মেসি না এমবাপে: মুকুট কার পাওনা?
বিশ্বকাপ ফাইনাল, বিশ্বকাপ শিরোপা, গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট, ব্যালন ডি’অর; সম্ভাব্য সবকিছুকে সামনে নিয়ে আজ মুখোমুখি হবেন লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপে। শুধু বৈষয়িক পুরস্কারই না, এই ম্যাচে জয়ী ব্যক্তি তার নাম লেখাবেন ফুটবল রূপকথাতেও। আজ ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর একটির সাক্ষী হতে যাচ্ছে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম। আজ বিশ্বকাপ জিতে নিজের নিখুঁত ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণার সুযোগ পাবেন মেসি। আর তার উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্যতা রাখা ফরাসি তরুণ পাবেন সর্বকালের সেরাকে হারিয়ে এমবাপে-যুগের গোড়াপত্তন করার।
মুখরোচক এই ফাইনালকে সামনে রেখে আমরা প্রশ্ন করতেই পারি, শিরোপার আসল দাবিদার কে?
সেক্ষেত্রে দুজনের ক্যারিয়ারের তুলনা করাটা বোকামি। শুধু এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সই যদি আমরা দেখি, দুজনই ছিলেন (এবং আছেন) ফাইনালে খেলা দুই দলের মূল তারকা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারাই গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান। কাতার বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে চলুন দেখা যাক দুই নাম্বার টেন, মেসি ও এমবাপের মধ্যে কে এগিয়ে আছেন।
মেসি বনাম এমবাপে: গোল
গোলের ক্ষেত্রে মেসি ও এমবাপে দুজনই ছয় ম্যাচে খেলে পাঁচটি করে গোল করেছেন এই বিশ্বকাপে। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে তারাই সবচেয়ে বড় প্রার্থী।
মেসি এমবাপের চেয়ে বেশি মিনিট খেলেছেন। ফাইনাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন এই ৩৫ বছর বয়সী। যে কারণে তার প্রত্যাশিত গোলও (xG) এমবাপের চেয়ে বেশি।
মেসির পাঁচ গোলের মধ্যে অবশ্য তিনটিই এসেছে পেনাল্টি থেকে। অপরদিকে এমবাপের কোনো গোলই সেটপিস থেকে আসেনি।
এমবাপে তার পাঁচ গোলের তিনটি করেছেন গ্রুপ পর্বে (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ও ডেনমার্কের বিপক্ষে দুটি)। শেষ ষোলোতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন বাকি দুই দল। ইংল্যান্ড ও মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে গোলের দেখা পাননি এই ২৩ বছর বয়সী।
অপরদিকে নকআউট পর্বের সব ম্যাচেই গোল পেয়েছেন মেসি। অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তার প্রতিটি গোলই আর্জেন্টিনার জন্য ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ।
মেসি বনাম এমবাপে: অ্যাসিস্ট
অ্যাসিস্টের দৌড়ে স্বাভাবিকভাবেই মেসি এগিয়ে। টুর্নামেন্টে তিন অ্যাসিস্ট করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতাও বনে গেছেন এই আর্জেন্টিনাই।
মেসির তিনটি অ্যাসিস্ট এসেছে মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। সেমিতে জস্কো ভার্দিওলকে খাবি খাইয়ে মেসির নেওয়া রান ও অ্যাসিস্ট টুর্নামেন্টের শীর্ষ মুহূর্তগুলোর একটি।
অপরদিকে এমবাপে টুর্নামেন্টে মোট দুটি অ্যাসিস্ট পেয়েছেন, যেগুলো এসেছে অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে। দুবারই অলিভিয়ের জিরুকে দিয়ে গোল করিয়েছেন তিনি।
তবে মাঠে দুজনের পজিশনের কথা চিন্তা করলে এমবাপের পারফরম্যান্সও কম না। মেসি শুধু আর্জেন্টিনার প্রধান প্লেমেকারই না, দলের সব সেটপিসও নিয়ে থাকেন তিনি। সেক্ষেত্রে এমবাপের চেয়ে কিছু বাড়তি সুবিধা তো অবশ্যই পাচ্ছেন আর্জেন্টাইন নাম্বার টেন।
মেসি বনাম এমবাপে: সার্বিক পরিসংখ্যান (কাতার ২০২২)
খেলোয়াড় |
মেসি |
এমবাপে |
ম্যাচ |
৬ |
৬ |
মিনিট |
৫৭০ |
৪৭৭ |
গোল |
৫ |
৫ |
অ্যাসিস্ট |
৩ |
২ |
প্রত্যাশিত গোল (xG) |
৪.৭৫ |
৩.৭৬ |
গোলমুখে শট |
১৪ |
১১ |
সুযোগ তৈরি |
১৮ |
১১ |
সফল ড্রিবল |
১৫ |
২১ |
সফল পাস |
১২১ |
৮৩ |
মেসি বনাম এমবাপে: রায়
সার্বিকভাবে বলতে, মেসিই কিছুটা এগিয়ে আছে এমবাপের চেয়ে। দুজন সমান গোল পেলেও মেসির অ্যাসিস্ট বেশি। প্রত্যাশিত গোল, শট, পাস ও সুযোগ তৈরিতেও মেসি এগিয়ে আছেন। আর্জেন্টিনার ফাইনালে উঠায় তার অধিনায়কত্বও বড় ভূমিকা পালন করেছে।
অপরদিকে এমবাপে শেষ ষোলোর পর আর গোল বা অ্যাসিস্টের দেখা পাননি। তবে পরিসংখ্যান বাদ দিলে, নকআউটের প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন ফরাসি নাম্বার টেন। প্রতি ম্যাচেই তাকে কড়াভাবে মার্ক করায় সামনে ফাঁকা জায়গা পেয়েছেন জিরু-গ্রিজমানরা। মরক্কোর বিপক্ষে ফ্রান্স দুটি গোল আদায় করেছে এই ছুতোতেই।
তবে পূর্বের পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতি যেমনই হোক, আজকে জয়ী হওয়া ব্যক্তির নামই শেষ পর্যন্ত মনে রাখবে ইতিহাস। কাতার বিশ্বকাপ আজীবন তার বলেই গণ্য হবে।