কেন নেইমার আগে পেনাল্টি নিলেন না?
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর পর দর্শকদের যেমন দুরুদুরু বুক কাঁপছিল, তেমনই চিন্তায় ছিলেন নেইমারও। প্রথম পেনাল্টিটা যখন রদ্রিগো মিস করল তারপর থেকেই ক্যামেরা বারবার খুঁজে নিচ্ছিল হাটু গেঁড়ে প্রার্থনারত নেইমারকে। এরপর ব্রাজিলের হয়ে পেনাল্টি নিলেন কাসেমিরো, পেদ্রো। তখনও এলেন না নেইমার। ৪র্থ পেনাল্টিটা নিতে এসে মার্কিনিয়োস যখন গোলবারে লাগালেন তখন হাঁটু ভেঙ্গে অঝোরে কাঁদা ছাড়া নেইমারের আর যে কোনও উপায়ই থাকল না। ব্রাজিল ছিটকে পড়ল, নেইমারের সুযোগটাও তাই আর এল না। রদ্রিগো, পেদ্রোদের মত আনকোরা খেলোয়াড়েরা এলেন পেনাল্টি নিতে; কিন্তু নেইমার কেন না - এই প্রশ্নটাই হয়ত জেগেছিল অনেকের মনেই।
উত্তরটা পাওয়া যাবে ব্রাজিল দলে শুটআউটে নেইমারের ভূমিকা থেকে। টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ালে সাধারণত একটি ধারা বজায় রাখা হয়। প্রথমে দুই অধিনায়ককে একত্রিত করে টস করা হয় কোন গোলবারে শুটআউট পরিচালিত হবে সেটা নির্ধারণের জন্য। এরপর আরেকটা টস হয় কোন দল প্রথম শট নেবে সেটা নির্ধারণের জন্য। এর পরপরই রেফারিকে জানিয়ে দিতে হয় কোন দলের হয়ে কে পেনাল্টি নিবেন এবং কার পরে কে নিবেন।
বিপত্তিটা হয়েছে এখানেই। রদ্রিগো প্রথম পেনাল্টিটা মিস করার পর তাই হুট করেই নেইমারের পেনাল্টি নিয়ে চাপ কমানোর সুযোগটাও ছিল না যেহেতু দলগুলোকে আগেই নাম জানিয়ে দিতে হয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে চিলির বিপক্ষে শেষ পেনাল্টিটা নিয়েছিলেন নেইমার। তিনি গোল দেওয়ার পর গঞ্জালো হারা বারে লাগালে ব্রাজিল সেবার হাসে জয়ের হাসি। ২০১৬ রিও অলিম্পিকের ফাইনালে শেষ পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্রাজিলকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন তিনি। নেইমার পেনাল্টিতে দলের সেরা, নিয়মিত ম্যাচে পেনাল্টিটাও তিনি নেন। তবে শুটআউটে তার জায়গা পাঁচ নম্বরে বরাদ্দ থাকার জন্য কাল অশ্রুসিক্ত নয়নে অসহায়ের মত চেয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় ছিল না তার।
তবে এখানে প্রশ্নটা তাই উঠতে পারে কোচ তিতেকে নিয়ে। ম্যাচের বদলির মত এখানেও কি তিনি গোঁয়ার্তুমি করলেন? এই সিদ্ধান্তটাই কি দিনশেষে তার চাকরি খোয়াল? দল যেখানে তরুণ খেলোয়াড়ে ঠাসা সেখানে নেইমারকে কেন তিনি একে বা তিনে রাখলেন না, যেমনটা ক্রোয়েশিয়া তিনে রেখেছিল মদ্রিচকে? কেন রদ্রিগোর মত তরুণ খেলোয়াড়কে তিনি ঠেলে দিলেন প্রথম ঢাল হিসেবে? দলে যেখানে থিয়াগো সিলভার মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছেন, যিনি শুটআউটে কখনও মিস করেননি তাকে শীর্ষ পাঁচে তিনি রাখেনই নাই; সেখানে রদ্রিগো তার জীবনে মোটে চতুর্থবারের মত পেনাল্টি নিতে এসেছিল। পেদ্রো ক্যারিয়ারে মোটে ৮ বার পেনাল্টি নিয়েছেন, তবে সেখানেও ৩ বার মিসের রেকর্ড আছে তার। মার্কিনিয়োস জীবনে প্রথমবারের মতই গতকাল পেনাল্টি বারে লাগিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখার তেমন একটা উপায় নেই। তবে সিলভাকে শীর্ষ পাঁচেই না রাখা, নেইমারকে পাঁচে রাখার সিদ্ধান্তের জন্য অনেক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক তিতেকে ‘কাপুরুষ’ বলতেও পিছপা হননি। আর এই সিদ্ধান্তগুলোই হয়ত কাল হল তিতের জন্যও।