• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    কিলিয়ান এমবাপে: যেসব কারণে এখনও ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি

    কিলিয়ান এমবাপে: যেসব কারণে এখনও ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি    

    ব্যালন ডি অর জয়ী ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বমঞ্চ কাঁপানোর কথা। অথচ দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটানো করিম বেনজেমা যখন বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ইনজুরির কবলে পড়ে ছিটকে গেলেন তখন ফ্রান্সকে নিয়েও যেন গেল গেল একটা রব উঠে গেল চারদিকে। সেই সাথে ইতিহাসও তাদের অনুকূলে ছিল না। এর আগের তিন বিশ্বকাপেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা বাদ গিয়েছিল গ্রুপ পর্বেই। বেনজেমার পাশাপাশি কান্তে, পগবা, প্রথম ম্যাচেই লুকাস হার্নান্দেজকে হারানোর পর শঙ্কাটা যেন ক্রমশ বেড়ে উঠছিল। তবে যেই দলে একজন কিলিয়ান এমবাপে আছেন তাদের ছোট করে দেখা কী সাজে! টিনেজার এমবাপেই যেখানে বিশ্বমঞ্চে নিজের নামটা সেরাদের কাতারে সিলগালা করে গিয়েছিলেন, সেখানে ২৪ বছর বয়সী পরিণত এমবাপে যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারেন সেটা বোধহয় ঠাহর করতে পারেনি অনেকেই। সে যাই হোক, এমবাপে বিশ্বকে আরও একবার সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন নিজ আঙ্গিকে। সেই সাথে এই বার্তাটা তিনি পরিষ্কার ভাবেই দিয়েছেন যে, ফ্রান্সের শিরোমণি এখনও তিনি। দলে ব্যালন ডি'অর জয়ী থাকলেও কেন ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা এমবাপে সেটা বুঝতেই স্মৃতিটা ঝালিয়ে নেওয়া যাক আরেকবার।


    বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়

    ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী দুটো দলবদলের দুটোই এসেছে পিএসজির তরফ থেকে। মোনাকো থেকে প্রথমে ধারে পিএসজিতে পাড়ি জমানো কিলিয়ান এমবাপেকে পড়ে চড়া মূল্যে দলে ভিড়িয়েছিল ফ্রান্সের এই ক্লাবটি। প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ইউরোর সেই দলবদলের হিসেব দলবদলের ইতিহাসে এখনও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে দলবদল। টিনেজার হিসেবে তাকে নিয়ে যেই উন্মাদনা ছিল তার পুরোটাই প্রতিফলিত হয়েছে তার মাঠের খেলাতেও। পিএসজির হয়ে ২৩৭ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১৯০ গোল করা এমবাপেকে দলে ভেড়ানোর ফল যে পিএসজি সুদে-আসলেই পেয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ এখনও না পাওয়া হলেও ঘরোয়া সকল শিরোপা জেতা এমবাপে তাই এখন থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবলারদের একজন তো বটেই, সেই সাথে ভবিষ্যতেও রাজ করার মতই ইঙ্গিত দিয়ে চলেছেন প্রতিদিন।

    জয়ই যার নেশা

    এমবাপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন আছে জয়ের নেশা। মাঠে তার জয়ের ক্ষুধা, গোলমুখে শিকারির মত পদচারণা - সবটাই যেন এমবাপের নামের সাথে সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪ বছর বয়সেই তার শিরোপার সারির দিকে একবার চোখ বুলিয়েই দেখুন, বিষয়টা আপনার কাছেও পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমবাপের দোরগোড়ায় এখনই শোভা পাচ্ছে ৫টি লিগ ওয়ান শিরোপা, ৩টি কুপে দে ফ্রান্স শিরোপা, ২টি ফ্রেঞ্চ লিগ কাপ শিরোপা; সেই সাথে আছে ২০২০-২১ ইউয়েফা নেশন্স লিগ ও মহিমান্বিত সেই ২০১৮ বিশ্বকাপ। সেই সাথে ব্যাক্তিগত অর্জনের খাতায় আছে ‘গোল্ডেন বয়” পুরষ্কার, ২টি করে বর্ষসেরা ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড়ের খেতাব ও লিগ ওয়ান বর্ষসেরার খেতাব, আর ৩টি বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের খেতাব। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের খেতাব জেতা এমবাপে লিগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছে ৪ মৌসুমে।


    বিশ্বমঞ্চ যেন তার বাড়ির আঙিনা

    ফ্রান্সে একটা কথা বর্তমানে বেশ প্রচলিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এই উক্তিতে সয়লাব এখন - “১৯৯৮ সালটা ফ্রান্স ফুটবলের জন্য দারুণ এক বছর ছিল। সেই বছরেই যে পৃথিবীতে এসেছিলে কিলিয়ান এমবাপে।” যেই ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপের প্রথম স্বাদ পেয়েছিল ফ্রান্স, ২০১৮ সালে এসে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের পথে অগ্রণী ভুমিকা তো পালন করেছিলেন সেই ১৯ বছর বয়সী এমবাপেই। সেবার ৪ গোল তো দিয়েছিলেনই, সেই সাথে পেলের পর প্রথম টিনেজার হিসেবে গোল দিয়েছিলেন ফাইনালেও। যেখানে চার বছর আগে বিশ্ব মঞ্চের একটা অধ্যায় শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন এবারের অধ্যায় শুরু করেছেন। ডেনমার্কের বিপক্ষে একাই জোড়া গোল করে জেতালেন, সেই সাথে এখন পর্যন্ত ৫ গোল দিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। জাস্ট ফন্তেইনের পর ৯ গোল নিয়ে সেই সাথে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ২য় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গিয়েছেন এই ২৪ বছর বয়সেই!

    মাঠের বাইরেও যার প্রভাব অনস্বীকার্য

    ফোর্বসের তালিকায় মেসি-রোনালদোর রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে অক্টোবর মাসে এমবাপে হয়েছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় করা ফুটবলার। সেই সাথে ইন্সটাগ্রাম, টুইটার ও ফেসবুকেও তার অনুসারীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের ওপরে। তার এই খ্যাতির ফলাফল হিসেবে সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে কোনও ফিফা গেমের প্রচ্ছদে ঠাই মিলেছিল তার। ফিফা ২১ থেকে যে শুরু এরপর গেমটার প্রচ্ছদে তার দেখা মিলছে প্রতি বছরেই। সেই সাথে মাঠের বাইরে তার দানশীলতার উদাহরণও মিলে। ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পর তার বেতন থেকে ৩৮০,০০০ ইউরো তিনি অনুদান হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

    রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা যেন তার হাতের মোয়া
     

    ১৬ বছর ৩৪৭ দিন বয়সে মোনাকোর হয়ে মাঠে নেমেই এমবাপে গড়েছিলেন ইতিহাস। ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এখনও মোনাকোর ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে এমবাপের নাম। তিন মাস পরেই ক্লাবটির সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ডটাও নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। দুটো রেকর্ডই আগে কার অধীনে ছিল জানেন? থিয়েরি অঁরি! অঁরির সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড কয়েকদিন আগেই ভেঙেছেন অলিভিয়ের জিরু। ফ্রান্স ফুটবলের নতুন বরপুত্র হয়ত সেই রেকর্ডেও নজর রাখবেন আগামী কয়েক বছর।