• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    যে কারণে পেলের রেকর্ড ভাঙলেও নেইমারকে স্বীকৃতি দেবে না ব্রাজিল

    যে কারণে পেলের রেকর্ড ভাঙলেও নেইমারকে স্বীকৃতি দেবে না ব্রাজিল    

    দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোল করা পেলের এক গোলের ব্যবধানে চলে এসেছেন নেইমার। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

    ফিফার রেকর্ড অনুযায়ী তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেলে ব্রাজিলের হয়ে ৭৭টি গোল করেছেন, যেখানে এখন নেইমারের গোলসংখ্যা ৭৬। কিন্তু পেলে ও ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের (সিবিএফ) হিসাবটা এমন নয়। 

    ব্রাজিলের হয়ে পেলের গোলসংখ্যা কত? 

    সাধারণত আন্তর্জাতিকভাবে ফুটবলারদের খেলোয়াড়ি পরিসংখ্যান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ফিফা ও রেক স্পোর্ট সকার রেকর্ড স্ট্যাটিসটিক্স ফাউন্ডেশন (আরএসএসএসএফ)। কিন্তু পেলের গোলসংখ্যা নিয়ে এই দুই সংস্থার সঙ্গে কখনোই একমত হয়নি সিবিএফ ও স্বয়ং পেলে। 

    পেলের দাবি তিনি ক্যারিয়ারে মোট ১২৮৩টি গোল করেছেন। যে কারণে গত মার্চে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আসলেই তার গোলের রেকর্ড ভেঙেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

    পেলের (এবং সিবিএফের) দাবি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি ১১৩ ম্যাচে মোট গোল করেছেন ৯৫টি। ফিফার পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেটি ৯১ ম্যাচে ৭৭ গোল। 

    তাহলে এই বাড়তি ম্যাচ ও গোলগুলো কোথা থেকে এলো? 

    আসলে ফিফা ও সিবিএফ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংজ্ঞাতেই একমত না। ফিফা শুধুমাত্র দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার ম্যাচকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে ধরে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে হওয়া ব্রাজিল এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রীতি ম্যাচটি। যেখানে গোল করেছিলেন ওয়েইন রুনি এবং ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। এই গোল দুটি যোগ হয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক গোলের তালিকায়। 

    সমস্যা হচ্ছে, এখন যেমন শুধু দুই রাষ্ট্রের মধ্যেই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ হয়, আগে তেমনটা ছিল না। একসময় জাতীয় দলের সঙ্গে ক্লাবগুলোরও প্রীতি ম্যাচ খেলার চলন ছিল। ৬০ ও ৭০-এর দশকে ইন্টার মিলান ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো অনেক ক্লাবের সঙ্গেই ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল। এসব ম্যাচ থেকেই এসেছে পেলের বাড়তি গোলগুলো। 

    ব্রাজিলের জার্সিতে বিভিন্ন ক্লাবের বিপক্ষে মোট ২২টি ম্যাচ খেলেছেন পেলে, করেছেন ১৮ গোল। যে কারণে ৭৭ থেকে তার গোলসংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৯৫-এ। 

    মজার বিষয় হচ্ছে, ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারেরও কিন্তু এরকম কিছু বাড়তি গোল রয়েছে। ২০১২ ও ২০১৬ অলিম্পিকে ব্রাজিলের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন নেইমার, করেছেন আট গোল। জিতেছেন একটি স্বর্ণপদকও। 

    তবে, অলিম্পিকের ফুটবল দল মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের নিয়েই গড়া হয়। প্রতি দলে মাত্র তিনজন বেশি বয়স্ক খেলোয়াড় রাখার নিয়ম রয়েছে। যে কারণে ফিফা অলিম্পিককে অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট হিসেবেই ধরে থাকে। 

    পেলের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবেন নেইমার? 

    ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে ব্রাজিল। সম্ভাবনা আছে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টারেই পেলের রেকর্ড স্পর্শ করে ফেলবেন নেইমার। এই ম্যাচে না হলেও ব্রাজিল টুর্নামেন্টে আরও এগোলে সেমিফাইনাল বা ফাইনালেও এই রেকর্ড ভাঙতে পারেন তিনি।  

    কিন্তু বড় উপলক্ষ হলেও পেলে ও সিবিএফের প্রতি সম্মান রেখে হয়তো বিশেষ কোনো উদযাপন করবেন না নেইমার। বিশেষ করে পেলের সাম্প্রতিক অসুস্থতার খবরের পর ‘রেকর্ড ভাঙার উদযাপন’-এর সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে।   

    তবে পেলে ও সিবিএফের হিসাব যদি মেনে নেন নেইমার, তাহলে এই রেকর্ড ভাঙতে আরও ২০টি গোল করতে হবে তাকে। এই বছরের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে বছরে ৫.৮৩ গড়ে মোট ৭০টি গোল করেছেন এই ৩০ বছর বয়সী। এই হারে পেলের রেকর্ড ভাঙতে আরও তিন থেকে চার বছর লাগবে নেইমারের।