• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    বার বছরের দুঃখ ঘোচানোর সুযোগ, উরুগুয়ে ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছে ঘানা

    বার বছরের দুঃখ ঘোচানোর সুযোগ, উরুগুয়ে ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছে ঘানা    

    সালটা ২০১০, দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ে ও ঘানার ম্যাচ তখন সমতায়। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ডমিনিক আদিয়াহ’র হেড জালে জড়িয়ে যাচ্ছে, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন লুইস সুয়ারেজ। হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে দিয়ে লাল কার্ড খেলেন, তবে পেনাল্টির জন্য উরুগুয়েকে যে দ্বিতীয় সুযোগ তিনি এনে দিয়েছিলেন সেটা দুমুঠো ভরে নিয়েছিলেন গোলকিপার মুসলেরা। মাঠের বাইরে সুয়ারেজের অশ্রুসিক্ত উন্মাদনা আর পেনাল্টি মিসের পর টাইব্রেকারে হৃদয় ভঙ্গের পর আসামোয়া জিয়ানের অঝোরে কান্না এখনও ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে গেঁথে থাকার কথা। আর যাই হোক, ঘানার মানুষ ভোলেনি সেই দুঃসহ স্মৃতি।

    ১২ বছর পর একই গ্রুপে পড়ে শেষ মাচটা উরুগুয়ে ও ঘানার জন্য আরও একটি ‘ভার্চুয়াল নক আউট’ ম্যাচ হয়েই দাঁড়িয়েছে। সেবার প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নিতে পারত ঘানা, পারেনি সুয়ারেজের জন্য। সেই সুয়ারেজ এবারও আছেন উরুগুয়ে দলে। ঘানার মনে তাই হয়ত খেলবে একটাই শব্দ - ‘প্রতিশোধ’। তবে অনেকের কাছে সেই ২০১০ সালের দুঃখ মোচনের জন্য সেটাও যথেষ্ট হবে না। সাবেক ঘানা ডিফেন্ডার জন পেইন্টসিল তো সরাসরি বললেন, “ সুয়ারেজ আমাদের সাথে প্রতারণা করেছিল। আমাদের সাথে সে যা করেছিল সেটা আমি জীবনেও ভুলব না। এটা তো ফুটবলের মধ্যেই পড়ে না! গোল লাইনে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে সে একটা নিশ্চিত গোল থামিয়ে দিল, জেনে বুঝে আমাদের সেমির স্বপ্ন মাটি করে দিল। ওর মধ্যে তো কোনও পেশাদারিত্ব নেই! প্রতারক একটা!”

    তবে পেইন্টসিল সুয়ারেজের জন্য নিজের মনে ক্ষোভ পুষে রাখেননি। এমনকি ঘানার মাটিতে সুয়ারেজ কখনও পা রাখলে তাকে সাদরেই বরণ করে নিবেন তিনি, “সুয়ারেজের জন্য আমার মনে কোনও বিদ্বেষ নেই আসলে। আমি বুঝি ও যা করেছে দেশের জন্য করেছে। মানুষ তো ভুল করবেই। ১২ বছর পরেও ওর ওই কাজটা আমি মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি এই যা। বরং আমি তো দেখলাম পুরো বিশ্ববাসী আমাদের পাশেই ছিল ওই ঘটনার পরে।”  

    শুধু পেইন্টসিল নয়, তার মতই সে রাতের কথা ভুলতে পারেনি অনেক ঘানা সমর্থক। উরুগুয়েকে এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পেয়ে তারা এবার দেখছে সেই দুঃখের কিছুটা হলেও ফেরত দেওয়ার সুযোগ। জোসেফ ডডসন নামক এক সমর্থক শুধু এই ম্যাচের জন্যই ৬০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে কাতার এসেছেন, সুয়ারেজদের বিদায় দিতে পারলে তিনি থাকবেন আরও বেশ কিছুদিন।  তবে পেইন্টসিলের মত ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিষয়টা দেখতে পারছেন না ডডসন, “সময় এসেছে উরুগুয়েকে সেসব ফেরত দেওয়ার।   প্রতিশোধের একটা সুযোগ আমরা অবশেষে পেলাম। সেবার প্রথম আফ্রিকার কোনও দেশ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেল, আর সেবারই প্রথম কোনও আফ্রিকান দেশ সেমিতে খেলতে পারত। সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল ওই এক সুয়ারেজের জন্য। আমি তো ভেঙ্গে পড়েছিলাম একদম।”

    “২০১০ সালে আমরা ওদের থেকে ঢের ভাল দল ছিলাম, এবারও। সেটাই এবার প্রমাণের পালা।” আনন্দে হয়তবা ভাসবেন পেইন্টসিল, ডডসন উভয়ই। পেইন্টসিল ক্ষমা করতে পারলেও ডডসনের মত অনেকের মনে সুয়ারেজ আজীবন শত্রু হয়েই থাকবেন। সে যাই হোক, উরুগুয়ের সাথে এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ পেয়ে যারপরনাই খুশি ঘানার মানুষ। উরুগুয়েকে ১২ বছর আগের সেই দুঃখ বহগুণে ফেরত দেওয়ার এরকম এক উপলক্ষ যে তারা বহু বছর ধরেই খুঁজছেন!