মরক্কো-রূপকথার শেষটায় বিষাদের কালি মাখিয়ে ক্রোয়েশিয়ার তৃতীয় স্থানের সান্ত্বনা
ক্রোয়েশিয়া ২:১ মরক্কো
বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল একে অপরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে, ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করল একে অপরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। মরক্কোর সামনে ইতিহাস গড়ার সুযোগ থাকলেও আধুনিক ফুটবলের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন লুকা মড্রিচ নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে ব্রোঞ্জ পদকের স্বাদ পেলেন। জসকো গভার্দিওলের গোলে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আশরাফ দারির গোলে সমতা ফেরায় মরক্কো। মিস্লাভ অরসিচের প্রথমার্ধের শেষের দিকের গোলে পরে গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা এবার শেষ করেছে তৃতীয় হয়ে।
শুরু থেকেই শেয়ানে শেয়ানে লড়তে থাকা দুই দলের মধ্যে গোলের খাতা প্রথমে খোলে ক্রোয়েশিয়া, সেটাও দারুণ দলীয় পরিকল্পনা থেকে। মদ্রিচের ভাসিয়ে দেওয়া ফ্রি-কিক বক্সের মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকা পেরিসিচকে খুঁজে নিলে সেখানে একজন ডিফেন্ডারকে ছিটকে মাঝে ক্রস বাড়ান তিনি। সেই ক্রসে দক্ষতার সাথে মাথা লাগিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে ৭ মিনিটেই এগিয়ে দেন এবারের আসরের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার গভার্দিওল। গোলের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই ক্রোয়েশিয়াকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনে মরক্কো। জিয়েশের ফ্রি-কিক দেয়ালে থাকা লভরো মায়েরের গায়ে লেগে উঠে যাওয়ার পর বক্সের মাঝে ওঁত পেতে থাকা দারির পায়ে এসে পড়লে সুযোগ লুফে নিতে ভুল করেননি এই ডিফেন্ডার। হুট করে পেয়ে যাওয়া বলে মাথা লাগিয়ে ৯ মিনিটেই দারি ম্যাচে সমতা ফেরান।
গোলের পর থেকে মরক্কো বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও বক্সে সুবিধা করতে পারছিল না। ফাইনাল থার্ডে বরং যেই কয়েকবার ক্রোয়েশিয়া ঢুকেছিল প্রতিবারই বোনোকে চিন্তায় ফেলেছিল। সেরকমই এক আক্রমণে ৪২ মিনিটের মাথায় লিভায়া বক্সের মাথায় বল পেয়ে বক্সের বাম কোণে ফাঁকায় থাকা অরসিচের উদ্দেশ্যে পাস বাড়ান। বোনোকে খানিকটা বের হয়ে থাকতে দেখে পাস থেকে সরাসরি নেন শট। বাঁকানো সেই শটটা অসামান্য কৌশলে খানিকটা তুলেও দিয়েছিলেন অরসিচ। আঙুল ছোঁয়ানো ছাড়া তাই কিছুই করতে পারেনি বোনো। অরসিচের দুর্দান্ত সেই গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে ক্রোয়েশিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও একই জায়গায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন অরসিচ। এবার বাঁকানো শটে দুরের পোস্ট খোঁজার পরিবর্তে কাছের পোস্টে জোরালো শট নিয়েছিলেন। এল ইয়ামিকের গায়ে সামান্য ছোঁয়া লাগায় বল গোলবারের কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে যচলে গেলে সেবার বেঁচে যায় মরক্কো।
নিজেদের খেলা গুছিয়ে নিয়ে এরপর বক্সের মধ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে মরক্কো। ৭৪ মিনিটের মাথায় তো একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ার আগে পেটকোভিচের ধাক্কায় হাকিমি পড়ে যাওয়াতে পেনাল্টির জন্য জোরালো আবেদন করেছিল মরক্কো। সেবার সাড়া না পেলেও পরের মিনিটেই গোল পেয়ে যাচ্ছিল তারা। বক্সে ওঁত পেতে থাকা এন-নেসিরির উদ্দেশ্যে বল বাড়ানো হলে লাফিয়ে উঠেও বল সরাতে পারেননি গভার্দিওল। বল পেয়ে লিভাকোভিচকে ফাঁকি দিতে সময় নিয়ে জোরালো ফিনিশ করতে চেয়েছিলেন এন-নেসিরি। সেটা পড়ে ফেলে শরীর প্রশস্ত করে ক্ষিপ্রতার সাথে সেই চেষ্টা প্রতিহত করেন লিভাকোভিচ।
৮৭ মিনিটের মাথায় অবশ্য স্রোতের বিপরীতে মরক্কোর কফিনে পেরেক ঠুকে দিতে পারত ক্রোয়েশিয়া। বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া কোভাচিচ পাস দেওয়ার ভাণ করা আমরাবাতকে ফাঁকি দিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তবে বাঁ পায়ে নেওয়া শটটা চলে যায় বাইরে। সেখান থেকে মরক্কোর আশা বেঁচে থাকলে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল তারা, সেটাও ম্যাচের একদম শেষ মিনিটে। আতিয়াত-আলাহ’র বাঁকানো ক্রসে অসাধারণ এক লাফে মাথা লাগিয়েছিলেন এন-নেসিরি। তবে প্রশস্ত সেই লাফে বলে মাথা ছোঁয়ালেও বারের ওপর দিয়ে বল জালের ওপরে আটকে গেলে কয়েক ইঞ্চির আক্ষেপে পুড়তে হয় মরক্কোকে। গতবারের রানার্স-আপরা ১৯৯৮ সালের পর এবারও তাই ফিরল তৃতীয় হয়ে।