পর্তুগালকে থমকে দিয়ে শেষ ষোলতে তাদেরই সঙ্গী দক্ষিণ কোরিয়া
পর্তুগাল ১:২ দক্ষিণ কোরিয়া
ঘানা ০:২ উরুগুয়ে
গ্রুপ এইচ-এর শেষ দিনের ম্যাচ শুরুর আগেই পর্তুগাল শেষ ষোল নিশ্চিত করেছিল, সম্ভাবনা টিকে ছিল বাকি তিন দলেরই। তবে আপনাকে যদি বলা হত তবে শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে আপনি হয়ত বাজি ধরতেন না। একে তো তাদের পয়েন্ট ছিল ১, তার ওপর তাদের প্রতিপক্ষ ছিল পর্তুগাল। আর যেই দলের পক্ষে বাজির দর হত সর্বোচ্চ সেই ঘানার পয়েন্ট ছিল ৩, উরুগুয়ের ১। তবে এই বিশ্বকাপ মানেই তো চমক, অঘটন। ব্যতিক্রম হল না এদিনও। ঘানাকে এক রাশ হতাশায় ডুবিয়ে তাদেরকে পয়েন্ট তালিকার শেষে পাঠিয়েছিল উরুগুয়ে ঠিকই। তবে অন্যদিকে উরুগুয়ের সব আশা পন্ড করে অসাধ্য সাধন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। পর্তুগালকে কাঁপিয়ে দিয়ে অসাধারণ এক জয় দিয়ে শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছে সেই দক্ষিণ কোরিয়া।
অথচ ম্যাচের মাত্র ৫ মিনিটেই এদিন প্রথম নামা দুজনের যুগলবন্দীতে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ডান প্রান্ত দিয়ে ডিয়োগো দালোর বাড়ানো দারুণ ক্রস থেকে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়ান রিকার্ডো হোরতা। শুরু থেকেই জয়ের জন্য বদ্ধপরিকর দক্ষিণ কোরিয়া সেই গোল ফেরত দেয় ২৭ মিনিটেই। কর্নার থেকে রোনালদোর কাছে বল চলে এলে সেটা তিনি বাইরে পাঠাতে পারেননি। সুযোগ বুঝে সেখান থেকেই কিম ইয়াং-গুয়োনের গোলে সমতা ফেরায় দক্ষিণ কোরিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটে তিন জনকে বদলি করেন পর্তুগাল কোচ সান্তোস, যার মধ্যে এদিন বেশ কিছু সুযোগ মিস করা রোনালদোও ছিলেন। সেখান থেকেই দক্ষিণ কোরিয়াি যেন উলটো বল পেয়ে বসে। ওই বদলের পরের মিনিটেই দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে মাঠে নামেন হুয়াং হি-চান, আর ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ম্যাচ যখন হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন হিউং মিন সন। দুর্দান্ত এক দৌড়ে পর্তুগালের রক্ষণ ছত্রভঙ্গ করে বল বাড়ালেন, আর সেখান থেকে ঠান্ডা মাথায় গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে জালে বল জড়ান বদলি হি-চান। অন্য ম্যাচেও তখন উরুগুয়ে এগিয়ে ২ গোলে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে গোল ব্যবধান সমান থাকা সত্ত্বেও উরুগুয়ে বাদ পড়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার মোট গোলসংখ্যা বেশি থাকার কারণে।
অন্য ম্যাচে উরুগুয়ের জয়ের কোনও বিকল্প ছিল না। তবে সেই জয় যে আসবে সেটাও আঁচ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ম্যাচের শুরুর দিকেি গোলকিপার রচেত ফাউল করে বসেন মোহাম্মেদ কুদুসকে। পেনাল্টি নিতে আসা অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ুর ওপরে যেন আসামোয়া জিয়ানের ভূত ভর করে। দুর্বল এক পেনাল্টি নিতেই রচেত সেটা প্রতিহত করলেন আর ভোজবাজির মত পালটে গেল ম্যাচের দৃশ্যপট। ২৩ মিনিটে পেনাল্টি মিস, আর ২৬ মিনিটেই উরুগুয়ে পেয়ে যায় আসরে নিজেদের প্রথম গোলের দেখা। সুয়ারেজের নিচু শট আতি-জিগি ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি বল জালে জড়ান দি আরাস্কায়েতা। ৬ মিনিট পর ওই সুয়ারেজ দারুণভাবে পাস বুঝে নিয়ে জায়গা বানিয়ে নিয়ে দি আরাস্কায়েতার দিকে বল বাড়ালে ঠাণ্ডা মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন তিনি।
ম্যাচের পুরো সময়ে এরপর আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে উরুগুয়ে। সুয়ারেজের জায়গায় কাভানি নেমেও কম চেষ্টা করেননি, ঘানাও এমনকি বেশ কয়েকবার উরুগুয়েকে ফেলেছিল হুমকির মুখে। যোগ করা সময়ে কাভানির বাড়ানো পাস থেকে সেবাস্তিয়ান কোয়াতেস পা লাগালে বার চুমু খেয়ে বল বেরিয়ে যায়, ডিফেন্ডার বাবা আরেকবার হয়ে দাঁড়ান বাঁধার দেওয়াল। গোল দেওয়ার হিসেবে তাই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় সুয়ারেজদের আর আশার দুয়ার খুলে যায় সনদের।