কার হাতে উঠবে গোল্ডেন বল?
তৃতীয় তারকার দেখায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। বিশ্বকাপ কার হাতে উঠবে সেটার পাশাপাশি বিশ্বকাপের সায়াহ্নে এসে ব্যাক্তিগত পুরস্কারগুলো কারা পাবে সেটা নিয়েও আছে জল্পনা কল্পনা। গত দুই বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জয়ী লিওনেল মেসি ও লুকা মড্রিচ এবারও আছেন টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে। কার হাতে এবার উঠতে পারে এই স্বর্ণ গোলক সেটাই ভেবে দেখা যাক।
লিওনেল মেসি
২০১৪ সালে সোনায় মোড়ানো বিশ্বকাপটার পাশ দিয়ে শূন্য দৃষ্টি দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল, এবারও সেরকম কিছু হবে নাকি সেটা সময়ই বলবে। তবে ২০১৪ সালে যেমন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পেয়েছিলেন এবারও আছেন সেই দৌড়ে, বরং বলা যায় আছেন সেবারের চেয়েও শক্তভাবে। তর্কসাপেক্ষে এটাই তো মেসির সেরা বিশ্বকাপ। নকআউটে আগে কখনই গোল না পাওয়ার আক্ষেপ মেসি এবার কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে নিয়েছেন, ৩ গোল দিয়েছেন ৩ ম্যাচেই। টুর্নামেন্টে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোল (৫) দেওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সুযোগ (১৫) তৈরি করেছেন, যৌথভাবে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট (৩) করেছেন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ড্রিবল (১৯) সম্পন্ন করেছেন। পরিসংখ্যানে তো সেরাই, সেই সাথে মাঠে যেভাবে প্রতিপক্ষের সেরা ডিফেন্ডারদের টেনে নিয়ে হুলিয়ান আলভারেজকে সুযোগ করে দিচ্ছেন সেটার প্রমাণ তো আর কোনও সংখ্যায় দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বকাপ তার হাতে উঠুক বা না উঠুক, মেসির হাতেই সম্ভবত এবারও উঠতে যাচ্ছে গোল্ডেন বল।
আঁতোয়াঁ গ্রিজমান
পগবার সৃষ্টিশীলতা বলুন বা কান্তের পরিশ্রম - সবকিছুর উত্তর এবার যেন গ্রিজমান মাথায় নিয়ে এসেছেন, সেই সাথে তো আছেই স্ট্রাইকার হিসেবে বহু সময় খেলার কারণে স্ট্রাইকারদের বোঝার নিজস্ব ক্ষমতা। এই বিশ্বকাপে গ্রিজমান যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন, যেন ক্রুইফদের টোটাল ফুটবলের পূজারী রুপেই আবির্ভূত হয়েছেন। আক্রমণ, মাঝমাঠ, রক্ষণ সবখানেই গ্রিজমানের পদচারণা। মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচে যে ম্যাচসেরা হয়েছেন সেটার জন্য রক্ষণে তার ক্রমাগত সহায়তার প্রশংসা করতেই হয়। সেই সাথে টুর্নামেন্টে যৌথ সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট (৩) তার ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরির রেকর্ডও (১৪) তার অধীনে। গ্রিজমানকে গোল্ডেন বল তুলে দেওয়া হলে তাই অবাক হওয়ার সুযোগ নেই।
কিলিয়ান এমবাপে
গত বিশ্বকাপের লিকলিকে তরুণ এবার পরিণত, ক্ষিপ্র, দুর্ধর্ষ এক খেলোয়াড়। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এমবাপে খেলতে যাচ্ছেন নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফাইনাল। আর সেখানে ফ্রান্সকে নিয়ে গিয়েছেন টুর্নামেন্টে যৌথ সর্বোচ্চ ৫ গোল দিয়ে। নিজের মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই ৯ গোল নিয়ে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এমবাপেকে আপনি হয়তো সবসময় মাঠে খুঁজে পাবেন না। সেটাকে দুর্বলতা ভেবে যেই কোনও রক্ষণভাগ একটু স্তিমিত হয়ে যায় তখনই ক্ষিপ্র চিতার মত ঝাঁপিয়ে পড়েন এমবাপে। গতকাল ফ্রান্সের দ্বিতীয় গোলটার কথাই ধরুন, স্রোতের বিপরীতে বক্সের ওই সামান্য জায়গার মাঝেই দুই তিন ধাপে বিধ্বস্ত করে ফেললেন মরক্কোর রক্ষণ। কোলো মুয়ানির নামে গোলটা লেখা হলেও পুরো গোলের ধারাটার কোণায় কোণায় যেন লেখা এমবাপের নাম। টুর্নামেন্টে ৮ট সুযোগ তৈরির পাশাপাশি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৩ বার ড্রিবল সম্পন্ন করেছেন তিনি। রক্ষণের ত্রাস এমবাপে তার পিএসজি সতীর্থ মেসিকে ছাপিয়ে উঁচিয়ে ধরতেও পারেন গোল্ডেন বল।
সোফিয়ান আমরাবাত
মরক্কোর মিডফিল্ডের প্রাণ ছিলেন আমরাবাত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে হয়তো এমন একটা বাণী প্রচার হতে দেখেছেন, “পৃথিবীর ৭০ ভাগ জুড়ে আছে পানি আর বাকি ৩০ ভাগ জুড়ে আছে আমরাবাত।” এই টুর্নামেন্টে আমরাবাতের খেলা দেখে সেটার সাথে খুব বেশি দ্বিমত পোষণের সুযোগ কী আছে? যেখানেই প্রতিপক্ষ সেখানেই যেন আমরাবাত। পরিসংখ্যান দেখে আপনি তাই হয়ত মরক্কোর সাফল্যের পেছনে ভুমিকাটা ঠিক ঠাহর করতে পারবেন না। গত বিশ্বকাপের কান্তের দেখাও অনেকেই পেয়েছেন তার মাঝে। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তাই গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবীদারও বটে।
লুকা মড্রিচ
গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জয়ী লুকা মড্রিচ এবারও দেখালেন বুড়ো হাড়ের ভেল্কি। গতবারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় না থাকা সত্ত্বেও মিডফিল্ডের দখল নিয়ে আরও একবার ক্রোয়েশিয়াকে দেখিয়েছেন সেমির পথ। মাঠের এই মাথা থেকে ওই মাথায় যেভাবে দাপিয়ে বেড়ালেন ৩৭ বছর বয়সী মড্রিচ তাতে তার বয়স না জানলে বোঝার কোনও উপায় ছিল না। ব্রাজিলের বিপক্ষে তার খেলার মাঝে অনেকেই ২০০৬ সালে জিদানের সেই কালজয়ী পারফর্ম্যান্সের দেখাও পেয়েছেন অনেকে। সেই সাথে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ইন্টারসেপশনের রেকর্ডটাও তার। মড্রিচের হাতে আরও একবার গোল্ডেন বল উঠলেও অবাক হওয়ার অবকাশ নেই।