আগুয়েরদ পা বাড়ালে উল্টো নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কো রক্ষণে মনযোগী হয় নিজেদের লিড ধরে রাখার জন্য। কাজটা তাই কানাডার জন্য কঠিন হয়ে গেলেও হাল ছাড়েনি তারা, মরক্কোও সুযোগ বুঝে চালিয়েছে আক্রমণ। তবে শেষমেশ ওই ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মত নক আউট নিশ্চিত করে মরক্কো, সেটাও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই!