• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    কেইনের পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ, জিরুর বুড়ো হাড়ের ভেল্কিতে সেমিতে ফ্রান্স

    কেইনের পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ, জিরুর বুড়ো হাড়ের ভেল্কিতে সেমিতে ফ্রান্স    

    ইংল্যান্ড ১:২ ফ্রান্স


    বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সেরা দল হিসেবে আগেই এই দলকে তকমা দিয়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। সেখানে প্রতিপক্ষ ফ্রান্স টুর্নামেন্টের আগেই হারিয়েছেন বেনজেমা, পগবা, কান্তে, এনকুঙ্কুদের মত তারকাদের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অনেকের বাজি তাই ছিল ইংল্যান্ডের পক্ষেই। তবে বেনজেমার সর্বনাশে যে অলিভিয়ের জিরুর পৌষ মাস শুরু হয়ে গিয়েছে তার প্রমাণ পেল ইংল্যান্ডও। অরেলিয়েন চুয়ামেনির দুর্দান্ত গোলে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পর পেনাল্টি থেকে সমতা ফিরিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তার পরেই জিরুর হেডে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পর আবারও পেনাল্টি পেয়েছিলেন কেইন। বারের ওপর দিয়ে সজোরে উড়িয়ে মারলেন কেইন, কপাল পুড়ল ইংলিশদের। আর যেই ফ্রান্সের শেষ অনেকেই গ্রুপ পর্বেই দেখে ফেলেছিলেন সেই ফ্রান্স টানা দ্বিতীয়বার পৌঁছে গেল সেমি-ফাইনালে।

    আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে শুরু থেকেই দুর্দান্ত এক ম্যাচের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তারই মাঝে হুট করেই ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন চুয়ামেনি। বাঁ প্রান্ত থেকে বল দেওয়া নেওয়া করে এমবাপে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বাঁ প্রান্তে থাকা ডেম্বেলের উদ্দেশ্যে পাস বাড়ালেও ভেতরে ঢোকার জায়গা পাচ্ছিল না ফ্রান্স। সেখান থেকে পাশেই থাকা গ্রিজমান বল বুঝে নিয়ে খানিকটা পিছে থাকা চুয়ামেনির উদ্দেশ্যে তিনি পাস বাড়ান ফাঁকা জায়গা তৈরি করার জন্য। তবে চুয়ামেনি যেন আগেই গোলের দেখা পেয়ে গিয়েছিলেন। আলত ছোঁয়ায় বল নিয়েই দূরপাল্লার এক শটে পরাস্ত করলেন পিকফোর্ডকে। তবে সেই গোলের পর ইংল্যান্ড নিজেদের আরও গুছিয়ে নেয়। ২৬ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথায় কেইনকে উপামেকানো ফেলে দিলে ইংল্যান্ড পেনাল্টির জোর দাবী তুললেও সেই আবেদন কানে তোলেননি রেফারি।

    প্রথমার্ধ পিছিয়ে থেকে শেষ করায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যায় ইংল্যান্ড। ৫২ মিনিটের মাথায় বক্সের ডান প্রান্তে বুকায়ো সাকা কাটিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে গোলদাতা চুয়ামেনি পা বাড়িয়ে তাকে ফেলে দেন। পেনাল্টি থেকে ইয়রিসকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান কেইন। ৫৩তম আন্তর্জাতিক গোল করে সেই সাথে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গলদাতার তালিকায় ওয়েইন রুনির পাশে বসেন তিনি। তার পরিক্রমায় ৭০ মিনিটে প্রায় এগিয়েই গিয়েছিল ইংল্যান্ড। হেন্ডারসনের বাঁকানো ফ্রি-কিক থেকে লাফিয়ে উঠে মাথায় বল লাগান ম্যাগুয়ার। সেবার গোলবার চুমু খেয়ে বল বাইরে চলে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ফ্রান্স।

    সেখান থেকেই যেন ম্যাচের মোড় নিজেদের দিকে ঘোরানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ফ্রান্স। ৭৭ মিনিটের মাথায় ডেম্বেলের দারুণ এক ক্রসে শরীর বাড়িয়ে পা লাগান জিরু, কিন্তু ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেবার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান পিকফোর্ড। তবে গোলের সুবাস যেন পেতে শুরু করেন জিরু। ঠিক পরের মিনিটেই বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান গ্রিজমান। গ্রিজমানের বাঁ পায়ের ক্রস জিরুর মাথা খুঁজে নিলে এবার ঠিকই বল জালে জড়িয়ে উন্মত্ত উদযাপনে মেতে ওঠেন জিরু।

    হারার আগেই হার মানতে নারাজ ইংল্যান্ড সাথে সাথেই চেপে ধরে ফ্রেঞ্চদের। ফলস্বরূপ ৮২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় তারা। বক্সের মাঝে ঢুকে যাওয়া মেসন মাউন্টের উদ্দেশ্যে লম্বা বল বাড়ানো হলে তার সাথে থাকা থিও হার্নান্দেজের যেন মতিভ্রম হয়। বল আসার আগেই তাকে ধাক্কা মেরে এই লেফট ব্যাক ফেলে দিলে ভিএআরে সিদ্ধান্ত আসে পেনাল্টির। কেইনের সামনে তখন হাতছানি রুনিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার, সেই সাথে দলের সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখার। ক্লাব সতীর্থকে একবার ফাঁকি দিয়েছেন, পেনাল্টিতে দারুণ রেকর্ডধারী কেইন আরও একবার সেটাই করবেন বলেই আশা দেখছিলেন ইংলিশরা। সবাইকে হতবাক করে সেই পেনাল্টি আকাশে ভাসিয়ে দেন কেইন। এরপর চেষ্টা করে যাওয়া ইংল্যান্ড শেষ সুযোগ পেয়েছিল একেবারে শেষ মিনিটে। গতকালের ডাচদের বই থেকে কোনও পাতা না পড়ে সরাসরি ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন রাশফোর্ড। কয়েক ইঞ্চি ব্যবধানে গোলপোস্ট ফাঁকি দিয়ে বল বাইরে চলে গেলে ইংল্যান্ডকে তাই সপ্তমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাড়ির ফ্লাইট ধরতে হয়। আর সপ্তমবারের মত সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।