লিভাকোভিচ বীরত্বে জাপানের স্বপ্ন যাত্রার সমাপ্তি, শেষ আটে ক্রোয়েশিয়া
জাপান ১(১):১(৩) ক্রোয়েশিয়া
এর আগে শেষ ষোল পেরুনো হয়নি জাপানের, সেখানে প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া গতবারই খেলেছে ফাইনাল। স্পেন ও জার্মানিকে হারিয়ে আসা জাপানের সামনে কাজটা তাই ছিল বড্ড কঠিন। কঠিন সেই কাজটা সারতে উদ্বুদ্ধ জাপান অসাধ্য প্রায় সাধন করেই ফেলেছিল। তবে স্বপ্নের সেই যাত্রা থেমে গেল টাইব্রেকারের হৃদয়ভঙ্গে। দাইজেন মায়েদার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জাপান যখন স্বপ্ন দেখছিল বিশেষ কিছুর তখন ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ফিরেছিল ইভান পেরিসিচের গোলে। ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে গড়ালে ক্রোয়েশিয়া গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ নিজেকে ইতিহাসের পাতায় ওমর করে রাখলেন ক্রোয়েশিয়ার জয়ের নায়ক হিসেবে। আর সেই সাথে ইতি টানলেন ব্লু সামুরাইদের স্বপ্নের মত এক বিশ্বকাপের।
ম্যাচের শুরু থেকেই চলছিল আক্রমণ, পালটা আক্রমণের খেলা। দুই দলই বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের অর্ধে ঢুকে পড়লেও আক্রমণগুলো ফল্প্রসু হচ্ছিল না। ম্যাচের সবচেয়ে বড় সুযোগটা প্রথম পেয়েছিলেন পেরিসিচই। তবে জাপানী গোলকিপার শুইচি গন্ডার গা বরাবর মেরে সেবার গোলের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। উলটো খেলা গুছিয়ে নিয়ে দারুণ প্রতি আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসা জাপান গোলের দেখা পেয়ে যায় প্রথমারধের শেষ দিকে এসে। কর্নার থেকে দোয়ানের দিকে চোট পাস খেলা হলে ডি বক্সে ক্রস পাতেন তিনি। সেই ক্রস মায়া ইয়োশিদার মাথায় ছুঁয়ে মায়েদার পায়ে পড়লে ঠান্ডা মাথায় জালে বড় জড়ান তিনি।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই নড়েচড়ে বসে ক্রোয়েশিয়া। ৫৫ মিনিটের মাথায় দেয়ান লভরেনের ক্রস বক্সে সুযোগ খুঁজতে থাকা পেরিসিচকে খুঁজে নিলে দারুণ এক হেডে সমতা ফেরান তিনি। পরের মিনিটেই এন্দোর দূরপাল্লার এক শট দক্ষতার সাথে ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। সেখান থেকেই যেন আভাস দিতে থাকেন আজ কী করতে চলেছেন তিনি। ম্যাচের ৬৬ মিনিটের মাথায় অবশ্য দারুণ কিছু পাসের পর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ক্রামারিচের পাস বক্সের মাঝে থাকা বুদিমিরকে ফাঁকায় খুঁজে নিলেও বাইরে মারেন সেবার তিনি। ম্যাচের বাকি সময় দুই দলই সুযোগের খোঁজে হাপিত্যেশ করে মরলেও সেই অর্থে তেমন সুযোগ আসেনি। অতিরিক্ত সময়েও লিভাকোভিচ বেশ কয়েকটি সুযোগ প্রতিহত করলেও পরিষ্কার সুযোগ পায়নি কোনও দলই।
সেখান থেকে টাইব্রেকারে খেলা গড়ালে জাপানের প্রথম দুটী পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। আত্মবিশ্বাসের সাথে ডানে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনামিনো ও মিতোমার নেওয়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে ক্রোয়েশিয়ার আশার পালে লাগান জোর হাওয়া। তবে নিজেদের তৃতীয় পেনাল্টি পোস্টে লাগিয়ে বসেন লিভায়া। সমতা ফেরানোর সুযোগ পেলে প্রায় একই ভঙ্গিতে পেনাল্টি নেন অধিনায়ক ইয়োশিদা, আর সেই একই আত্মবিশ্বাসের সাথে তাকে রুখে দেন তিনি। পরের পেনাল্টিটা জালে জড়িয়েই তাই পাসালিচ উঠে যান তাদের নায়ক লিভাকোভিচের কোলে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের মাত্র ৩য় গোলকিপার হিসেবে এই লিভাকোভিচ ৩টি পেনাল্টি রুখে দিয়েছেন, চাট্টিখানি কথা নাকি! নায়ককে নিয়েই যে তাই উদযাপনটা মানানসই হবে।