সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইনাল: হ্যাট্রটিক এমবাপের, কিন্তু শিরোপা মেসির
ফুটবলের কাছেই যেন একটি বিশ্বকাপ পাওয়া ছিল লিওনেল মেসির। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতাটুকুও পূরণ করলেন এই ফুটবল-ঈশ্বর, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ম্যাচে জিতলেন সোনালি ট্রফিটি। কিন্তু সেই জয় এতো সহজে আসেনি। দুই দুইবার এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন মেসির সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী কিলিয়ান এমবাপে। কিন্তু দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকের পরও টাইব্রেকারে গিয়ে হৃদয় ভাঙে এমবাপের, ত্রাতা এমি মার্টিনেজে ভর করে শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনাই।
ইতিহাসের নাটকীয়তম ফুটবল ম্যাচগুলোর একটির সাক্ষী হয়েছে কাতারের লুইসাইল স্টেডিয়ামে। কিন্তু দিনের শুরুতে এই নাটকীয়তার ছিটেফোঁটাও ছিল না লুসাইলে। আগে থেকেই স্টেডিয়ামের সিংহভাগ আসন দখল করে রাখা আর্জেন্টিনা সমর্থকরা প্রথম মিনিট থেকেই মেসিদের এনে দেন ঘরের মাঠে খেলার আমেজ। এবং সেই আমেজে শুরুতেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে লিওনেল স্কালোনির দল।
দুই ম্যাচ পর শুরুর একাদশে আনহেল দি মারিয়া, হুলিয়ান আলভারেজ ও মেসি মিলে ফ্রান্স রক্ষণকে ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন। আর্জেন্টাইন ভক্তরা বিশ্বাস করে দি মারিয়া তাদের ‘লাকি চার্ম’। ফাইনালে দি মারিয়া-ভাগ্যের প্রয়োজন হবে, সেটি চিন্তা করেই হয়তো সেমিতে তাকে খেলাননি স্কালোনি।
ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রথম ব্রেকথ্রু আসে দি মারিয়ার কাছ থেকেই। ম্যাচের ২১ মিনিটে লেফট উইং দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ডি মারিয়া। তাকে আটকাতে গিয়ে পিছন থেকে ফাউল করে বসেন উসমান ডেম্বেলে। সাথে সাথে পেনাল্টি স্পটের দিকে আঙুল দেখিয়ে বাঁশি বাজান রেফারি। লরিসকে বাম দিকে পাঠিয়ে ডান শট নেন মেসি। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে লুসাইল।
৩৬ মিনিটে টুর্নামেন্টে নিজেদের সবচেয়ে নান্দনিক গোলটি করে আর্জেন্টিনা। ডিফেন্স থেকে আসা বল দুই ফরাসি খেলোয়াড়ের মাঝখান দিয়ে ফ্লিক করে রাইট উইংয়ে বল পাঠান মেসি। সেই বল এক টাচেই সামনে পাঠান আলভারেজ। সামনে দৌড় দেওয়া ম্যাক অ্যালিস্টার বল নিয়ে বক্সের কাছে এসে মাটি কামড়ানো ক্রস করেন অপর প্রান্তে। সেই বলে পা ছুঁইয়ে লরিসকে পরাস্ত করেন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আর্জেন্টিনাই রাজত্ব করে মাঠে। জয়ের সুবাস পেতে শুরু করা আর্জেন্টিনা আক্রমণ ধরে রাখার বদলে রক্ষণাত্মক হওয়া শুরু করে। ৬৪তম মিনিটেই ডি মারিয়াকে তুলে নেন স্কালোনি, বদলি হিসেবে নামান ফুলব্যাক মার্কাস আকুনাকে।
এদিকে ম্যাচে নিজেদের ফুটবল খেললেই পারছিল না ফ্রান্স। প্রথম ৬৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার পেনাল্টি বক্সে একবারও বল স্পর্শ করার সুযোগ পায়নি গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। এমবাপে প্রথম বল নিয়ে পেনাল্টি বক্সে প্রবেশ করেন ৭০ মিনিটে। কিন্তু বক্সের গোঁড়া থেকে নেওয়া তার শট বারের বেশ উপর দিয়ে চলে যায়।
শেষ পর্যন্ত ওটামেন্ডির এক ভুলে এবং এমবাপে দেড় মিনিটের ঝড়ে আচমকা ম্যাচে ফিরে আসে ফ্রান্স। ৭৯ মিনিটে ওটামেন্ডির ফাউলে বক্সে পড়ে যান কোলো মুয়ানি, পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে। এই গোলের ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে আবার আক্রমণে উঠে ফ্রান্স। এবার বক্সের বাইরে থেকে থুরামের পাঠানো লব পাসে বুলেটগতির শট নিয়ে মার্টিনেজকে পরাস্ত করেন এমবাপে। পুরো ম্যাচে খেললে না পেরেও হুট করে সমতায় ফিরে আসে ফ্রান্স। এবং নির্ধারিত ৯০ মিনিটের বাকি সময়েও তারা বেশ কিছু বড় সুযোগ তৈরি করে।
২-২ গোলে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে আবার নিজেদের পরিচিত রূপে ফিরে আসে আর্জেন্টিনা। ১০৮ মিনিটে গুছানো এক আক্রমণ থেকে বক্সে বল পান লাউতারো মার্টিনেজ। তার শট লরিস ফিরিয়ে দিলেও রিবাউন্ডে গোল করেন মেসি। আবার এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
মেসির বিশ্বজয়ের উদযাপন থামিয়ে দিয়ে ১১৮ মিনিটে আবার পেনাল্টি বাঁশি বাজান রেফারি। হ্যান্ডবল থেকে হওয়া এই পেনাল্টিও কাজে লাগান এমবাপে। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
এমবাপে ও মেসি যথারীতি নিজ নিজ দলের হয়ে প্রথম পেনাল্টি জালে জড়ান। কিন্তু কিংসলি কোমান ও অরেলিয়েন সুয়ামেনি পেনাল্টি মিস করায় শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হাসে মেসিরাই।