এমবাপে-গ্রিজমানের জাদুতে মরক্কোর স্বপ্নভঙ্গ
ফ্রান্স ২:০ মরক্কো
ক্যারিয়ারের শুরুতেই তাকে পেলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। সেই মাফিক একটি নিখুঁত ক্যারিয়ারের দিকেই এগিয়ে চলেছেন কিলিয়ান এমবাপে। ১৯ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জেতা এই বিস্ময়বালক চার বছর পর তার দলকে নিয়ে গেলেন আরেক বিশ্বকাপ ফাইনালে। তার সম্মোহনী ফুটবলের জোরেই বুধবারের সেমিফাইনালে ২-০ গোলের জয় পেয়েছে ফ্রান্স। ইনজুরি-সমস্যায় বিপর্যস্ত মরক্কো পাল্লা দিয়ে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সার্বিক মানের কাছে।
ম্যাচে কোনো গোল বা অ্যাসিস্ট না পেলেও দুই দলের মাঝে ব্যবধান গড়েছেন এমবাপেই। প্রতিবার তার গতি ও ক্ষিপ্রতার কাছে হিমশিম খেয়েছে মরক্কোর রক্ষণ। সেই রক্ষণকে সম্মোহিত করেই যেন এমবাপে দলকে এনে দিয়েছেন দুটো গোল।
চতুর্থ মিনিটে বক্সের ডানপাশ থেকে আসা গ্রিজমানের পাসে শট নেন এমবাপে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিন ডিফেন্ডারের একজন সেই শট ব্লক করলেও তা আবার এমবাপের পায়েই ফিরে আসে। আবার শট নেওয়ার জন্য তৈরি হতে হতে এমবাপেকে ঘিরে ধরে মরক্কোর ছয়জন ফুটবলার। তারপরও বাঁ পায়ে শট নেন এমবাপে, যেই শট ডিফেন্ডারের গায়ে ডিফ্লেক্টেড হয়ে গিয়ে পড়ে অপর পোস্টে ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা থিও হার্নান্দেজের পায়ে। এমবাপেয় সম্মোহিত হয়ে থাকা মরক্কো রক্ষণ থিওর শট আর ফেরাতে সক্ষম হয়নি।
ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটিও প্রায় একইভাবে আসে। তবে এবার নিজের আসল রূপ দেখান এমবাপে। ডিবক্সের বাইরে প্রথমে ক্লাব সতীর্থ আশরাফ হাকিমিকে বেলে ড্যান্সারদের মতো মুভে খাবি খাইয়ে থুরামকে পাস দেন তিনি। বক্সের আসার পর এমবাপেকে আবার পাস ফেরত দেন থুরাম। এবার ডাম-বাম করে একে একে তিনজন মরক্কো ডিফেন্ডারকে কাটান ফ্রান্সের নাম্বার টেন, তারপর নেন শট। সেই শট আবার ডিফ্লেক্টেড হয়ে গিয়ে পড়ে অপর পোস্টে ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা কোলো মুয়ানির পায়ে। এই বদলি স্ট্রাইকারের ৭৯ মিনিটের গোলেই জয় নিশ্চিত করে ফ্রান্স।
তবে পুরো ম্যাচ মোটেও একপেশে ছিল না। ইনজুরিতে দলের শীর্ষ দুই সেন্টারব্যাককে হারানো মরক্কো রক্ষণে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও ম্যাচজুড়ে ভালোই আক্রমণ চালিয়েছে তারা। প্রথমার্ধের শেষদিকে সমতা ফেরানোর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল আফ্রিকান দলটি। ৪৫ মিনিটে এক কর্নার থেকে বাইসাইকেল কিক নিয়ে পোস্ট কাঁপিয়ে দেন মরক্কো ডিফেন্ডার জাওয়াদ আল ইয়ামিক। পোস্টে লেগে সেই বল আবার অল্পের জন্য এন-নেসেরির নাগালের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কো আরেকটু দুর্বল হয়ে যায়। মিডফিল্ডার উনাহিকে দেখা যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলতে। ক্লান্ত হয়ে যাওয়া বুফল ও এন-নেসেরিকে বসিয়ে দেওয়া হলে কমে যায় তাদের আক্রমণের ধারও। তবুও শেষ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যায় মরক্কো। যোগ করা সময়ে হামদাল্লাহর শট গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন কুন্ডে। গোল না পেয়ে সেমিফাইনাল শেষ করলেও গর্ব করার মতো একটি পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে আফ্রিকান দলটি। বুফলদের পুরো বিশ্বকাপযাত্রাই গর্ব করার মতো।