উদ্দীপিত সকারুসদের হতাশায় ডুবিয়ে মেসি-ম্যাজিকে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেল আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ২:১ অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচের আগে ম্যাট লেকি বলেছিলেন মেসিকে তিনি সম্মান করলেও তাকে ভয় পান না, আর যাই হোক সে তো তাদের মত মর্তের মানুষ। লেকিদের হয়ত নিজের কথার জন্য মুখ লুকাতে হবে না মাঠে নিজেদের লড়াকু মানসিকতার প্রদর্শনীর জন্য। তবে মেসি ঠিকই দেখিয়েছেন আর দশটা ফুটবলারের সাথে তাকে মেলানোটা ভুল হবে। মেসির ১০০০-তম পেশাদার ম্যাচে মেসিই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন, সেই লিডটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হুলিয়ান আলভারেজ। তবে মেসিদের ঘাম ছুটিয়ে ছেড়েছেন সকারুস। এক গোল শোধ করার পর ম্যাচের শেষ মিনিটে পেয়েছিল দারুণ সুযোগ। এমিলিয়ানো মার্টিনেজের দারুণ সেভে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আর্জেন্টিনা, আর হতাশায় ডুবতে হয় সকারুসদের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেটটাও সেই সাথে কেটে ফেলে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনা খেলে ছন্দময় ফুটবল। পাসের পর পাসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বহু প্রশ্ন তুললে তারাও সেগুলোর উত্তর দিয়েছেন সমান দক্ষতায়। আর্জেন্টিনার তাই যেন বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সেটার জন্য উপযুক্ত পাত্র তো তাদের দলে আছেনই। দারুণ কয়েকটি পাসের পর বক্সের মাঝে ঢুকে পড়া মেসির পায়ে বল পৌঁছে যায় নিকোলাস ওটামেন্ডির নড়বড়ে রিসিভ থেকে। তবে বল পেয়ে সেকেন্ডের মাঝে জালের দেখা পেয়ে যান মেসি। তিন জন ডিফেন্ডার শট প্রতিহত করতে এলেও মাটি কামড়ানো শটে তাদের পা গলেই জালে বল জড়ান ‘ট্রেডমার্ক’ মেসি শটে। নিজের হাজারতম ম্যাচে বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ৮ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৯ম গোলে সেই সাথে হলেন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।
প্রথমার্ধে মেসি-ম্যাজিকে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে তাদের রীতিমত উপহার দেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাক পাস পাওয়ার পর গোলকিপার ম্যাট রায়ানকে দুই জন মিলে চেপে ধরলে একজনকে ফাঁকি দিয়ে তিনি বের হলেও আলভারাজের পায়ে সঁপে দেন বল। ঠান্ডা মাথায় একজন ডিফেন্ডার আর গোলকিপারের পাশ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ থেকে আরও দূরে ঠেলে দেন।
সেখানেই ম্যাচ কার্যত শেষ হয়ে যেতে পারত। হারার আগে হার মানতে না চাওয়া অস্ট্রেলিয়া এরপর আর্জেন্টিনার কঠিন পরীক্ষা নেয়। হুট করেই লেফট ব্যাক বেহিচ যেন মেসিকে দেখাতে চান নিজের কলাকৌশল। দুর্দান্ত এক দৌড়ে নিজেদের অর্ধ থেকে বল টেনে আর্জেন্টিনার বক্সের কোণায় তিন জনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। নিজের দুর্বল ডান পা দিয়ে শেষ শট নিলেও এমন এক জায়গা থেকে শটটা নিয়েছিলেন যেখান থেকে গোল হওয়াটা প্রত্যাশিত। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান লিসান্দ্রো। অসাধারণ দক্ষতায় শরীর পেতে দিয়ে সেবার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান তিনি। তবে ৭৭ মিনিটে ওই বাঁ প্রান্ত থেকেই বক্সের অনেক বাইরে থেকে গুডউইন জোরাল শট নিলে এনজোর গায়ে লেগে এমিকে হতভম্ব বানিয়ে বল জালে জড়িয়ে যায়।
সেখান থেকেই ম্যাচে ফেরার ঘ্রাণ পেয়ে অস্ট্রেলিয়া আক্রমণের চেষ্টা করে। সেটার সুযোগ নিয়ে আর্জেন্টিনা পারত অস্ট্রেলিয়ার কফিনে পেরেক ঠুকে দিতে। তিনজনকে কাটিয়ে মেসি বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় থাকা বদলি লতারোকে বল ঠেলে দিলে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেও মেসির পাস থেকেই আবার গোলকিপারের গায়ে মারেন তিনি। তবে শেষ মুহূর্তে লতারোর এক শট ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করলেও দারুণ দক্ষতায় সেবার অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রাখেন রায়ান। সেখান থেকেই ম্যাচের শেষ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস পেয়ে বক্সের মাঝে জায়গা বানিয়ে নিয়েছিলেন কুয়োল। আগুয়ান এমিকে দেখে তার হাত গলে শট জালে জড়াতে চাইলেও এমির ক্ষিপ্রতায় সেটা আর হয়ে ওঠেনি। মেসির প্রথম নক-আউট গোলের দিনে আর্জেন্টিনা তাই হেসেছে জয়ের হাসি।