কিক অফের আগে: আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান নাকি ফ্রান্সের চার বছরে দ্বিতীয়?
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স
বিশ্বকাপ ফাইনাল
লুসাইল স্টেডিয়াম, কাতার
রাত ৯.০০টা
সোনালি শিরোপাটিতে সর্বশেষ যেই আর্জেন্টিনাইন হাত রেখেছিলেন তার নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা, ১৯৮৬ সালে। গত ৩৬ বছরে কয়েক প্রজন্মের ফুটবলার চেষ্টা করে গেলেও শিরোপার দুঃখ আর কাটেনি আলবিসেলেস্তেদের। আরেক ফুটবল-ইশ্বর, লিওনেল মেসির হাত ধরে আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে আর্জেন্টিনা, সুযোগ পাচ্ছে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার।
প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের দৃশ্যপট আলাদা। গত সাত আসরে চারবার ফাইনাল খেলা ফরাসি দলের বর্তমান প্রজন্মই টানা দুইবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, গত ৬০ বছরে যা করতে পারেনি কোনো দেশ। রাশিয়ায় বিশ্বকাপজয়ী দলের ডিএনএ নিয়েই- কোচ দিদিয়ের দেশম, অধিনায়ক হুগো লরিস ও ফ্রন্টম্যান কিলিয়ান এমবাপেয় চড়ে আজ এক ফুটবলীয় আধিপত্যের গল্প লিখতে নামবে ফ্রান্স।
দুই দলই এর আগে দুটি করে বিশ্বকাপ জিতেছে। আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে, ফ্রান্স ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে। আজকের ম্যাচে জয়ী দল তাই সুযোগ পাচ্ছে জার্সিতে তৃতীয় তারকা যোগ করার।
পূর্বের দেখায়
১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে কোনো দক্ষিণ আমেরিকান দলের কাছে হারেনি ফ্রান্স। তবে ৪৪ বছর আগে সর্বশেষ ম্যাচটি তারা হেরেছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই। এখন সবমিলিয়ে ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল, যার অর্ধেকই জিতেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স তিন ম্যাচ জিতেছে এবং বাকি তিন ম্যাচ ড্র হয়েছে।
স্কালোনি বনাম দেশম
বিক্ষুব্ধ এক সময়ে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন লিওনেল স্কালোনি। তিন বছরে দল গুছিয়ে এনে গতবছর দেশকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা। আজ আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ার পালা এই ৪৪ বছর বয়সীর। কাতারে প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে হারার পর দলে বেশ কিছু ট্যাকটিকাল ও ট্যাকনিকাল পরিবর্তন এনেছেন স্কালোনি, সুযোগ দিয়েছেন এনজো ফার্নান্দেজ ও হুলিয়ান আলভারেজের মতো তরুণদের। টানা দুই ম্যাচে কখনো একই একাদশ না খেলানো স্কালোনি নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচে বদলেছেন ফরমেশনও। আজও তার কাছ থেকে উইনিং ট্যাকটিসই প্রত্যাশা করবে সমর্থকরা।
ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জিতেছে দিদিয়ের দেশম। আজ আরও বেশ কিছু মাইলফলক সৃষ্টির সুযোগ পাওয়া দেশমের জন্য কিন্তু এবারের যাত্রাটি ঠিক সহজ ছিল না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তিনি ইনজুরিতে হারিয়েছে পল পগবা, এনগোলো কান্তে, ক্রিশ্চোফার উঙ্কুঙ্কু, করিম বেনজেমার মতো তারকাদের। এসব দুর্ভাগ্য ও ‘চ্যাম্পিয়ন্স কার্স’-এর চিন্তা নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেও পুরো আসরে কখনো নার্ভাস হতে দেখা যায়নি ফ্রান্সকে, যার মূল কৃতিত্ব দেশমেরই। ট্যাকটিক্সে ঠিক পণ্ডিত না হলেও ড্রেসিংরুমে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ওস্তাদ দেশম, যার দরকার ছিল ফ্রান্সের। ইনজুরির জন্য যেই খেলোয়াড় সংকট দেখা গেছে সেটিও দুর্দান্তভাবে সমাধান করেছেন দেশম। রাইটব্যাক পজিশনে জুলস কুন্ডে, মিডফিল্ডে গ্রিজমান ও বেনজেমার স্থান নেওয়া জিরু, সবাই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এই বিশ্বকাপে।
দলের খবর
বিশ্বকাপের আগে ইনজুরি সমস্যায় জর্জরিত হওয়া ফ্রান্স বিশ্বকাপে এসেও পড়েছে নতুন ঝামেলায়। সেমিফাইনালের আগে ড্রেসিংরুমে ছড়িয়ে যাওয়া এক ভাইরাসে অসুস্থ হয়ে যান বেশ কিছু ফুটবলার। যে কারণে সেমিতে খেলতে পারেননি মূল দলের দায়োত উপামেকানো ও আদ্রিয়ান রাবিও। এরপর অসুস্থ হন রাফায়েল ভারান, ইব্রাহিমা কোনাতে ও কিংসলি কোমান। তবে ফ্রান্স ও দেশমের জন্য সুসংবাদ, গতকাল আবার ট্রেনিংয়ে ফিরেছেন এই পাঁচ ফুটবলারই।
নিষেধাজ্ঞার জন্য সেমিফাইনাল খেলতে না পারা মার্কাস আকুনাকে আজকে দলে ফিরে পাবে আর্জেন্টিনা। আর বর্ষীয়ান উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়াকে গত দুই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার পর আজকে শুরুর একাদশে জায়গা দিতে পারেন স্কালোনি। আর্জেন্টিনার ‘লাকি চার্ম’ হিসেবে খ্যাত দি মারিয়ার গোলেই গতবছর কোপা আমেরিকা জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
সম্ভাব্য একাদশ:
আর্জেন্টিনা (৪-৩-৩): মার্টিনেজ; মলিনা, রোমেরো, ওটামেন্ডি, আকুনা; ডি পল, ফার্নান্দেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার; ডি মারিয়া, মেসি, আলভারেজ।
ফ্রান্স (৪-২-৩-১): লরিস, কুন্ডে, ভারান, কোনাতে, হার্নান্দেজ; সুয়ামেনি, রাবিও; ডেম্বেলে, গ্রিজমান, এমবাপ্পে; জিরুড।
(ফিচার ফটো: বিবিসি।)